দিনাজপুরে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী, শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু
---
দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরে বন্যার পানিতে ডুবে একই পরিবারের তিন শিশুসহ ৮জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার জেলার পৃথকস্থানে এসব ঘটনা ঘটে।
এদিকে, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙে গেছে দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধসহ বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ। বাড়ি-ঘর ডুবে গিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষা ও বানভাসী মানুষকে উদ্ধারে ওই এলাকায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, বিকেল সাড়ে ৩টায় কাহারোল উপজেলার ঈশ্বরগ্রাম থেকে কলা গাছের ভেলায় চড়ে পার্শ্ববর্তী বিরল উপজেলার হাসিলা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিন শিশু ও প্রতিবেশীর এক শিশুকে আসছিলেন আবদুর রহমানের স্ত্রী সোনাভান বেগম। এসময় ভেলা উল্টে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়।
এরা হলো- বিরল উপজেলার হাসিলা গ্রামের আবদুর রহমানের মেয়ে চুমকি (১৩), শহিদ আলী (১০) ও সিয়াদ (৭) এবং প্রতিবেশী সাঈদ হোসেনের ছেলে সিহাদ (৭)।
কাহারোল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আলী সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, বিরল উপজেলার মালঝাড় গ্রামের বাবলু রায় বলেন, সকালে বাড়ির মালামাল সরাতে গিয়ে পানিতে ডুবে তার স্ত্রী দিপালী (৪৫) মারা গেছেন। এছাড়া দিনাজপুরে বন্যায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী ঢিবিপাড়া এলাকার এনামুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান (১৫) তলিয়ে যাওয়া রাস্তার পাশে খালে পড়ে এবং সদর উপজেলার মির্জাপুর এলাকার আবদুল গফফারের ছেলে আবু নাইম (১৩) বন্যার পানিতে পড়ে মারা যান। এছাড়া সদর উপজেলার দরবারপুর গ্রামের মেহের আলীর ছেলে চাঁন মিয়া (৫৫) আতঙ্কে বন্যার পানিতে পড়ে যান।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেদোয়ানুর রহিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর, বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা, চিরিরবন্দর ও পার্বতীপুর উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানিবন্দী ও গৃহহীন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাঁধ এলাকায়। দিনাজপুর সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুজ্জামান জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা না হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসী মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নেয়ায় সেগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের তুঁতবাগান এলাকায় দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই নদীর পানি দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেই বাঁধ সংস্কারে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বিজিবি বাঁধটি সংস্কারে ব্যর্থ হওয়ায় দুপুরে বাঁধ সংস্কার এবং বানভাসী মানুষকে উদ্ধারে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। দুপুর থেকে মেজর তৌহিদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা বাঁধ সংস্কার ও বানভাসী মানুষকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে।
বন্যায় দিনাজপুরের অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। হিলি স্থলবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।