শুক্রবার, ৫ই মে, ২০১৭ ইং ২২শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সিন্ডিকেটবাজি: ছোলার দাম কেজিতে বাড়লো ১০ টাকা

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ৩০, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সাথে বরাবরের মতো ছোলার দাম বেড়েছে। বাজার দর বিশ্ণেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোলাতে এক লাফে দশ টাকা বেড়েছ। পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি ছোলা ৮৫ টাকা। খুচরা বাজার আরো পাঁচ থেকে সাত টাকা বাড়তি।

প্রতিবারের মতো রমজানের আগে এবারও ছোলার দাম বাড়ার কারণ সাধারণ মানুষ খুঁজে না পেলেও ব্যবসায়ীরা দুটি ‘কারণ’ তুলে ধরেছেন। একটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার বাড়তি দাম এবং অপরটি ডলারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি। তবে কারণ দুইটি সম্প্রতি সামনে আসলেও অধিকাংশ ছোলা আমদানি করা হয়েছে কম বুকিং রেটে। তাহলে এখন দাম বাড়বে কেন? প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ছোলার দাম এখন কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি সাধারণ ক্রেতাদের।

এবার দেশে অস্ট্রেলিয়ান ছোলার দাপট চলছে। অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারতের ছোলা বাজারে নেই বললেই চলে। মিয়ানমারের ছোলা রয়েছে সামান্যই। তবে সবচেয়ে দাম বেশি এ মিয়ানমারের ছোলারই।

বিবার্তার চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই ক্যাটাগরির অস্ট্রেলিয়ান ছোলার মধ্যে ভালমানের ছোলা পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কেজি প্রতি এ ধরনের ছোলার দাম হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকার উপরে। অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২৬৫০ টাকা থেকে ২৭০০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ ৭১ টাকা থেকে ৭২ টাকার উপরে কেজি প্রতি। মিয়ানমারের ছোলা বিক্রি হচ্ছে পাইকারী বাজারে ৩১০০ টাকা মণপ্রতি। এ হিসেবে ৮৩ টাকার উপরে কেজি প্রতি ছোলার দাম পড়ছে।

এদিকে রেয়াজউদ্দিন বাজার ও পাহাড়তলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারী বাজারের তুলনায় পাঁচ থেকে সাত টাকা বেশি দরে ছোলা বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এ হিসেবে খুচরা বাজারে ছোলার দাম কেজি প্রতি ৯০ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পাহাড়তলী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক নেতা মোহাম্মদ মোজাহের জানান, সব পণ্যের দাম সহনীয় রয়েছে। শুধু ছোলার দামে একটু বাড়তি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা বাজারেতো অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। কারণ খুচরা বাজার সব সময়ই পাইকারি বাজারের উপর নির্ভরশীল।

তথ্য অনুযায়ী, রমজানের বাকি আর মাত্র ২৭/২৮ দিন। তবে এক মাস ধরেই ছোলার বাজারে দাম বাড়তি প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। রমজানে ইফতারিতে রোজাদারদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার ছোলা। প্রায় সব পরিবারেই ইফতারির রকমারির আইটেমের মধ্যে ছোলা বুনা থাকে। রোজাদারদের পছন্দের সেই ছোলার চাহিদাকে পুঁজি করে অতিমুনাফার জন্য একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতা সাধারণের। তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি মাসে গড়ে ছোলার চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার মেট্রিক টন। বছরে এক লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা থাকে। তবে রমজানে ছোলার চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ এক মাসেই প্রায় ৫০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন পড়ে। ছোলার মজুদ পর্যাপ্ত থাকলেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে দাবি ক্রেতা সাধারণের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, ২০১৬ সালেই দুই লাখ ৫৩ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে। যা দিয়ে আগামী রমজানের চাহিদাও মেটানো সম্ভব। তারপরেও রমজানকে সামনে রেখে আমদানিকারকরা ছোলার আমদানির এলসি খুলেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫৬ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে। অনেকের ছোলা বন্দরে খালাস অবস্থায় রয়েছে।

রমজান এগিয়ে আসার সাথে সাথে আরো ছোলা বাজারে আসবে। খুচরা দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগেও ছোলার বাজার স্থির ছিল। তখন মানভেদে ৭০-৮০ টাকা কেজিতে ছোলা বিক্রি হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ছোলার শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হচেছ আবুল খায়ের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস। ২০১৬ সালে মোট আমদানিকৃত ছোলার ২২ শতাংশ ছিল স্মাইল ফুডের, দ্বিতীয় স্থানে ছিল খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী জামাল উল্লাহর মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ গ্রুপের সিলভার ফুড প্রোডাক্টস, তৃতীয় স্থানে ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মালেকের মালিকানাধীন লাকি ট্রেডিং, চতুর্থ স্থানে বিএসএম গ্রশুপের রুবি ফুড প্রোডাক্টস ও পঞ্চম স্থানে ছিল গাজী ট্রেডিং, আর ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে পুরান ঢাকার আমদানিকারক এনআর ট্রেডিং। খাতুনগঞ্জের বাজারেও প্রতিষ্ঠানটির ছোলা রয়েছে। এদিকে সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, এখন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক না হলে রমজানের আগে আরো বাড়তে পারে ছোলার দাম।

দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রাজধানীর রহমতগঞ্জের খুচরা ছোলা বিক্রেতা হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে ছোলা ভালোটা বিক্রি করেছি ৮৫ টাকায়। আর একটু খারাপটা ৮০-৮২ টাকা। কিন্তু বুধবার থেকেই হঠাৎ পাইকারি বাজারে ছোলা নেই। আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে।

হঠাৎ করেই ছোলার দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে রাজধানীর রহমতগঞ্জের পাইকারি ছোলা ব্যবসায়ী ও বাজারের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হোসাইন বলেন, পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম ৫ টাকা করে কেজিতে বেড়েছে। গত সপ্তাহে যা ৭৫-৭৬ টাকা ছিলো। এছাড়া গত পাঁচ থেকে ছয় মাস স্থির ছিল পণ্যটির দাম। তখন ৮০ টাকা দরেই বিক্রি হয়েছে। এখন ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবছর রমজানের আগে ছোলার দাম ছিল আরও বেশি। ১০০ টাকায় ছোলা বিক্রি হয়েছিল।

জানা গেছে, ছোলা মূলত বিদেশ থেকে আসে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। তারপর পণ্যটি সারা দেশে সরবরাহ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তারাই মূলত দাম বাড়ান আবার কমান। এছাড়া কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ছোলা আমদানি হয়েছে দুই লাখ ৫৩ হাজার টন। আর চলতি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট ছোলা আমদানি হয়েছে আরও ৫৬ হাজার টন।