হলি আর্টিজান মামলা: ২ পলাতকের সম্পত্তি ক্রোক ও হুলিয়া জারি
আদালত প্রতিবেদক: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলায় দুই পলাতক আসামি মো. শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদের সম্পত্তি ক্রোক এবং তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
ওই আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক রয়েছেন মর্মে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল হওয়ায় আজ বুধবার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর হুলিয়া ও ক্রোক পরোয়ানা জারি সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে গত ৮ আগস্ট একই ট্রাইব্যুনাল মামলাটির চার্জশিট আমলে নিয়ে ওই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। ওই দিনই এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যিালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন অনুযায়ী অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার চার্জশিটভুক্ত আট জন আসামিরা হলেন— হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যা শ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।
আসামিদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ পলাতক এবং অপর ছয় আসামি কারাগারে রয়েছেন।
চার্জশিটটি ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের (সংশোধনী ২০০৩) ৬(২)/৭/৮/৯/১০/১২/১৩ ধারায় দাখিল করা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যামশ ও রাকিবুল হাসান রিগ্যান হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত পাঁচ জন হলেন— রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের সময় নিহত আট জন হলেন— তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
চার্জশিটে হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলার উদ্দেশ্য জঙ্গীদের ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী ঢাকার এমন একটি জায়গাতে হামলা করবে যেখানে বিদেশি নাগরিক বেশি চলাচল করে। যাতে বাইরের দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। যৌথ বাহিনী পরে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। অভিযানে ছয় জঙ্গির সবাই নিহত হন।