বাবার কাছে মুক্তামনির প্রশ্ন‘বাবা আমি আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে গেছি না’?
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : রবিবার (১৩ আগস্ট) সকালে মুক্তামণি তার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “বাবা আমি আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে গেছি না?”
রবিবার দুপুরের দিকে তেমনটাই জানালেন, মুক্তামণির বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন। বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সে এখনো আইসিইউতে রয়েছে। তার আরো কয়েকটি অস্ত্রোপচার দরকার হবে। তবে তার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সেনিয়ে কয়েকদিন পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।–বিবিসি বাংলা।
শনিবার (১২ আগস্ট) শিশুটির হাতে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিন কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ সম্ভব হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন সে পুরোপুরি কোনদিনও সেরে উঠবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। কেননা তার শরীরের আরো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় মাস খানেক আগে সাতক্ষীরার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাবা মেয়েকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছিলেন।
ডান হাতে তিন কেজি ওজনের টিউমার। দেড় বছর বয়সে হেমানজিওমা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো মুক্তামণি। এর পর থেকে গত আট নয় বছর বহু ডাক্তারের কাছে ঘুরেছেন বলে জানাচ্ছিলেন হোসেন। শিশুদের রক্তনালীর টিউমার হেমানজিওমা খুব একটা জটিল রোগ নয় বলছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু মুক্তামণির ক্ষেত্রে চিকিৎসার অভাবে ডান হাতের টিউমারটি এতটাই বড় হয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যমে তার সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের এক পর্যায়ে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছিলো কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, রোগটি এখন চিকিৎসার ঊর্ধ্বে চলে গেছে।
এরপর বাংলাদেশের চিকিৎসকেরাই তার শরীরে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।
ডিএমসিএইচ এর বার্ন ইউনিটের জাতিয় সমন্বয়ক ডা সামন্ত লাল সেন বলছেন, তাকে সুস্থ করা আরো দীর্ঘ দিনের ব্যাপার কেননা দেরির কারণে তার শরীরের আরো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নষ্ট হয়ে গেছে।
এমনকি আক্রান্ত হাতটি ফেলে দেয়ার আশংকা ছিলো। মুক্তামণি পুরো সেরে উঠবে কিনা সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন বলছিলেন সেন।
তিনি বলছেন, “তার হাতের টিউমারটা সরানো তার চিকিৎসার প্রথম স্টেজ। এখনো অনেকদূর যেতে হবে। অসুখটা শুধু তার হাতে না। হাতের টিউমার একটি বিষয় ছিলো। একদম পার্মানেন্টলি কিউর সে হবে না। তাকে অনেকদিন আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। টিউমার কেটে চামড়া দিয়ে হাত কভার করলেই অসুখটি চলে যাবে তা বলা যাবে না”
তিনি আরো বলছেন, “আমাদের কাছে এই অসুখ নিয়ে অনেকেই আসে। কিন্তু ওকে নিয়ে আসতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে ওর ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে, লিভার বড় হয়ে গেছে। এরকম অনেক সমস্যা আছে।”
কিন্তু তার পরিবার আশা ছাড়ছে না। বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন বলছেন মেয়ের জন্য তিনি সবকিছু করতে প্রস্তুত। মুক্তামণির যমজ বোন হীরামণিও কিছুক্ষণ পর পর তাকে দেখে আসছে আইসিইউতে।
হোসেন জানিয়েছেন, “এখন দু বোনের এক সাথে স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু হীরামণি এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পরে অথচ মুক্তামণির পড়াশোনা এক বছরের মধ্যে শুরু হয়েই শেষ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকতেই তাকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা আল্লার উপর ভরসা রাখছি”
শনিবার (১২ আগস্ট) প্রায় তিন ঘণ্টা যাবত মু্ক্তামণির হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এটি তাকে সারিয়ে তোলার প্রথমদিকের চেষ্টা বলছেন চিকিৎসকেরা।