বুধবার, ১৮ই জুলাই, ২০১৮ ইং ৩রা শ্রাবণ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

হাদিসের আলোকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঠিক সময়

namaz14রসূলূল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন [আবু দাউদ, আহমদ, মালেক, নাসায়ি, মেশকাত, পৃষ্ঠা ৫৮]।

রাসুল (স.) বলেন, জিব্রাইল (আ.) কাবাঘরের কাছে এসে দু’বার আমার নামাজের ইমামতী করেন। সুতরাং তিনি আমাকে জোহরের নামাজ পড়ালেন যখন সূর্য মাথার ওপর থেকে একটু ঢলে যায় এবং তার ছায়াটা জুতোর চামড়ার মত হয়।তারপর তিনি আমাকে আসরের নামাজ পড়ালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার সমান হয়। তারপর তিনি আমাকে মাগরিবের নামাজ পড়ালেন যখন রোজাদাররা ইফতার করে (অর্থাৎ সূর্য ডোবার সাথে সাথেই)। তারপর তিনি আমাকে এশা পড়ালেন যখন “শাফাক” বা সন্ধ্যা বেলায় পশ্চিমাকাশের লাল রং দূর হয়ে যায়। তারপর তিনি আমাকে ফজরের নামাজ পড়ালেন যখন রোজাদারদের ওপর খাওয়া ও পান করা হারাম হয়ে যায়। অত:পর যখন দ্বিতীয় দিন এলো তখন তিনি আমাকে সেই সময় জোহর পড়ালেন যখন তার ছায়া সমান হয় এবং আসর তখন পাড়লেন যখন তার ছায়া তার দ্বিগুণ হয়। আর মাগরিব তখন পড়ালেন যখন রোজাদার ইফতার করে এবং এশা তখন পড়ান যখন তিন ভাগের একভাগ রাত গত হয়ে যায়। আর ফজর তখন পড়ান যখন ফর্সা হয়ে যায়। তারপর তিনি আমার দিকে মুখ করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটা আপনার পূর্বের নবিদের সময় এবং এই দুই অক্তের মধ্যবর্তী সময়ই হল প্রকৃত সময়। [আবু দাউদ, তিরমিযি, মেশকাত, পৃ: ৫৯]।

কেউ কেউ বলেন, ফজরের নামাজ আদমের, জোহর দাউদের, আসর সোলায়মানের, মাগরিব ইয়াকুবের এবং এশা ইউনুস আলাইহিস সালামের ছিল। অত:পর ঐ সবগুলোই এই উম্মতের জন্য একত্রিত করে দেওয়া হযেছে।[ফতোয়ায়ে শামি, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃ:]

ফজরের ওয়াক্ত : ফজরের নামাজের সময় সুবহে সাদিক হতে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.‘গালাসে’ (অর্থাৎ একটু অন্ধকার থাকতে) ফজরের নামাজ পড়তেন (বুখারি ও মুসলিম) এবং আয়েশা (রা.) বলেন, রসূলূল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজ এমন (অন্ধকার) সময়ে পড়তেন যে, নামাজী মেয়েরা চাদর জড়িয়ে ফেরার সময় অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না। [বুখারি, মেশকাত, পৃ: ৬০]

আকাশবিদ পন্ডিতদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, সূর্য ডোবা থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত সময়টাকে আট ভাগে ভাগ করলে ৭ ভাগের শেষ ও ৮ ভাগের শুরুটা ফজরের আওয়াল ওয়াক্ত। এরূপ চান্দ্র মাসের ১৩ তারিখে চাঁদ ডোবার ও ২৬ তারিখে চাঁদ ওঠার সময়টাও ফজরের আওয়াল ওয়াক্ত বলে প্রমাণিত হয়। অভিজ্ঞতায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সাধারণত: সূর্য ওঠার দেড় ঘন্টা আগে এবং মৌসুম অনুযায়ী কখনো তারও ১৫-২০ মিনিট আগেপরে সুবহে সাদিক উদিত হয়, যাকে ফজরের আওয়াল ওয়াক্ত বলে।

ইমাম তাহাভি [রহ.] বলেন, রসূলূল্লাহ (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবেক গালাসে ফজরের নামাজ শুরু করা উচিত এবং এসফারে (একটু ফর্সা হলে) শেষ করা উচিত। এটাই হল ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও মোহাম্মদ রহেমাহুমুল্লাহ প্রমুখের মত এমনটাই।[শারহে মাআ-নীল আসা-র ১ম খন্ড, ৯০ পৃ]

জোহরের ওয়াক্ত : সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার পর হতে শুরু করে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন জিনিসের ছায়া সেই জিনিসের সমান না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত জোহরের সময় (মুসলিম)। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রসূলূল্লাহ (স.) গরমকালে ঠান্ডা হয়ে দেরী করে জোহর পড়তেন এবং শীতকালে জলদি পড়তেন। [নাসায়ি, মেশকাত, ৬২ পৃ:]

আসরের ওয়াক্ত : কোন জিনিসের ছায়া সমপরিমাণ হয়ে যাবার পর দ্বিগুণ হতে শুরু করা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত আসরের সময় । [মুসলিম]

রসূলূল্লাহ (স.) বলেন, সূর্য যখন হলদে রং হয় এবং শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে এসে যায় তখন মোনাফেকরা আসরের নামাজ পড়ে [মুসলিম, মেশকাত, ৬০ পৃ:]। সুতরাং সূর্যের আভা একটু হলদে রং হয়ে আসবার পূর্বেই আসর পড়া উচিত।

ইমাম আবু হানীফা থেকেও বর্ণিত আছে যে, আসরের ওয়াক্তের শুরু হল এক ছায়া হতে। ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মোহাম্মাদ এবং ইমাম যোফার ও অন্য তিনজন ইমামের মতও তাই। মোহাদ্দেস ইমাম তাহাভী বলেন, আমরা এটাকে গ্রহণ করি। [তাহাভী ৭৮ পৃ]

গোরারুল আযকারে এটাই গৃহীত হয়েছে। জিবরাইলের বর্ণনা থেকে এটাই সুস্পষ্ট যে, এ ব্যাপারে এটাই হল সঠিক ‘নাস্’ ও হাদিস। [দূররে মোখতার ১ম খন্ড, ৫৯ পৃ:]

রসূলূল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল নষ্ট হয়ে যায়। [বুখারি, মেশকাত, পৃষ্ঠা ৬০]

মাগরিবের ওয়াক্ত : সূর্য ডোবার পর থেকে পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময় (মুসলিম, মেশকাত, ৫৯)। রাফে ইবনে খুদাইজ বলেন, আমরা রসূলূল্লাহ (স.)-এর সাথে নামাজ পড়তাম। তারপর আমাদের কেউ গিয়ে তীর ছুঁড়লে আমরা তার সেই তীর পড়ার জায়গাটা দেখতে পেতাম। [বুখারি, মুসলিম, মেশকাত, পৃ: ৬০]

এশার ওয়াক্ত : রসূলূল্লাহ (স.) বলেন, পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর হাবার পর অর্ধেক রাত পর্যন্ত এশার ওয়াক্ত।[মুসলিম, মেশকাত, পৃ: ৫৯]

নোমার উবনে বাশীর থেকে বর্ণিত যে, চাঁদ উঠে তিন ঘড়ি গত হবার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজ পড়তেন। [আবু দাউদ, মেশকাত, ৬১ পৃ:]

জুমুআর নামাজের ওয়াক্তক : হাফিয ইবনে হাজার আস্কালানী বলেন, সা’লাবা ইবনে আবু মালিক থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সালল্লালাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম-এর সাধারণ সাহাবীগণ জুমুআর দিনে দুপুরে নামাজ পড়তেন।[তালখীসুল হাবীব ৭০ পৃষ্ঠা]অতএব উক্ত যয়ীফ হাদিসগুলো আমলের অযোগ্য নয়। আবু যর (রা.) বলেন, আমি রসূলূল্লাহ সালল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ফজরের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য ডোবা পর্যন্ত কোন নামাজ নেই। তবে মক্কা ছাড়া, মক্কা ছাড়া, মক্কা ছাড়া।[আহমদ, মিশকাত ৯৫ পৃষ্ঠা]

এ জাতীয় আরও খবর

এক বেদুইনের দোয়ায় জান্নাত লাভের সৌভাগ্য!

স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা

ইসলাম নির্মূলে ‘ছোট মক্কা’য় ধর্মীয় শিক্ষা ও নামাজ নিষিদ্ধ !

ইহরাম অবস্থায় যে পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ

মহর না দিলেও কী হয় ?

যে দোয়াটি পড়লে ৭০ হাজার ফেরেস্তা আপনার হেফাজত করবে