বিবাহবিচ্ছেদ আটকাতে যা করবেন
বর্তমান সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা ব্যক্তি ও পরিবার জীবনের জন্য এক বিশাল হুমকি। পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থা, পরকীয়া, মনোমালিন্য, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ঘাটতি, আকর্ষণ কমে যাওয়া, দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির সূত্রপাত প্রভৃতি বহু কারণেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে। তাই এই গভীর সংকট থেকে মুক্তির জন্য সমাধানের পথ তালাশ করছেন অনেকে। কিছু গবেষক বিবাহবিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের পূর্বাভাসের বিভিন্ন বিষয় চিহ্নিত করেছেন, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশ কার্যকর।
বাসেল ম্যাগাজিনকে সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড বেনেট বলেন, ‘সম্পর্ক ঠিকঠাকভাবে বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা অপরিহার্য। বেশ কিছু কার্যকরী পদ্ধতি আছে যেগুলোর মাধ্যমে সম্পর্ক আরো সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ করে তোলা যায়।’ চলুন জানা যাক বিবাহবিচ্ছেদ আটকানোর কিছু কলাকৌশল।
১. ম্যাজিক অনুপাত: কোনো দম্পতির মধ্যে ঝগড়া লাগলে ইতিবাচক দিকের চেয়ে নেতিবাচক দিকগুলো সাধারণত বেশি প্রাধান্য পায়। ফলে ঝগড়া একরকম দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। কিন্তু ডা. গোটম্যান সুখী দম্পতিদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে, তাদের মধ্যে ঝগড়া লাগলে তারা ইতিবাচক সময়গুলোকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের সম্পর্কের ভালো এবং খারাপ মুহূর্তের অনুপাত দাঁড়ায় ৫ বনাম ১। ডা. গোটম্যান এটাকে ম্যাজিক অনুপাত বলেন। এসব দম্পতির মধ্যে কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্ব লাগলেও তারা হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে দ্বন্দ্বের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
যেসকল দম্পতি সহজেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্তে চলে যান তাদের ক্ষেত্রে এই অনুপাত হচ্ছে ১ বনাম ১ অথবা তার চেয়ে কম। অর্থাৎ তাদের দাম্পত্যজীবনে ভালো এবং খারাপ মুহূর্তের স্থায়িত্ব বা পরিমাণ প্রায় সমান অথবা ভালো মুহূর্তের পরিমাণ কম। সুতরাং আপনার সম্পর্ক আরো মধুর করতে হলে আপনাকে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। ডা. গোটম্যানের গবেষণা অনুযায়ী, হাতে হাত রাখা, ঠাট্টা-মস্করা করা, সহানুভূতি দেখানো এবং ক্ষমা চাওয়ার মতো ছোটখাট ব্যাপার আপনার সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
২. মনোমালিন্যে আক্রমণাত্মক না হওয়া: দাম্পত্য জীবনে ছোটখাট কথা কাটাকাটি অথবা তর্কাতর্কি খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। ডা. গোটম্যানের মতে, ছোটখাট তর্ক বা ঝগড়ায় স্বামী অথবা স্ত্রী যদি আক্রমণাত্মক আচরণ করেন তাহলে তাদের দাম্পত্যজীবন ব্যাহত হবে এবং এটি ভবিষ্যতের জন্য ডিভোর্সের অন্যতম একটি পূর্বাভাস। সাবধানতার সঙ্গে ঠিকঠাক বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিন। সামান্য এইটুকু কৌশল অবলম্বনে আপনার দাম্পত্য জীবন সুখের হবে।
৩. সঙ্গীর সমালোচনা থেকে বিরত থাকা: সঙ্গীর সঙ্গে মনোমালিন্য হলে ‘সবসময়’ অথবা ‘কখনোই না’ সম্পর্কিত ভাষাগুলো সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। সর্বদা সঙ্গীর সমালোচনায় মুখর হলে দাম্পত্য জীবন ডিভোর্সের দিকে ত্বরান্বিত হয়। ডা. গোটম্যান তাঁর গবেষণায় সঙ্গীর প্রতি চার ধরনের নেতিবাচক আচরণের কথা বলেছেন, যা একটি সম্পর্ককে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। এই চারটি আচরণ হল- সমালোচনা করা, অবজ্ঞা করা, অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হওয়া এবং এড়িয়ে চলা। কোনো সম্পর্কে এই চারটি ব্যাপার যুক্ত থাকলে সেই সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না।
৪. অবহেলা না করা: আপনার সঙ্গীর সঙ্গে আপনার তর্কের প্রথম ৩ মিনিট খুব বিপজ্জনক একটা সময়, এ সময়ে কঠিন এবং আঘাতপূর্ণ ভাষা এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি তর্কের মাঝামাঝি সময়েও। ঝগড়ার সময়ে সঙ্গীর সঙ্গে টেক্কা দেয়াটা সম্পর্ককে চরম খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ডা. গোটম্যান বলেন, ‘আপনি যদি আপনার সঙ্গীর ওপর কর্তৃত্ব খাটিয়ে তাকে কোনো কথা বলেন, পরবর্তীতে তা ডিভোর্সের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দেবে।’ সূত্র: বাসেল ম্যাগাজিন