‘জঙ্গি’ তালেবানদের আশ্রয় দিতে চেয়েছিল সৌদি আরবও
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠি তালেবান কাতারে কার্যালয় খোলার আগে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের দেশে দলটির কার্যালয় চালু করতে চেয়েছিল। বর্তমানে শান্তি প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্বরত সাবেক তালেবান যোদ্ধা ও আল-কায়েদার প্রাক্তন প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সাবেক সহযোগী আবদুল্লাহ আনাস এই তথ্য জানিয়েছেন।
আলজেরিয়ার নাগরিক আনাস এখন বর্তমানে বাস করেন লন্ডনে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে তিনি বলেন, ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার সৌদি আরব সফর করেছেন। আফগান তালেবানদের আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য মধ্যস্থতা করছিলেন তিনি।
তালেবানকে কার্যালয় খুলতে দিয়ে কাতার সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা করছে- সৌদি আরবের এমন অভিযোগে বিস্মিত হয়েছেন আনাস। তালেবানের প্রথম কার্যালয় সৌদি আরবে ছিল বলেও জানান তিনি। আনাস বলেন, আমিরাতেও কয়েকটি কার্যালয় ছিল। কাতারকে যদি সন্ত্রাসবাদের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, তাহলে এই ‘সন্ত্রাসীদের’ অন্যরাই আগে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।
আনাসের ভাষ্যমতে, সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান প্রিন্স মাকরিন বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদের সঙ্গে তিনি কয়েকবার বৈঠক করেছেন। প্রয়াত বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের সহযোগিতায় ২০০৮ সালে মদিনায় শান্তি আলোচনা আয়োজন করেন।
এর আগে দোহাতে তালেবানের কার্যালয় খোলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। এরপর থেকেই তালেবানের কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে।
এদিকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান যুদ্ধে সৌদি আরব একটি পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তালেবানরা কাতারমুখী হয়ে পড়ে। তাদের একটি নিরপেক্ষ দেশ প্রয়োজন ছিল। আর কাতার ছিল সেই নিরপেক্ষ দেশ। সৌদি আরবও তালেবানকে আশ্রয় দিতে চাইছিল।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আমিরাতি রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল-ওতাইবার ফাঁস হওয়া এক ই-মেইল থেকে জানা যায়, তালেবানের একটি কার্যালয় যাতে আবুধাবিতে করা হয়, সেজন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই কার্যালয়টি হয় কাতারে। ২০১৩ সালে মূলত তালেবানের একটি কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় কাতারে। আফগানিস্তানে শান্তি আলোচনাকে এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কার্যালয়টি খোলা হয়।
ফাঁস হওয়া ই-মেইলের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ওতাইবার এই ই-মেইল কাতারের বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর আগে কাতারি প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমিরাতি প্রশাসন অভিযোগ করে, কাতার তালেবানকে আশ্রয় দিচ্ছে।
গত ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। সড়কপথ, নৌ-পথ ও আকাশ পথেও কাতারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আরব দেশগুলো। তাদের অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল, কাতার তালেবান কার্যালয় নিজ দেশে রেখে দলটিকে সহায়তা দিচ্ছে। অবশ্য ওই অভিযোগকে শুরু থেকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে কাতারি প্রশাসন।
মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন মতে, গত ২৩ মে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা হ্যাকিংয়ের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আর তার পরদিনই কাতার সরকারের সংবাদমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। হ্যাকাররা কাতারের সরকারি গণমাধ্যম কিউএনএ’র ওয়েবসাইটে একটি ভুয়া প্রতিবেদন যুক্ত করে দেয়। এতে দেখা যায়, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় টিকে থাকবেন কি না- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ওই ঘটনায় আরব আমিরাত জড়িত বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।