g তাপদাহে কৃষির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ৬ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২১শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

তাপদাহে কৃষির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ২৭, ২০১৭
news-image

---

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : : রাজধানীসহ সারা দেশে তীব্র তাপদাহ বইছে। শুক্রবার বিকেলে সামান্য বৃষ্টির পর বিভিন্ন স্থানে খরতপ্ত আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এই তাপদাহ বিদায় নেওয়ার পর এর বিরূপ প্রভাব রেখে যাবে। এতে কৃষির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি-আবহাওয়াবিদরা।

তারা বলছেন, এর প্রভাবে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হবে। এ ছাড়া এবার বর্ষা ঋতু কাটবে গরম আবহে। তাপদাহের প্রভাবে এবার পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে কৃষি ও মৎস্যখাতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রভাব পড়তে পারে আমন ও আউস চাষে।

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাওয়া কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর সূর্য রশ্মি পড়ায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে রাজধানীবাসী। শুধু রাজধানীবাসীই নয়, সূর্যের এই তীব্র তাপদাহে পুড়ছে গোটা দেশ। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি পড়ছে। সূর্য কিছুটা সরে গেলে তাপমাত্রা কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

জানা গেছে, কিছু জেলায় কৃষক সেচ দেওয়ার চেষ্টা করলেও মাঠে ফসল পুড়ছে। কিছু জেলায় এরই মধ্যে খরা দেখা দিয়েছে। তবে ওসব অঞ্চলে খরা ধানের জন্য উপকারী। কিন্তু এই দীর্ঘ খরা অব্যাহত থাকলে তিল, মুগ, পাট, ভুট্টা, আম ও লিচুর ক্ষতি হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন। এ ছাড়া তাপদাহে অতিষ্ঠ সারা দেশের জনজীবন, সেইসঙ্গে বেড়েছে রোগ-ব্যাধিও। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকেই। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে তাপদাহের কারণে অনেকটা খরা দেখা দিয়েছে। ‍এর মধ্যে রাজশাহী অন্যতম। রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জেলায় প্রচণ্ড তাপদাহে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষকরা সেচ দিলেও মাঠে ফসল পুড়ছে। এই ধরনের দীর্ঘ খরা কখনই হয়নি বলে দাবি করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উত্তরাঞ্চলের কিছু কিছু জেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে অনেক এলাকায় এখনো মাঠে ধান রয়েছে। ওসব এলাকায় তাপদাহের কারণে মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে ফসলের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জলবায়ুবিদ ও বুয়েট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকেও এমন একটি বৈরি আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা হলে তার অবশ্যই কিছু প্রভাব থাকবে। যেমন, এই অঞ্চলে এবার বর্ষা কম হবে এবং বর্ষা মৌসুমে গরম ভাব থাকবে।

তিনি বলেন, আমাদের পানির উৎসগুলো ঠিক রাখা জরুরি। যেমন, পুকুর, জলাশয় ও নদী স্বাভাবিক নিয়মে থাকলে প্রকৃতি খুব বেশি বিরুদ্ধ আচরণ করে না।

জানা গেছে, দু’মাস আগেই অসময়ে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের হাওর অঞ্চলের বোরো-ইরি আধাপাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসল বানে ভেসে গেছে। এবার যোগ হয়েছে তাপদাহ। এর প্রভাবেও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হবে। কারণ, মাটিতে যে পরিমাণ রস থাকার কথা, তা ফসল পাচ্ছে না এই তাপদাহে। এমনকি আগামী কয়েকদিন বা মাসেও তা পূরণ হবে না। এর প্রভাব ফসলের ওপর পড়বে।

কৃষি আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার বিভিন্ন অঞ্চলে ধানের আবাদের পাশাপাশি অন্যান্য শস্যের ফলনও কমতে পারে। এমনকি পুকুর, বিল, জলাশয়ে পানির পরিমাণ কম থাকলে তা মৎস্যখাতের ওপরেও প্রভাব ফেলবে। তাপদাহের প্রভাবে মাছের উৎপাদন কমতে পারে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার চৈত্র-বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টি বেশি থাকায় গরম বেশি পড়ছে। তীব্র গরমে পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগবালাই বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

তবে গরমের এই প্রভাব বেশি পড়ছে শিশুদের ওপর। গত কয়েকদিন ধরে স্কুলে উপস্থিতি কমেছে। শিশু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, গত দেড় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এই হাসপাতালে অসুস্থ ৮০০ থেকে ৮৫০ শিশুকে আনা হয়েছে। এর অধিকাংশই গরম সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশে মার্চ-জুন মাসে সূর্য খাড়াভাবে আলো দেয়। আকাশে সূর্যের আলোর আধিক্যের কারণ ছাড়াও মেঘমুক্ত আকাশে তাপমাত্রা বেশি থাকে। তবে আজ শনিবার থেকে তাপ কিছুটা কমবে এবং কমার দিকে থাকবে। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ জাতীয় আরও খবর