নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন
---
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার ফাঁসির দাবিতে সিদ্ধিরগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের ধনু হাজী রোড এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে নূর হোসেনের ফাঁসি চাই, সাত খুনের সুষ্ঠু বিচার চাই ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টার ও নানা ধরনের প্লাকার্ড শোভা পায়।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও নাসিক ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটি, নজরুলের ছোট ভাই আবদুুস সালাম, শ্যালক শফিকুল ইসলাম, নজরুলের সহযোগী নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের, নজরুলের সহযোগী যুবলীগ নেতা নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপনসহ স্থানীয় লোকজন। তবে নিহত চন্দন সরকার, তার গাড়িচালক ইব্রাহীমের পক্ষে কেউ কর্মসূচিতে আসেননি। মানববন্ধনে সেলিনা ইসলাম বিউটি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছে করলে নূর হোসেনকে রিমান্ড নেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিলে সাত খুনের আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। এর পেছনে আর কারা রয়েছে তাদের নামও জানা যাবে।
তাছাড়া কারা অর্থের যোগানদাতা, কাদের পরিকল্পনায় র্যাব সাতজন মানুষকে হত্যা করলো তাও বেরিয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারকে নিয়ে এখন আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। নিহত নজরুল ইসলামের ছোট ভাই আব্দুস সালাম বলেন, সাত খুন মামলার থেকে অব্যাহতি পাওয়া এজাহারভুক্ত আসামি ইয়াছিন মিয়াসহ ৫ আসামিকে সাত খুন মামলার চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হউক। যদি তারা নির্দোষ হয়, তবে তারা আদালত থেকে বের হয়ে আসবে। সাত খুনের ঘটনায় নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন বলেন, নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার আগে থেকেই আমাদের পরিবারকে বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে হুমকিধমকি দিয়ে আসছে। নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক এবং তার ফাঁসি চাই। সাত খুনের ঘটনায় নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ঘাতক নূর হোসেনের মুখ থেকে আমরা জানতে চাই, প্রকৃত অপরাধী কারা? তাই নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল ধুনহাজী রোড ও মৌচাক এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মানববন্ধনে নিরাপত্তা দিতে এএসপি ফোরকান শিকদারের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। গত ১২ই নভেম্বর ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে ১৩ই নভেম্বর দুপুর আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহিদুল ইসলামের আদালতে নূর হোসেনকে হাজির করানো হয়। এর মধ্যে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার ও ১১টি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখায় রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে নূর হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এরপর নূর হোসেনকে কঠোর প্রহরায় প্রথমে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখান থেকে নূর হোসেনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ, গত বছরের ২৭শে এপ্রিল নাসিক ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার সহ ৭ জনকে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সন্নিকট থেকে অপহরণ করে র্যাব-১১এর একটি টিম। ঘটনার তিন দিন পর ৩০শে এপ্রিল ৬ জন ও ১লা মে একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। নিহত সবারই হাত-পা বাঁধা ছিল। প্রত্যেকের নাভির নিচে ফুটো করে দেয়া হয় এবং লাশ যাতে ভেসে না ওঠে এজন্য প্রতিটি লাশের সঙ্গে ২টি করে ইট ভর্তি বস্তা বেঁধে দেয়া হয়। রোমহর্ষক ঘটনাটি দেশজুড়ে হইচই ফেলে দেয়। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়। প্রায় ১১ মাস তদন্ত শেষে দুটি মামলায় চলতি বছরের ৮ই এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় মামলার তদন্ত সংস্থা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এতে মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে র্যাব-১১ এর তখনকার অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার এম এম রানাসহ ২৫ জন এবং নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগী। দুটি মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। চার্জশিটের সঙ্গে ২টি বস্থায় ১৬২ ধরনের আলামত আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। দুটি মামলায় ২১ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ৩৫ জনের মধ্যে র্যাবের ৩ কর্মকর্তাসহ ২২ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে। নূর হোসেনসহ ১৩ জন পলাতক ছিল। এরমধ্যে শুক্রবার নূর হোসেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি ১২ জন ধোরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাদের মধ্যে র্যাবের ৮ জন এবং নূর হোসেনের ৪ সহযোগী রয়েছে।