g ঈদের পর কী করবে বিএনপি? | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ২০শে অক্টোবর, ২০১৭ ইং ৫ই কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ঈদের পর কী করবে বিএনপি?

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৮, ২০১৪

---

bnp-1আন্দোলন না কোন্দল! ঈদের পর কী করবে বিএনপি? এ প্রশ্ন তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের সর্বত্র নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেননা বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামী ঈদের পর আটঘাট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। রমজানের আগে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, এর মধ্যে সরকার সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে না নিলে হরতাল-অবরোধসহ আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেবেন তিনি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, তারা আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোরই প্রস্তুতি নিচ্ছেন একই সঙ্গে। দাবি না মানলে ঈদের পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করা হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন অন্যকথা। এমন কি বিএনপির নীতিনির্ধারক মহলের সদস্যরা পর্যন্তও বিএনপির সম্ভাব্য আন্দোলনের কোনো ভবিষ্যৎ দেখছেন না আপাতত। কারণ তারা মনে করেন, ঢাকাসহ কোথাও তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই আন্দোলনের। উপরন্তু কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া বাস্তবতা বিবর্জিত কমিটির মাধ্যমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নতুন করে কোন্দল তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আর মাঠের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন সেসব পকেট কমিটির কর্মকর্তারা তাদের অধীনস্থ কমিটিতেও নিজেদের অনুগত অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ায় বাস্তবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। পরীক্ষিত ও ত্যাগী কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে হতাশায় ভুগছেন।

অন্যদিকে ম্যানেজ করে নেতৃত্ব পাওয়া অদক্ষ ও অযোগ্য নেতারা নিজেদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় আন্দোলন থেকে সরকারি দলের স্থানীয় পক্ষগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করতে বেশি আগ্রহী। তারা ইতিমধ্যেই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছেন দল ও অঙ্গসংগঠনের জন্য। তাদের দাপটে কোন্দল আরও উসকে উঠেছে। আর এই কোন্দলের আগুনে কৌশলে ঘি ঢালছে সরকারি মদদপ্রাপ্তরা। অতি সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান অবদুল্লাহ আল নোমানের পছন্দের দুজনকে নিয়োগ দেওয়ার পর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফেলেই নেতা-কর্মীরা অদক্ষ সভাপতি ও সেক্রেটারিকে পিটিয়ে হাড়গোর ভেঙে দিয়েছেন। এমনকি শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম খানকে পর্যন্তও বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে। এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা নিয়ে চলছে আরেক তেলেসমাতি কাণ্ডকারখানা। ঢাকায় অবস্থানকারী বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির এমন নেতা খুব কমই বাকি আছেন, যাদের নাম ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি অথবা সেক্রেটারি পদে আলোচনায় আসেনি। সেই আ স ম হান্নান শাহ থেকে শুরু করে, আবদুল আউয়াল মিন্টু, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাদেক হোসেন খোকা, বরকত উল্লা বুলু, আমানউল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অনেকের নামই আলোচনায় এসেছে। সর্বশেষ মির্জা আব্বাসকে সভাপতি ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সেক্রেটারি করে ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণার কথাও শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত সেটিও অন্তঃকোন্দলের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, দেশব্যাপী তৃণমূলে দলটির আন্দোলন প্রস্তুতিসহ মোটামুটি শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও রাজধানী ঢাকায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। এ অবস্থায় ঢাকায় আন্দোলন দূরের কথা, বেগম খালেদা জিয়ার কোনো বিপদ এলেও কেউ রাজপথে বের হবেন না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বালির বস্তা দিয়ে গুলশানের বাসায় অবরুদ্ধ করা হলেও এ সরকারের মন্ত্রীরা এখন খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সংলাপের বিষয়ে সরকারি দলের অনাগ্রহের পর দ্রুততম সময়ে নতুন একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে বিএনপির সামনে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই বলেই মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আনেকেই বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ে বিএনপি ও তার জোটের শরিক দলগুলো সর্বাত্দক প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসছে ঈদের পরেই সবদিক থেকে গুছিয়ে দাবি আদায়ে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদের পর প্রথম সপ্তাহেই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডেকে নতুন নির্বাচন আদায়ে সর্বাত্দক আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রথম ধাপের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে। তবে ঈদের পরের আন্দোলনকে দমন করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার আবারও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও মাথায় রাখছে বিএনপি হাইকমান্ড। তাই আসছে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়েও কিছুটা সংশয় রয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের মনে। একটি সূত্র জানায়, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সরকারের সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বশেষ একটি প্রচেষ্টার জন্য বিএনপিকে কঠোর আন্দোলন প্রশ্নে আরও অন্তত দুই মাস সময় নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সে বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

এ জাতীয় আরও খবর