সোমবার, ১৯শে জুন, ২০১৭ ইং ৫ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

তিন নম্বর পজিশনে সফল আফতাব-আশরাফুল

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ১৭, ২০১৭
news-image

---

 

স্পোর্টস ডেস্ক :প্রথম ইমরুল কায়েস, পরে সাব্বির রহমান—চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুজনকেই তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে চেষ্টা করিয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। দুজনই ব্যর্থ। পুরো টুর্নামেন্টে ‘নাম্বার থ্রি’ নিয়ে তাই দুশ্চিন্তায় কেটেছে টিম ম্যানেজমেন্টের। কিন্তু তিন নম্বরের সমস্যা বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটাই প্রথম নয়; বরং ওয়ানডেতে সমস্যাটা বাংলাদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে দিনের পর দিন।

ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর জায়গাটা সাধারণত দলের সেরা ব্যাটসম্যানের জন্য বরাদ্দ থাকে। এই সময়ে বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন—সবাই ব্যাটিং করেন তিনে। একটা সময় জায়গাটা ছিল ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, রাহুল দ্রাবিড়, মারভান আতাপাত্তুর মতো কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানদের অধিকারে।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একসময় টেস্টে তিন নম্বরে হাবিবুল বাশার সফল হলেও ওয়ানডেতে জায়গাটা নিয়ে সব সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে, যেটি এখনো হচ্ছে। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৩ ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করেছেন এই পজিশনে। এঁদের মধ্যে যা একটু সফল আফতাব আহমেদ। তিন নম্বরে নেমে তিনিই একমাত্র এক হাজারের বেশি রান করেছেন। এখানে ব্যাটিং করে ৫৪ ম্যাচে আফতাবের রান ১৩০৩। ৫২ ম্যাচে ৯৮৪ রান করে এই তালিকায় দুই নম্বরে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশন একটা দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি বলছিলেন আফতাব, ‘ওপেনার দ্রুত আউট হলে তিন নম্বরের ব্যাটসম্যানকে ওপেনারের ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু এই পজিশনে নামা ব্যাটসম্যানও যদি দ্রুত ফিরে যায়, দল চাপে পড়ে যায়। মিডল অর্ডারকে দ্রুত চাপে না ফেলতে তিনের ব্যাটসম্যানকে ভালো করাটা জরুরি। কোহলিকে দেখেন। উইকেটে থাকছে, ইনিংস লম্বা করছে। আবার শটও খেলছে। দক্ষতা ও ধৈর্যের সমন্বয়ে একজন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান তিনে আমরা দেখছি না।’

তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে ব্যর্থ হলে সেটি ম্যাচের ফলে কতটা প্রভাব পড়তে পারে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ ভালোভাবে সেটি বুঝেছে। সমস্যাটা ভাবাচ্ছে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক হাবিবুলকেও, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ২০১৯ বিশ্বকাপে যেতে হবে। ভবিষ্যতে তিনে কে ব্যাটিং করবে, আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। জাতীয় দলের বাইরেও সমস্যাটা থেকে গেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক ওপেনারের নাম বলতে পারবেন। কিন্তু তিনে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে, এমন কজন ব্যাটসম্যানের নাম বলতে পারবেন? আমরা ওপেনারদের দিয়ে তিন নম্বরের কাজ চালাচ্ছি। এটাই রীতি হয়ে যাচ্ছে।’
তিন নম্বরে নামা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেন সফল হতে পারছেন না, সেটির কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন আফতাব, ‘নতুন বল কীভাবে খেলতে হবে আর সার্কেল কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এই পজিশনে নামা ব্যাটসম্যানের সেটি জানা খুব দরকার। সার্কেল ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই শট খেলতে হবে। তবে অতিরিক্ত শট খেলার লোভটাও সামলাতে হবে। কাল (গত বৃহস্পতিবার) সাব্বিরকে দেখলাম বারবার শট খেলতে চাইছে। আমিও শট খেলতে পছন্দ করতাম। কিন্তু সেটা নিজের জোনে থাকতে হবে। অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।’

প্রশ্ন হচ্ছে, এখন তিন নম্বর পজিশনে কে হবেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সেরা পছন্দ? যদিও বাংলাদেশ কোচ অনেক দিন হলো সাব্বিরকে এখানে থিতু করতে চাইছেন। কিন্তু সাব্বির থিতু হতে পারছেন কোথায়? ১৫ ওয়ানডেতে তিন নম্বরে নেমে তিনি ফিফটি পেয়েছেন মাত্র তিনটি, সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৫ রানের। সাব্বিরের শক্তির জায়গা হচ্ছে শট খেলা। এক-দুই নিয়ে তাঁর স্ট্রাইক বদলাতে না পারার দুর্বলতার কথা সামনে আসছে। কিন্তু তিন নম্বরে আফতাবের পছন্দ সাব্বিরই।

এই ব্যাটিং পজিশনে সাব্বির কীভাবে সফল হতে পারেন, কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন আফতাব, ‘এটা ঠিক, সাব্বির তিনে রান পায়নি। কিন্তু ও এমন ব্যাটসম্যান, উইকেটে থাকলে একাই খেলার ছবি বদলে দিতে পারে। আর তিনে নেমে শট খেলতেই হবে। বৃত্তের মধ্যে খুচরো রান নেওয়া কঠিন। শট যেহেতু খেলতে পারে, তাহলে তাকে ওপরে খেলাতে হবে। সাব্বির যদি আরেকটু পরিণত হয়, শট নির্বাচন আরও নিখুঁত হয়, তার জন্য তিন নম্বর ভালো জায়গা। এখন তাকে জায়গাটার গুরুত্ব বুঝতে হবে।’

কথা সেটাই, জায়গাটার গুরুত্ব যদি ব্যাটসম্যানরা বুঝতেন, তাহলে ‘নাম্বার থ্রি’ নিয়ে এত চিন্তা করতে হতো না বাংলাদেশকে।