শুক্রবার, ২রা মার্চ, ২০১৮ ইং ১৮ই ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়ার ‘উকিল হওয়ার প্রস্তাবে সাড়া দেননি’ ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের দ্বারস্থ হয়েছে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার মামলা নিয়ে গণফোরাম সভাপতি কামাল আলোচনা করলেও উকিল হওয়ার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চৌধুরী জানিয়েছেন।

অবশ্য বিএনপির দাবি, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়টি ‘সঠিক নয়’।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান ও আমিনুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরের আগে মতিঝিলের মেট্রোপলিটন চেম্বার ভবনে ড. কামালের চেম্বারে যান। সেখানে ঘণ্টাখানেক মামলা নিয়ে আলোচনা করেন তারা।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চৌধুরীও সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, আব্দুর রেজাক খান সাহেব ও একজন আইনজীবী চেম্বারে এসেছিলেন দেখা করতে। উনারা আসলে মামলাটি নিয়ে ব্রিফ করেছেন উনাকে, পরামর্শও নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও আইনজীবীরা এর আগেও এসেছেন; হয়তো ভবিষ্যতেও আসবেন।”

কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে সুব্রত বলেন, “খালেদা জিয়ার আপিল শুনানিতে ড. কামাল হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশার কথা উনারা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি তো ফৌজদারি মামলা করি না। ফৌজদারি মামলায় আপনিই (আব্দুর রেজাক খান) তো ভাল আইনজীবী। তাছাড়া এখন আমি নিয়মিত আদালতেও যাই না।’ এরপর আর উনারা বেশিক্ষণ থাকেননি।”

তবে ড. কামালকে বিএনপিনেত্রীর পক্ষে মামলা লড়ার প্রস্তাব দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “প্রস্তাব না। জাস্ট মামলাটির আইনগত দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্যার আপিল মামলাটির খোঁজ-খবর নিয়েছেন।”

আমিনুল বলেন, “মূলত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং মামলাটির রায় নিয়ে ব্রিফ করতে উনার (ড. কামাল) কাছে গিয়েছিলাম। মামলাটি দেখে উনি আফসোস করেছেন এবং ম্যাডামের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। আলোচনার এক পর্যায়ে মামলার একটি অনুলিপিও তিনি রেখেছেন।”

জরুরি অবস্থার সময় দুদকের দায়ের করা জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর চার আসামির প্রত্যেককে দেওয়া হয় দশ বছর করে কারাদণ্ড।

হাই কোর্টে গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলেও নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি হাই কোর্টে না পৌঁছানোয় তার জামিন প্রশ্নে আদেশ আটকে আছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবারও বলেছেন, বিএনপির আইনজীবীদের ‘ভুলের কারণেই’ খালেদা জিয়া এখনও কারাগারে আছেন।

অন্যদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ, সরকারের কারণেই খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্য সঠিক নয়। আমাদের সিনিয়র আইনজীবীরা সকল শক্তি দিয়ে আইনি লড়াই করে যাচ্ছেন।”

খালেদা জিয়ার আপিল শুনানিতে অংশ নিতে ড. কামালের রাজি না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “এই রকম কথা ঠিক নয়। এ রকম কথা আমরা শুনিনি।

“আমার মনে হয় এই দুঃসময় নিয়ে প্রত্যেকটি সুশীল মানুষ বেদনাবোধ করছেন, তারা প্রত্যেকে আজকে একই চিন্তা করছেন, প্রত্যেকের হৃদয়ে একই অনুভুতি হচ্ছে- এই সরকারের বিরোধিতা করতে হবে, এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তবে প্রক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে আপনারা পরে জানতে পারবেন।”

রিজভী বলেন, “কেউ কোথাও প্রত্যাখ্যান করছেন না। সবাই একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। প্রত্যেকেই ভাবছেন একত্রিত হওয়ার কথা।” বিডিনিউজ

Print Friendly, PDF & Email