আন্তর্জাতিক ডেস্ক :জাতিগত নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চীলয় রাখাইন রাজ্যে এবার রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছেব লে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা জানিয়েছে, স্যাটেলাইটে সম্প্রতি সেইসব ভস্মিভূত গ্রামের ছবি ধরা পড়েছে। ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিসযক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন স্যাটেলাইট ইমেজ রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞের নিদর্শনই কেবল প্রকাশ করেনি বরং এটাও নিশ্চিত করেছে যে আমরা আগে যা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ’।
এইচআরডব্লিউ-এর তথ্য অনুযায়ী, যে তিনটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো হলো-পায়ুং পিত, কিয়েত ইযৈা পিন এবং ওয়া পেইক।
রবিবার মিয়ানমারে সেনা-রোহিঙ্গা সংঘর্ষ হয়
এদিকে মিয়ানমারে সেনা-রোহিঙ্গা সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। মাসব্যাপী সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় রবিবার সাকলে পূর্বাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে ওই সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নারীদের ধর্ষণসহ নানান ধারার শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলছে।
রবিবারের ঘটনায় ৩৬ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ওই অঞ্চলে মিডিয়া আর ত্রাণ সরবরাহাকারী বাহিনীকে ঢুকতে দিচ্ছে না তারা।
২০১২ সালে ওই রাজ্যের জাতিগত দাঙ্গায় শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হওয়ার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানে চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুই দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে।
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার। সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা মনে করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরও এই বাস্তবতার বদল ঘটেনি। বরং নির্বাচনের আগে-পরে ফাঁস হয়েছে কোদ সু চির মুসলিমবিদ্বেষের নানা দিক। নির্বাচনে তিনি মুসলমানদের প্রার্থী করেননি। ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয়টিও অস্বীকার করেন সুচি।