কারও উসকানিতে না পড়তে খালেদা জিয়ার নির্দেশ
কারও উসকানিতে না পড়ে নিজের দলকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার (৭ মার্চ) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে এই কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানোর জন্য তিনি (খালেদা জিয়া) আমাদের জানিয়েছেন, তিনি অটুট আছেন। তার শরীর ভালো আছে। দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য তিনি যে কোনও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আমরা কারাগারে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মনোবল অত্যন্ত উঁচু দেখেছি। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে সব প্রতিকূল পরিবেশকে মোকাবিলা করছেন। কারারুদ্ধ অবস্থায় দেশের কথাই চিন্তা করছেন।’
বিএনপি মহাসচিব জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বুধবার বিকাল সোয়া ৩টায় কারাগারে প্রবেশ করেন তারা। বিএনপি নেতারা জেল থেকে বেরিয়েছেন বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে। মোট এক ঘণ্টা ১০ মিনিট নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের। তার ভাষ্য, ‘আমরা তার সঙ্গে আলোচনা করে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে, তার মনোবল অত্যন্ত উঁচু ও সত্যের পথে। সত্য প্রতিষ্ঠা হবে বলে মনে করেন তিনি।’
এই রাজনীতিবিদের অভিযোগ– বেআইনিভাবে সম্পূর্ণ মিথ্যে মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। সরকার বিভিন্ন কারচুপির মধ্য দিয়ে তার কারাবাসকে দীর্ঘ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তার কথায়, ‘সবকিছু দূরীভূত হবে বলে বিশ্বাস করি আমরা। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমাদের সংগ্রাম চলছে।’
খালেদা জিয়া কোনও নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের চেয়ারপারসন কারান্তরীণ হওয়ার পর থেকে আমরা যৌথ প্রচেষ্টায় আন্দোলন পরিচালনা করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু পরিচালনা করছি।’
সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তারা স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আট সদস্যকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়।
কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বিএনপি’র প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বামেই সিনিয়র জেল সুপারের যে অফিস কক্ষ ছিল, ‘সাবজেল’ ঘোষণা করে সেখানেই রাখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য আসামি তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজন পেয়েছেন ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। পাশাপাশি তাদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানাও হয়েছে।
দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এর আগে একবার কারাগারে যেতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্পিকারের বাসভবনকে সাবজেল ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান।