সুবর্ণা নদী হত্যা : যেসব ঘটনা সামনে আসছে
পাবনায় সুবর্ণা নদী (৩২) নামের এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের রাধানগর মহল্লায় তাঁর ভাড়া বাসার সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
সুবর্ণা নদী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভিতে কাজ করতেন। তিনি পাবনা থেকে প্রকাশিত গণমাধ্যম ‘দৈনিক জাগ্রত বাংলা’র সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে তিনি। সুবর্ণার জান্নাত (৭) নামে এক মেয়ে রয়েছে। তবে স্বামীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
সুবর্ণার বড় বোন চম্পা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন তাঁর বোন। বাসার সামনে পৌঁছলে ওঁত পেতে থাকা মুখ ঢাকা দুই ব্যক্তি তাঁর ওপর হামলা চালায়। তারা সুবর্ণাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। হামলাকারীদের চিনতে পারেননি তিনি। পরে চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাঁকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই সুবর্ণার মৃত্যু হয়।
হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেসব কারণ সামনে আসছে
পাবনাসহ সারাদেশে দিনভর এই ঘটনা নিয়ে চলছে আলোচনা। হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্তে নেমেছে। বছর দেড়েক আগে সুবর্ণা নদীর ডিভোর্স হয়। এই ডিভোর্সের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালতে একটি মামলাও চলছে।
চম্পা খাতুন বলেন, আমার বোন তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ জুন থানায় মামলাটি করেছিলেন। মামলা আদালতে বিচারাধীন। তার সাবেক স্বামী রাজিবের লোকজন নিশ্চিত ছিলেন যে তারা মামলায় হেরে যাবেন। আর এই কারণেই সুবর্ণা নদীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার বড় বোন।
তিনি বলেন, আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সঙ্গে বছর দুয়েক পূর্বে বিয়ে হয়। বছর দেড়েক আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর সুবর্ণা নদী পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে একটি যৌতুক মামলা করেন। এ মামলায় সুবর্ণা তার সাবেক স্বামী রাজীব ও তার বাবা আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করেন।
মঙ্গলবার এ মামলার সাক্ষ্য দেয়ার দিন ছিল। এতে সুবর্ণা আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সুবর্ণাকে হত্যা করেছে বলে দাবি তার পরিবারের। তারা জানান, ইতিপূর্বেও সুবর্ণা নদীকে বিভিন্ন ভাবে শহরে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়। গত বছরের জুনে তার গলায় চাকু চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা। পরে সুবর্ণা নদী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ মিলনায়তনে গত ২২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে ওই বছরেই ৩ অক্টোবর একই দাবিতে ঢাকার ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
এদিকে, শহরের শিমলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ বুধবার দুপুরে আবুল হোসেনকে তার কর্মস্থল শিমলা ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড হসপিটাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সুবর্ণা নদী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুপুরে তাঁর মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ মোট ৬-৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দাায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহার নামীয় প্রধান আসামি আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
কালের কন্ঠ