বুধবার, ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ইং ১৬ই ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে ব্যয় ৭১২ কোটি টাকা

মিয়ানমারের রাখাইনে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা ১০ লাখ ৭৫ হাজার ৩৭১ জন। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে এসেছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ২৩৫ জন। বাকিরা এসেছে ২৫ আগস্টের আগে। এই রোহিঙ্গাদের পেছনে প্রতিমাসে ব্যয় করতে হচ্ছে ৭১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। খাদ্য হিসাবে শুধু চালই লাগছে প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন। যার দাম প্রায় শত কোটি টাকা। এর বাইরে ভূমি, বনভূমি-সর্বোপরি পরিবেশের জন্য ক্ষতি গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

সিপিডি সম্প্রতি এক হিসাবে দেখিয়েছে চলতি অর্র্থবছরের সেপ্টেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ১০ মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশকে বাড়তি খরচ করতে হবে ৭,১২৬ কোটি টাকা। এ টাকা দেশের চলতি বাজেটের প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ১৩ শতাংশের বেশি। বিপুল সংখ্যক এই বিদেশি নাগিরিক বাংলাদেশের জন্য বহুমাত্রিক সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে।

দেশে অবস্থানরত এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য বিপুল পরিমান খাদ্যসহ যাবতীয় জোগান দেয়া লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। সম্প্রতি বন্যাতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্যও বিপুল পরিমান খাদ্য জোগান দেওয়া লাগছে।

ত্রান ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ সব রোহিঙ্গাদের জন্য রাস্তা, স্কুল, বিদ্যুৎ লাইন, জ্বালানি, নলকুপ, পুলিশ প্রশাসন, সেনিটেশন, হাসপাতাল, সাইক্লোন সেন্টার, গুদামঘর,গোরস্থানসহ বিভিন্ন প্রকার স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এ স্থ্পানা তৈরিতে অভ্যন্তরিণ উৎসের বাইরের বিভিন্ন দাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। বিপুল সংখ্যক এই রোহিঙ্গার মধ্যে এতিম শিশু রয়েছে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন, গর্ভবতী নারী সংখ্যা ১৫ হাজার এবং প্রসূতি নারী ২ হাজার ৫২ জন। এ সব নারী ও শিশুকে সাধারণ খাদ্যের বাইরে বিশেষ চিকিৎসা ও বাসস্থানের বাইরে বিশেষ খাদ্য ও পরিসেবা দেওয়া হচ্ছে।

দশ লক্ষাধিক এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত পাঠানোর জন্য কুটনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়ে বাংলাদেশ মানবিক কাজ করেছে। এটা বিশ্ব জুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের অর্থনীতির ও্পর বাড়তি চাপ পড়েছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে বিগ্ন সৃষ্টি করছে। এ সব রোহিঙ্গা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সাথে চুক্তি হয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক মহলকেও যুক্ত করার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

আমাদের সময়.কম

Print Friendly, PDF & Email