দীর্ঘ ডিউটিতে দুর্বল হচ্ছে পুলিশ
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : অতিরিক্ত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। জনবল ঘাটতি থাকায় পুলিশের এ সদস্যদের ১৬-১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হচ্ছে। এতে তারা ক্লান্ত ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। ভবিষ্যতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বড় সংকট দেখা দিলে ক্লান্ত দুর্বল মনোবলসম্পন্ন এ পুলিশ দিয়ে তা মোকাবেলা দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মনে করে ডিএমপি।
পুলিশের ওপর অতিরিক্ত চাপ এবং ক্লান্ত ও দুর্বল হওয়ার তথ্য জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয়, দূতাবাস, কূটনীতিকদের আবাসিক এলাকার পাশাপাশি ঢাকায় বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশী ও বিদেশী ভিভিআইপি, ভিআইপিসহ বিদেশী অতিথিদের নিরাপত্তা বিধান, বিচারপতিদের হাউজ গার্ড প্রদান ও প্রটেকশন বৃদ্ধি, বডিগার্ড প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা বিধান ইত্যাদিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান নৈমিত্তিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করতে হচ্ছে।
জনবল ঘাটতির মধ্যেই এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ডিএমপির অপারেশনাল জনবলের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনদিন নাইট ডিউটি করতে হয়। কয়েক পালায় ডিউটি বণ্টন করে একই ফোর্সকে একাধিকবার ডিউটিতে অর্থাত্ রিপিট ডিউটিতে নিয়োজিত করে ডিএমপির বর্তমান পুলিশ ফোর্সের ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। ঘাটতি মেটানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাড়তি দুই হাজার ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যের চাহিদা পাঠানো হয় জানিয়ে চিঠিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, ওই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ৫০০ আনসার সদস্য ডিএমপির অনুকূলে দেয়া হয়।
মাঠপর্যায়ে কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিরিক্ত ডিউটি ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে নানা সমস্যায় ভুগছেন তারা। ডিউটি চলাকালে অধিকাংশ সময়ই থাকতে হয় দাঁড়িয়ে। তাছাড়া কর্মস্থলে খাবার সংকটের পাশাপাশি রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও।
ওই পুলিশ সদস্যরা আরো জানান, সপ্তাহে তিন রাত নাইট ডিউটির প্রয়োজন হয়। এর বাইরে প্রতিদিনই ১৮ ঘণ্টা রিপিট ডিউটি করতে হয়। এ কারণে পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী সময় দেয়া সম্ভব হয় না।
পুলিশের দীর্ঘ ডিউটির বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তারা কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
অতিরিক্ত ডিউটির পাশাপাশি অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণেও নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ। কর্তব্যরত অবস্থায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৬ সালেই দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ৭৩ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ সদস্য হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া ২০১৫ সালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১১ জন পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে।
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত ২০১৪ ও ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ শতাংশ পুলিশ সদস্য পেপটিক আলসার, ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ ডায়াবেটিস ও ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হৃদরোগে ভুগছেন। এছাড়া ট্রমা অ্যান্ড ফ্র্যাকচারে ৯ শতাংশ, চর্মরোগে ৫ শতাংশ, কিডনিজনিত সমস্যায় ৫ শতাংশ, রেস্পিরেটরি ট্রাক ইনফেকশনে ৪ শতাংশ, লিভার সমস্যায় ৩ শতাংশ, পিএলআইডিতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, ক্যান্সারে ১ দশমিক ৫ শতাংশ ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন ১ দশমিক ৫ শতাংশ পুলিশ সদস্য। এছাড়া ১ শতাংশ পুলিশ সদস্য রয়েছেন, যারা মানসিক নানা সমস্যায় ভুগছেন।
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডা. এমদাদ বলেন, পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত ডিউটি, সময়ের খাবার সময়ে না খাওয়া এবং সময়মতো চিকিৎসা না নেয়ার কারণে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এর মধ্যে আলসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।