বাংলাদেশ বাঘ, ভারত কুকুর! এ নিয়ে তোলপাড় অনলাইন দুনিয়ায়
---
স্পোর্টস ডেস্ক :খেলা নিয়ে নানা মত ও যুক্তি সব সময় ছিলো, আছে, থাকবে। তাই বলে ভারতীয় পত্রিকায় এমন কটাক্ষ করে নিউজ ছাপানোতে ঝড় উঠেছে অনলাইন দুনিয়ায়। তাদের লেখা পত্রিকায় বাংলাদেশী সমর্থকদের উগ্র ও অসুস্থ বলে গালি দেয়া হয়েছে। যা রীতিমত অপমান জনক। খেলা নিয়ে অনলাইনে মজা হবে ফান হবে এটাই তো স্বাভাবিক, কিন্তু ভারতীয় পত্রিকা তা সহ্য করতে পারছে না। তাদের পত্রিকায় লিখেছে:
বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা বরাবরই ‘টাইগার’ হিসেবে চিহ্নিত। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের হলেও, মুক্তিযুদ্ধের আমল থেকেই বাংলাদেশের হয়ে যখন যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁদেরকে ওঁরা টাইগার হিসেবে তুলে ধরেছেন। তো বাংলাদেশের এই টাইগাররা প্রথম একটি বড় প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে ওঠার পর থেকেই গণমাধ্যমে যেভাবে এই প্রাণবন্ত মানুষদের উন্মাদনার ছবি আমরা দেখেছি, তা নতুন নয়। গত ৩–৪ বছর ধরে ক্রিকেট জোয়ারে ভাসতে গিয়ে ওদেশের জনতা সত্যিই তাঁদের ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, আরও এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছেন। আমরাও আনন্দিত বাংলাদেশের এমন উত্থানে।
কিন্তু এমন কিছু উগ্র সমর্থক রয়েছে, যারা অকারণে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ককে কালি ঢেলে দিয়েছে। অতীতে গণমাধ্যমে ভারত–বাংলাদেশ ম্যাচের আগে অধিনায়ক ধোনির কাটা মুন্ডু ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখনও মনে আছে, ভারতকে হারানোর পর গোটা ভারতীয় দলের গ্রুপ ছবিতে ধোনি–কোহলিদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছিল।
কম্পিউটারের কারসাজি! কত কিছুই না আজকাল হয়। কিন্তু এই উগ্র সমর্থকেরা ভুলে যান যে, এর ফলে দু’দেশের সম্পর্কে কাঁটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এই উদ্যোগ। আজ, মঙ্গলবার গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, সেরকমই একটি বিকৃত ছবি। বাঘের গায়ে বাংলাদেশের পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি কুকুরের গায়ে ভারতের জাতীয় পতাকা।
বিশাল এক বাঘ ছোট একটি কুকুরকে তেড়ে যাচ্ছে। সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে এমন ছবি যে সম্প্রীতির সুর নষ্ট করে দেয়, এটা সুস্থ সমর্থকরা আর কবে বুঝতে পারবেন? এ ভারি অন্যায়। এবং যদি বাংলাদেশের অন্য সমর্থকেরা এই উদ্যোগকে আঁস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন, তবে সার্বিকভাবে দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি হবে না।
আদতে এটা যে একটি খেলা এবং সেখানে একদল জেতে, আরেক দল হারে। বাংলাদেশের উন্নতিতে আমি একজন ভারতীয় জানি না, যারা কিনা দুঃখ পাচ্ছেন। তবে কেন এই অন্যায় উদ্যোগ? খেলা চলতেই থাকবে, কিন্তু এই নোংরা খেলা যেন বন্ধ করা হয়।
এদিন সকালে বার্মিংহাম মাঠে পৌঁছে দেখি বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করছেন। তখনই ওদেশের বিখ্যাত ক্রিকেট–লেখক মোস্তাফা মামুদ বললেন, ‘দাদা, আবার কিন্তু শুরু হয়ে গেছে ফেসবুক, টুইটারে উগ্র সমর্থকদের অসভ্যতা।’ শুনে না শোনার ভান করে থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর আবার যখন মোস্তাফা ওই কথাগুলি বললেন, আমাকে বলতেই হল, ‘এ সব ব্যাপার যত তাড়াতাড়ি ছেঁটে ফেলা যায়, তত মঙ্গল।’
মোস্তাফাই শোনালেন সেমিফাইনাল ঘিরে অধিনায়ক মাশরাফি কী দুর্দান্ত সব কথা বলেছেন, ‘বন্ধুগণ, আমার সতীর্থরা এটা নিশ্চয়ই মনে আছে যে, ইংল্যান্ডে এসে অনভ্যস্ত পরিবেশে আমরা সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠব, এটা ভাবিনি। কিন্তু আজ তা বাস্তব। এটা নিয়ে ভেসে যাওয়া ঠিক হবে না। যতটা সম্ভব নিজেদের সংযত রেখে রিল্যাক্স রেখে ভাল খেলার চেষ্টা করে যেতে হবে।’ বিচক্ষণ অধিনায়কের বিচক্ষণ কথাবার্তা।
সাধে কী আর মাশরাফিকে ক্রিকেট দুনিয়া এত পছন্দ করে? বাংলাদেশ ক্রিকেট অধিনায়কের কথাবার্তায় বরাবরই এমন ভাব থাকে, যেখানে তাকে পাওয়া যায় মাটির কাছাকাছি। ভাল খেললেই উগ্র হয়ে যেতে হবে, বিপক্ষকে কটাক্ষ করতে হবে, এই মানসিকতায় কেন উদ্বুদ্ধ করতে পারছেন না সমর্থকেরা?
তাদের এই সব মন্তব্যে চটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমী ভক্তরা।