সোমবার, ১লা মে, ২০১৭ ইং ১৮ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বারবার একাদশের বাইরে রাখায় মুঠোফোনে যা বললেন সাকিব

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ২৮, ২০১৭

স্পোর্টস ডেস্ক : রাতটা ক্লান্তিতে কেটেছে। খেলা শেষে রাত তিনটায় পুনে থেকে ফ্লাইট ছিল। ভোরে কলকাতায় পৌঁছে দলের সবাই রীতিমতো বিধ্বস্ত। হোটেলে গিয়ে লম্বা ঘুম দিলেন সাকিব আল হাসান।

বিকেলের দিকে যখন মুঠোফোনে পাওয়া গেল, সাকিব বেশ ঝরঝরে। রুমে শুয়ে কী একটা মুভি দেখছিলেন। নায়ক-নায়িকার মিল হচ্ছিল…সেটা জানাতে জানাতেই সাকিবের কণ্ঠে কপট বিরক্তি, ‘ভাই, দারুণ একটা সিনেমা! নায়ক-নায়িকার মিল হবে এখন। পরে কথা বলি…। ’

কথা তারপরও এগোয়। নির্দিষ্ট কোনো পথে নয়। কখনো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, কখনো টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব, কখনো-বা আইপিএল প্রসঙ্গ। না, সাকিব কোনোটা নিয়েই খুব বেশিক্ষণ কথা চালালেন না। কলকাতায় চলে আসাতেই কিনা অলস বিকেলে দেশের গন্ধ পাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর আগ্রহ জাগল দেশের ঝড়-বৃষ্টি নিয়ে, ‘দেশের আবহাওয়া কেমন, বলেন? বৃষ্টি কেমন হচ্ছে…?’ মুঠোফোনের এ প্রান্ত থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ ভেসে গেল কলকাতার পাঁচ তারকা হোটেলে। সাকিবের কৌতূহলও ঘুরে গেল, ‘অনেক গাড়ির শব্দ পাচ্ছি। রাস্তায় অনেক জ্যাম নাকি! জ্যাম কমছে না বাড়ছে..?’

অখণ্ড অবসর মানুষকে হাতছানি দিতে পারে কল্পনার জগৎ, চোখের আড়ালে থাকা ভুবন। এই সুযোগে তাঁর কাছ থেকে কিছু জেনে নেওয়া যেতে পারে! চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এখনো অনেক দূরে। কঠিন তিন প্রতিপক্ষের গ্রুপে পড়াটা সাকিব কীভাবে দেখছেন? সাকিব টার্ন করে বেরিয়ে যান, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যখন আসবে, তখন। ওটা শুরু হতে এক মাসের বেশি বাকি। এখন এসব জেনে কী করবেন!’

ঠিক আছে। তাহলে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি নিয়েই কথা হোক। সাকিব যেমন বৃষ্টি, যানজটের খোঁজখবর নিলেন, এ প্রান্ত থেকেও জানতে চাওয়া হলো, তাঁর জীবনে সর্বসম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে। টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হয়েছেন। সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই কিছু বলবেন। হ্যাঁ, সাকিব বলেছেন। কিন্তু যা বলেছেন, সেটার মর্মোদ্ধার এবং তার বর্ণনা এই ছোট্ট প্রতিবেদন দিতে অক্ষম, ‘এ নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। প্রতিক্রিয়া দেব কীভাবে! আর নতুন করে অধিনায়কত্ব পাওয়াটা কেমন হবে, কী পরিকল্পনা করব, এসব নিয়ে এখনো কিছুই ভাবিনি। আসলেই অধিনায়কত্ব নিয়ে এখনো কিছু ভাবিনি। ’

গল্পের ছলে অল্প কিছু লেখার রসদ জোগাড়ের দু-দুটি সুযোগ হাত ফসকে গেল। বাকি থাকে কেবল আইপিএল প্রসঙ্গ, সাকিবের কাছে যেটা এই মুহূর্তে জীবন্ত বর্তমান। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ষষ্ঠ মৌসুম খেলছেন। তবে এবারই ডাগআউটে বেশি সময় কাটছে। গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে খেলা একমাত্র ম্যাচে শেষ বলে ব্যাট করতে নেমে ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তিন ওভার বল করে ৩১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।

মাঠের বাইরে থেকে আইপিএলটা কেমন লাগল? উত্তর শুনে মনে হলো তিনি বিরাট এক দার্শনিক। কিন্তু শেষ দিকে বুঝিয়ে দিলেন, ওটাও আসলে একটা ‘টার্ন’, শুধু ফ্লাইটটা একটু বেশি দিয়েছিলেন। শুরুতে বললেন, ‘মাঠের বাইরে থাকলে একজন মানুষ খেলাটা কীভাবে দেখে, সেটা নির্ভর করে সে কোন নজরে দেখছে তার ওপর। দর্শকের দৃষ্টিতে দেখলে এক রকম, কোচের দৃষ্টিতে দেখলে এক রকম, খেলোয়াড়ের চোখে দেখলে এক রকম আর বসে থাকা খেলোয়াড়ের দৃষ্টিতে দেখলে আরেক রকম। একেকজনের অভিজ্ঞতা একেক রকম। ’
এরপরই দিলেন সেই বিশাল টার্ন, ‘…আমারও নিশ্চয়ই একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে সেটা বলব না। আমার অভিজ্ঞতা আমার ভেতরই থাক। অভিজ্ঞতাটা যাদের এখনো হয়নি, তারা এই পরিস্থিতিতে পড়লেই সেটা শিখবে। ’

এর মধ্যে হতাশার একটা সুর আছে না? কিন্তু পরের মুহূর্তেই এমনভাবে হেসে উঠলেন, যাতে আর মনেই হলো না আইপিএলে ম্যাচ খেলা হচ্ছে না বলে তাঁর কোনো দুঃখ আছে। উল্টো রসিকতার ছলে এর একটা ভালো দিক বের করতে চাইলেন, ‘এখানে হলিডেতে এসেছি। বিশ্রাম নিচ্ছি…এর চেয়ে মজার কী আছে, বলেন! সময় খুব ভালো কাটছে। ওরাও বলছে, এ বছর তোমার একটু বিশ্রাম দরকার। তাহলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভালো খেলতে পারবে। ’

অতি চালাকের গলায় দড়ি। শেষ কথাটা বলে সাকিবও বাঁধা পড়লেন সেই দড়িতে। কলকাতার অলস বিকেল যতই ভাবালু করুক, আইপিএলের অনাকাঙ্ক্ষিত বিশ্রাম যতই ছড়াক গোপন দহন, দৃষ্টিটা গিয়ে ঠিক পড়ছে দূরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে; যেখানে তাঁর জার্সির রং থাকবে লাল-সবুজ।