সুরসম্রাটের সব স্মৃতি নিশ্চিহ্ন!
---
দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দারা গর্বে বুক ফুলিয়ে বলেন, ‘সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র দেশের লোক আমরা’। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর গর্বের এই মানুষটির নামে প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীতাঙ্গনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে তার সব স্মৃতি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ, মাইহার ঘরানার রূপকার সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র নামে ১৯৫৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কুমারশীল মোড়ে ৫৬ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে একদল ছাত্রসহ কতিপয় যুবক প্রতিষ্ঠানটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা পুরো প্রতিষ্ঠানটিতে ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে সঙ্গীতাঙ্গনের মিউজিয়ামসহ প্রতিটি কক্ষের জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেয়।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাতে দফায় দফায় মাদ্রাসা ছাত্র-ব্যবসায়ী- ছাত্রলীগ-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মাসুদুর রহমান মাসুদ (২০) নামে এক ছাত্র নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার দিনভর তাণ্ডব চালায় মাদ্রাসাছাত্ররা।
সঙ্গীতাঙ্গনের সম্পাদক আব্দুল মান্নান সরকার বাংলানিউজকে বলেন, হামলাকারীরা মিউজিয়ামে রক্ষিত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ব্যবহৃত সরোদ, বেহালা, সন্তুর, এস্রাজ, সৌদি আরবের বাদশাহ প্রদত্ত জায়নামাজ, ভারতের মাইহার রাজ্যের রাজা প্রদত্ত গালিচাসহ সব বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয়। সুরসম্রাটের আত্মীয় ও শিষ্যদের কাছে নিজ হাতে লেখা অগনিত চিঠি, ছবি ও বড় পোট্রেট পুড়িয়ে দেয় তারা। তারা অফিস রুম, ক্লাসরুম, মিউজিয়ামসহ প্রতিটি কক্ষেই আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে টয়লেটের বেসিন পর্যন্ত পুড়ে গেছে।
মঙ্গলবারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সঙ্গীতাঙ্গনের পিয়ন প্রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার। বলেন, তিনি অফিস কক্ষে বসে টিভি দেখছিলেন। হামলাকারীরা গেট দিয়ে ঢোকামাত্র প্রাণভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যান তিনি।
প্রবীন্দ্র জানান, মিউজিয়াম রুমে ওস্তাদের ব্যবহৃত পুরনো দু’টি সেতারা, দু’টি সরোদসহ একতারা, দোতারা, সারিন্দা, বেহালা, ২০/২২টি হারমোনিয়াম, ১৪ জোড়া তবলা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেক দুর্লভ ছবি, অফিস রুমের চেয়ার, ক্লাসরুমের আসবাবপত্র, তিনটি শোকেস, সরোদ মঞ্চের মালামাল, অফিস কক্ষে রাখা আলাউদ্দিন খা’র বাড়ির দলিলপত্র, হিসাব খাতা, গানের বই পুড়িয়ে ফেলা হয়। সরোদ মঞ্চের সামনে রাখা তিনশ’ প্লাস্টিকের চেয়ার ও ২২টি বৈদ্যুতিক পাখা ভেঙে ফেলা হয়।
সঙ্গীতাঙ্গনের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম জানান, এখন দালানটি ছাড়া আর কিছুই বাকি রইল না। দালানটিতেও লেগে আছে আগুনে পোড়ার দাগ।
সঙ্গীতাঙ্গনের প্রশিক্ষক পাপিয়া চৌধুরী বলেন, এমন ঘটনা অকল্পনীয়। বুক ফেটে কান্না আসছে। আমরা একেবারে ভেঙে পড়লাম। আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো কি না সেই চিন্তা এখন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এতোসব দুর্লভ জিনিসপত্র কি আবার সংগ্রহ করা সম্ভব?পাপিয়া চৌধুরী বলেন, এই সঙ্গীতাঙ্গনে সপ্তাহে দু’দিন সঙ্গীতের ক্লাস হতো। এছাড়া বাচ্চাদের নৃত্য ও চিত্রাঙ্কন শেখানো হতো।
এদিকে বুধবার দুপুরে সঙ্গীতাঙ্গনে পরিদর্শনে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের কাছে স্থানীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার। তিনি জেলা প্রশাসককে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলে অন্তত দু’একটি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে পারতেন।
সঙ্গীতাঙ্গনের সম্পাদক আব্দুল মান্নান সরকার বলেন, বর্বর এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।