g আমি রাজনীতির শিকার : চম্পা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ১৯শে আগস্ট, ২০১৭ ইং ৪ঠা ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আমি রাজনীতির শিকার : চম্পা

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬

---

বিনোদন ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রের প্রিয়মুখ চম্পা। প্রয়াত পরিচালক শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘তিনকন্যা’ সিনেমা দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অভিনেত্রীর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এরপর ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘লাল দরজা’, ‘টার্গেট’, ‘লটারি’, ‘বিরহ ব্যথা’, ‘নিষ্পাপ’, ‘সহযাত্রী’, ‘ভেজা চোখ’, ‘নীতিবান’, ‘কাশেম মালার প্রেম’, ‘প্রেম দিওয়ানা’,‘মনের মানুষ’সহ অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন।

অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এ যাবৎ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাটকেও অভিনয় করেছেন চম্পা। তবে এখন তাকে সেভাবে আর চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা যায় না। সম্প্রতি চম্পার সঙ্গে কথা হয় তার ক্যামেরার সামনের জীবন নিয়ে।

প্রশ্ন : ঈদ কেমন কাটালেন?
চম্পা : (হেসে) ঈদ খুব আনন্দেই কেটেছে।

প্রশ্ন : ছোটবেলার ঈদ ও এখনকার ঈদ সর্ম্পকে জানত চাই।
চম্পা : ছোটবেলার ঈদ অনেক আনন্দের ছিল। ঈদে অনেক মজা করতাম। এখন আর সে মজাটা নেই। এখন দায়িত্ব পালন করছি। বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এখনো প্রত্যেক বছর আমরা তিন বোন একসঙ্গে থাকি। বড় বোনকে আমরা সালাম করি। ঈদের দিন ঈদি নেয়ার জন্য একটা ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াই। ববিতা আপা ঈদি যেমন দেন, তেমনি তিনি ঈদি নেনও।

প্রশ্ন : বর্তমানে আপনাকে চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা যাচ্ছে না কেন?
চম্পা : আমার মনের মতো কোনো সিনেমার প্রস্তাব পাচ্ছি না বলেই চলচ্চিত্রে কাজ করা হচ্ছে না। সম্প্রতি এমন কোনো প্রস্তাব পাইনি যে কাজটি করতে আমার ভালো লাগবে। এলোমেলো কাজ করার চেয়ে না করাই ভালো। তারপরও কিছুটা কমপ্রোমাইজ করে কাজ করতে চাইলেও মন সায় দেয় না।

প্রশ্ন : বর্তমানে কী কাজ করছেন?
চম্পা : আমি যেহেতু ছোটপর্দা থেকে এসেছি তাই টেলিভিশনের কাজের প্রতি আমার আলাদা একটা দুর্বলতা রয়েছে। তবে ঢালাওভাবে নাটকের কাজ করছি না। যে কাজগুলো আমার পছন্দ হয় সে কাজগুলো আমি করি। এবারের ঈদে আমার অভিনীত ছয় পর্বের নাটক প্রচার হয়েছে। মাহফুজ আহমেদের প্রযোজনায় এ নাটকটি এনটিভিতে দেখেছে দর্শক। তাছাড়া দেশের বাইরে থাকার কারণে কাজ কম করেছি।
এছাড়া জসিমউদ্দিনের ‘বোবা কাহিনী’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় অভিনয় করেছি। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রশ্ন : চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থাটা কেমন যাচ্ছে বলে মনে করছেন?
চম্পা : বর্তমানে চলচ্চিত্র থমকে দাঁড়িয়েছে। একটা সময় চলচ্চিত্রের অবস্থা খারাপ ছিল। এর পর ডিজিটালের ছোঁয়ায় কিছুটা এগিয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে- একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে আছে। ‘গেরিলা’র মতো সিনেমা হাতে গোনা কমই হয়। এরপরও মনে হচ্ছে- খুব একটা ভালো কাজ হচ্ছে না। এক জায়গাতেই থেমে আছে। সিনেমার গল্পগুলো খুব নাজুক। আমাদের দেশের হল সংখ্যা খুবই কম। এ হলগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। সেগুলোর মানগত উন্নয়ন করতে হবে।

প্রশ্ন : হলে গিয়ে এখনো সিনেমা দেখেন?
চম্পা : এখন আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না। বাসায় বসে মাঝে মাঝে সিনেমা দেখি।

প্রশ্ন : যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। এ সিনেমাগুলো আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য কতটা লাভজনক বলে মনে করছেন?
চম্পা : যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ হওয়া উচিৎ। এতে দুই দেশের শিল্পীরা একে অপরকে জানতে পারছেন। নতুন কিছু শিখতে পারছেন। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতাটা প্রকাশ্যে না থাকলেও মনে মনে থাকে। আমি যখন যৌথ প্রযোজনার কাজ করেছি তখন আমার মনে মনে একটা বিষয় সব সময় কাজ করতো- আমি ওদের থেকে বেটার করব। আমার দেশের যেন সুনাম হয়। দুই দেশের মধ্যে বিনিময়টাকে আমি ভালোই মনে করছি। কিন্তু একটা কথা রয়ে যায় সেটা হলো- যৌথ প্রযোজনা মানে সমান সমান হতে হবে। তিন ভাগ আর এক ভাগ হলে চলবে না।

প্রশ্ন : বর্তমানে নতুন শিল্পীদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
চম্পা : এখন সুন্দর সুন্দর ছেলেমেয়েরা কাজ করছে। যাদের হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় বলিউডের কোনো শিল্পী। ওদের লুকিং সুন্দর। ওরা ভালো করছে। তবে অভিনয়ের প্রতি আরো খেয়াল রাখতে হবে।

প্রশ্ন : নতুনদের মধ্যে কার অভিনয় আপনার পছন্দ ?
চম্পা : নতুনদের সিনেমা খুব একটা দেখা হয় না। তবে ওদের কিছু গান দেখেছি। নতুনদের মধ্যে মাহিয়া মাহি, পরীমনি, নুসরাত ফারিয়া এদের কাজ ভালো লাগছে। আরো বেশি সিরিয়াসনেস থাকতে হবে। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে সে ঝরে পড়বে। ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু ভীষণ সেলফিস জায়গা। মানুষকে মাথায় তুলতে সময় লাগে না, আবার পায়ে ফেলতেও সময় লাগে না।

প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত আপনি আপনার অভিনয়ের সেরাটি কি দিতে পেরেছেন?
চম্পা : একজন শিল্পীর পরিতৃপ্তি বলতে যে ব্যাপার ওইটা কিন্তু কখনো আসে না। শিল্পীর অভিনয়ের ক্ষুধা সারাজীবনই থেকে যায়। সে যতই ভালো অভিনয় করুক না কেন। সে সব সময়ই চায় আরো ভালো করতে। আমি এখন পর্যন্ত সেরা অভিনয় করতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে না। যে কাজটি করে আমি বলতে পারব যে, আমার আর অভিনয় না করলেও চলবে, আমি তৃপ্ত। ভালো লেগেছে বলা যায়। পদ্মা নদীর মাঝি, অন্য জীবন, শাস্তি, এগুলো আমার ভালো লেগেছে। আমি সব সময় মনে মনে ভাবি এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে চাই যা দেখে দর্শক মনে সাড়া জাগবে।

প্রশ্ন : দুই বোনের মধ্যে কার অভিনয় আপনার কাছে ভালো লাগে?
চম্পা : দুই বোনের অভিনয়ই আমার কাছে ভালো লাগে। বড় আপাকে খাঁটি বাঙালি মনে হয়। তার সহজ সরল অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করে। তার পুরোনো দিনের সিনেমা আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। কী তার চেহারা, কী তার চোখের ভাষা-অদ্ভুত একটা বিষয়। বড় আপার সংলাপ না বলে শুধু চেয়ে থাকলেই চলবে। আর মেজো আপাকে ভালো লাগে তিনি মর্ডান চরিত্রগুলো করতেন। তার খুব পার্সোনালিটি থাকে। তার চেহারার মধ্যে একটা রিচ লুক থাকে।

প্রশ্ন : আপনার নিজের কোনো দুর্বলতা সর্ম্পকে জানতে চাই। যা দর্শক জানে না।
চম্পা : আমি মনে করি, আমার আরো ভালো অভিনয় করা উচিৎ। আমি সব সময় নিজের একশ একটা খুঁত ধরি। আমি সবসময় অভিনয় নিয়ে ভাবি। কিন্তু সব সময় তা হয়ে উঠে না, ভাবি এক রকম ক্যামেরার সামনে গেলে অন্য রকম হয়ে যায়।

প্রশ্ন : নিজের বিশেষ গুণ সর্ম্পকে যদি বলেন।
চম্পা : আমার কাছে নিজেকে পানির মতো মনে হয়। পানি যেমন যে পাত্রে রাখবে সে পাত্রের আকার ধারণ করে। আমাকে যে চরিত্রে দেন না কেন আমাকে মানাবে। একেবারে গরিব, অথবা মর্ডান। আমি খাপ খাইয়ে নিতে পারি।

প্রশ্ন : যে সব নায়কদের সঙ্গে জুটি বেধে অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে কাকে আপনার বেশি ভালো লেগেছে?
চম্পা : কাঞ্চন ভাই এক ধরনের আর মান্না ছিল আর এক ধরনের। এদের দুজনের সঙ্গে অভিনয় করে ভালো লেগেছে। এবং দর্শকও ভালোভাবে নিয়েছেন। দুজনের সঙ্গেই আমাকে মানাতো।

প্রশ্ন : মান্নার জনপ্রিয়তার পেছনে আপনার ভূমিকা কতটুকু বলে মনে করেন?
চম্পা : মান্নাকে আমি সহযোগিতা করেছি, এটা না বললে ভুল হয়ে যাবে। তবে একজন শিল্পীর নিজের গুণ না থাকলে অন্য কেউ কিছু করে দিতে পারে না। কোয়ালিটি তো অবশ্যই মান্নার ভেতর ছিল। যার কারণে তিনি মান্না হয়েছেন। প্রথমে নতুন একজন ছেলেকে ব্রেক দেয়ার দুঃসাহস আমি দেখিয়েছি। আমি নিজের দিকে তাকাইনি। ক্ষতি হলেও হতে পারতো।

প্রশ্ন : শেষের দিকে আপনাদের একসঙ্গে দেখা যায়নি কেন?
চম্পা : আমি রাজনীতির শিকার হয়েছি। কেন হয়েছি সে প্রশ্নের উত্তর এখন আর খুঁজে বেড়াই না।

রাইজিংবিডি

এ জাতীয় আরও খবর