সিরিয়ায় নারীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছে ত্রাণ কর্মীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘প্রতি মুহূর্তে ১০ থেকে ২০ বার বিমান হানা হচ্ছে। বৃষ্টির মতো ধেয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্র।’ পূর্ব গুটার নাগরিকের এই আর্তি ধাক্কা দিয়েছিল বিশ্বকে। অগ্নিগর্ভ সিরিয়ার এই পরিস্থিতি প্রকাশ্যে আসে চিকিৎসাধীন নাগরিকদের মাধ্যমে।
যুদ্ধবিরতি চলাকালীন আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসা ও সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। কিন্তু, এবার যে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে নিশানায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
সম্প্রতি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সিরিয়ায় ত্রাণ দেয়ার সময় স্থানীয় লোকেরা সেখানকার নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যৌন কাজে ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ত্রাণকর্মীরা স্বীকার করেছেন, খাদ্য সাহায্য এবং তাদের গাড়িতে করে কোথাও পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে তারা যৌন সুবিধা নিত। যৌন শোষণ সেখানে এতটাই ব্যাপক যে কিছু সিরিয় নারী ভয় ও লজ্জায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রেই যেতেন না। কারণ লোকে ভাববে যে তারা দেহবিক্রি করে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছে। বিবিসির বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
কেয়ার এবং আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি (আইআরসি) নামে দুটি ক্রাণ সংস্থা ২০১৫ সালেই সতর্ক করে দিয়েছিল, ত্রাণ বণ্টনের সময়ে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। কিন্তু গত বছরেও ইউএনএফপিএর এক রিপোর্টে দেখা যায়, দক্ষিণ সিরিয়ায় ‘ত্রাণের বিনিময়ে যৌন সুবিধা নেয়া’ অব্যাহত রয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা হয়েছে, এক বেলার খাবার পেতে সিরীয় নারী বা অল্পবয়স্ক মেয়েরাও অল্প কিছু সময়ের জন্য কর্মকর্তাদের বিয়ে করে ‘যৌন সেবা’ দিয়েছে। কোথাও ত্রাণ বিতরণকারীরা মেয়েদের কাছে তাদের ফোন নাম্বার চেয়েছে, কেউ বা গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে ‘যৌন সুবিধা’ চেয়েছে।
অনেক নারীকে ত্রাণ দেয়ার বিনিময়ে ‘তার বাড়িতে যাওয়ার’ বা ‘তার সঙ্গে এক রাত কাটানোর’ ঘটনা ঘটেছে। একজন ত্রাণকর্মী দাবি করেছেন, লোকজনের হাতে ত্রাণ পৌঁছানোর স্বার্থে তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করেছিলেন। ইউএনএফপিএর ‘ভয়েসেস ফ্রম সিরিয়া ২০১৮’ নামে এক রিপোর্টে বলা হয়, বিশেষ করে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারী বা অল্পবয়েসী মেয়ে ‘যাদের কোনো পুরুষ রক্ষক নেই’, তাদের এরকম বিপদের ঝুঁকি বেশি।
এক দাতব্য সংস্থার উপদেষ্টা ডানিয়েল স্পেন্সার বলেন, কোনো কোনো নারী বলেছে, দারা এবং কুনেত্রার স্থানীয় কাউন্সিলের পুরুষকর্মীরা ত্রাণসামগ্রী আটকে রেখে নারীদের যৌন কাজে ব্যবহার করত। এ ব্যাপারে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় জাতিসংঘ এবং দাতব্য সংস্থাগুলো এরকম ঝুঁকির কথা স্বীকার করেছে।
তবে তারা বলছে, এ ব্যাপারে তাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে এবং ওই অঞ্চলে তাদের সহযোগীদের মধ্যে এ ধরনের কাজ হচ্ছে বলে তাদের জানা নেই। তিন বছর আগে প্রথম এ ধরনের অভিযোগের কথা জানা যায়।
জর্ডানের শরণার্থী শিবিরের সিরিয়ান নারীদের কাছ থেকে ২০১৫ সালের মার্চে একটি দাতব্য সংস্থার মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ডেনিয়েল স্পেন্সার অভিযোগটি শোনেন। সিরিয়ার দারা ও কুনেইত্রার স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা কীভাবে ত্রাণের বিনিময়ে যৌনতা চেয়েছিল শরণার্থী শিবিরের বেশ কয়েকজন নারী স্পেনসারকে সে বিষয়ে অবহিতও করেন।
স্পেনসার বলেন, ‘তারা (স্থানীয় কর্মকর্তা) সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ত্রাণ তুলত এবং পরে যৌনতার বিনিময়ে তা নারীদের দিত। কয়েকজনেরই এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে, কেউ কেউ খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিল। আমি একজনের কথা স্মরণ করতে পারি, যিনি কক্ষের মধ্যে কাঁদছিলেন, তার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা নিয়ে তিনি খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন।’
খাদ্য, সাবানসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্য পাওয়ার সময় নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এটা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, কলঙ্কের দাগ না লাগিয়ে তারা (ত্রাণ আনতে) যেতে পারত না। ধরেই নেয়া হতো, যেহেতু তুমি ত্রাণ তুলতে গিয়েছ, তার মানেই হচ্ছে এর বিনিময়ে তুমি কোনো যৌন কাজে অংশ নিয়েছ।