চাঁদার দাবিতে স্কুলশিক্ষককে গাছে বেঁধে নির্যাতন
---
লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের জেলেপাড়ায় এক স্কুল শিক্ষককে ৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং বাকি সাড়ে ৪ লাখ টাকার চেক ও এক শত টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন ওই শিক্ষক।
সন্ত্রাসীরা বিষয়টি থানা পুলিশ বা লোক জানাজানি করলে পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও দেশছাড়া করার হুমকি প্রদান করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে আহত শিক্ষক চিকিত্সা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে অথবা মামলা করতে এমনকি বিষয়টি কাউকে জানাতেও সাহস পাননি। সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার পর তা পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করলে ঘটনার ৪ দিন পর গত শুক্রবার রাতে পুলিশ আহত শিক্ষককে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য প্রেরণ করে এবং লোহাগড়া থানায় মামলা গ্রহণ করে। গতকাল শনিবার সকালে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করেছে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মরিচপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লাহুড়িয়ার জেলেপাড়ার মনি কুমার বিশ্বাস গত ২ অক্টোবর রাতে লাহুড়িয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একই গ্রামের লাহুড়িয়া ইউপির আকবর মেম্বারের নেতৃত্বে মনিরুল ইসলাম, আনিচুর রহমান, রবিউল ইসলাম, আমিনুর রহমান ও সুদে আমিনুর ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে মনিরুলের বাড়ি সংলগ্ন মেহগনি গাছের সাথে বেঁধে ৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে মারপিট করে।
খবর পেয়ে মনি কুমারকে বাঁচাতে তার স্ত্রী শিক্ষিকা বাসনা রানী প্রতিবেশী ত্রিনাথ ও পরিমল স্বর্ণকারকে সাথে নিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেন এবং সাড়ে ৪ লাখ টাকার একটি চেক ও একটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। চেকের সাড়ে ৪ লাখ টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে না পারলে এবং এ নিয়ে মামলা বা লোক জানাজানি করলে হত্যা ও দেশ ছাড়ার হুমকিও দেয় ওই সন্ত্রাসীরা।
স্ত্রী বাসনা রানী ও প্রতিবেশী গৌরাঙ্গ বিশ্বাস জানান, ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকির কারণে আহত মনি কুমারকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিত্সা দেওয়া যায়নি। তবে তাকে স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার উবায়দুর রহমানকে দিয়ে বাড়িতে রেখে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে পুলিশের সহযোগিতায় আহত মনি কুমার বিশ্বাসকে চিকিত্সার জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম ও মেম্বর আকবর টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডহরপাড়া গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের স্ত্রী বাসনা রানী ৬ জনকে আসামি করে শুক্রবার রাতে লোহাগড়া থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্ত রবিউলকে গতকাল শনিবার সকালে আটক করা হয়েছে।