সোমবার, ১লা মে, ২০১৭ ইং ১৮ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ধ্বংসাত্মক হামলার ছক আঁটছে জঙ্গিরা

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ২৮, ২০১৭

নিউজ ডেস্ক : র‌্যাব-পুলিশের টানা অভিযানে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ নেতা নিহত ও গ্রেপ্তার হলেও সংগঠনটির পলাতক সদস্যরা এখনো দমেনি। একদিকে শক্তিক্ষয় হচ্ছে, অন্যদিকে সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। টার্গেটে হামলায় ধ্বংসের মাত্রা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে তারা ছোট বোমা থেকে বড় বোমা তৈরিতে ঝুঁকেছে। কীভাবে আরও ধ্বংসাত্মক আক্রমণ চালানো যায় সেই ছক আঁটছে নব্য জেএমবির সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে বোমা নয়, অন্য কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে তারা।

গত শুক্রবার ঝিনাইদহ জেলার পোড়াহাটির জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর পর বিষয়টি আঁচ করতে পারেন পুলিশের কাউন্টার টেররিম বিভাগের সদস্যরা। এ তথ্য পাওয়ার পর বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে। যে কারণে কাউন্টার টেররিজম বিভাগের সদস্যরা যেসব উৎস থেকে নব্য জেএমবির পলাতক সদস্যদের কাছে বিস্ফোরকের উপাদান যাচ্ছে; সেসব উৎসের পেছনে ছুটছেন। পাশাপাশি নতুন নতুন জঙ্গি আস্তানা খুঁজে অভিযানও চালাচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও নব্য জেএমবির বিস্ফোরকদ্রব্যের নানা উপাদানের উৎসের সন্ধান করছে।

পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি বোমা বা হাতে তৈরি গ্রেনেড তৈরি করতে যেসব উপাদান লাগে তা যেসব উৎস থেকে জঙ্গিরা সংগ্রহ করছে তা বন্ধ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি তাদের নতুন সদস্য সংগ্রহের রাস্তাও বন্ধ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, সম্প্রতি অভিযানে নিউ জেএমবির শীর্ষ নেতারা নিহত হয়েছে। এ অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, জঙ্গিরা একটি মতাদর্শ নিয়ে কাজ করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এডিসি সানোয়ার হোসেন বলেছেন, তারা জননিরাপত্তায় ঝুঁকির মাত্রা কমাতে সংঘবদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি তাদের রিক্রুটমেন্ট ও প্রশিক্ষণের রাস্তা বন্ধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কাজ শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।

গত বছর জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় ঈদের দিন জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টানা অভিযানে নব্য ধারার জেএমবির জঙ্গিরা বড় কোনো হামলা চালাতে পারেনি। এ অবস্থার মধ্যেই গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশিকালে পুলিশের দিকে বোমা ছুড়ে ধরা পড়ে ‘নব্য জেএমবির’ দুই জঙ্গি। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে অস্ত্র ও ২৯টি বড় বোমা উদ্ধার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ ছাড়া উদ্ধার করে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম। ১৫ মার্চ সীতাকু-ের আমিরাবাদের এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গি দম্পতিকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরের দিন ১৬ মার্চ একই এলাকার একটি বাড়িতে ১৯ ঘণ্টা অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়। ১৭ মার্চ দুপুরে আশকোনায় র‌্যাবের প্রস্তাবিত সদর দপ্তরে আত্মঘাতী হামলায় এক জঙ্গি নিহত হয়। ২৩ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে ‘আতিয়া মহল’ নামে একটি পাঁচতলা বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার খবর পায় পুলিশ। এর পর পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সোয়াট সদস্যরা। পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল পরদিন ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করেন। উদ্ধার করেন ওই ভবনে আটকে পড়াদের। ওই অভিযানে এক নারীসহ ৪ জঙ্গি নিহত হয়। সেখানে মজুদ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়। ২৪ মার্চ রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোলচত্বরসংলগ্ন পুলিশ বক্সের সামনে ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণে এক জঙ্গি নিহত হয়। ২৫ মার্চ সিলেটে ‘আতিয়া মহলে’ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের অভিযানের মধ্যেই বাইরে পুলিশ চেকপোস্টের কাছে জঙ্গিদের বোমা হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত হন। ঘটনায় আহত র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ পরবর্তীকালে চিকিৎসাধীন নিহত হন। ওই ৭ জন ঘটনার শিকার হন জঙ্গিদের ফেলে যাওয়া একটি বোমা নাড়াচাড়াকালে বিস্ফোরণে।

পরবর্তীকালে মৌলভীবাজারের নাসিরপুরের ফতেহপুর আস্তানায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের অভিযানে ৭ থেকে ৮ জন জঙ্গির ছিন্নভিন্ন মরদেহ পায় পুলিশ। নিহতদের মধ্যে ৪ জন ছিল শিশু। শিশুদের মধ্যে আবার ১ জন ছিল প্রশিক্ষিত জঙ্গি। সব মিলিয়ে এই আস্তানায় ৫ জন প্রশিক্ষিত জঙ্গি আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয়। এদের মধ্যে জঙ্গি দম্পতি বাথরুমে গিয়ে আত্মঘাতী হয়।

কুমিল্লার কোর্টবাড়ির আস্তানাও ধ্বংস করে দেয় পুলিশ। ওই আস্তানায় থাকা জঙ্গিরা পুলিশ ঘেরাও করার আগেই পালিয়ে যায়। তবে ওই আস্তানায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য পায় পুলিশ, যা ধ্বংস করা হয়। গত শুক্রবার ঝিনাইদহ জেলার পোড়াহাটির জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করে। উদ্ধার করে সুইসাইডাল ভেস্ট ও আগ্নেয়াস্ত্র। ওই আস্তানায় ২০টি ড্রামে মজুদ করা হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, যা দিয়ে শক্তিশালী মারণাস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছিল জঙ্গিরা। এ ছাড়া ওই আস্তানা থেকে এমন কিছু ডকুমেন্ট পুলিশ উদ্ধার করেছে, যা তাদের ভাবিয়ে তোলে। তবে নিবিড় তদন্ত ছাড়া এ ব্যাপারে এখনই মুখ খুলতে নারাজ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের সদস্যরা।

জানা গেছে, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর কয়েক মাস টানা র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে নব্য ধারার জেএমবি একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা হারাতে থাকে। এ ছাড়া হারায় প্রশিক্ষিত জনবল। অভিযানের মধ্যেই তারা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। ছোট থেকে বড় আকারের বোমা বানিয়ে আস্তানাও ভরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কুমিল্লার একটি ঘটনায় তাদের গোপন পরিকল্পনার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে চলে যায়। এর পর একের পর এক আস্তানায় অভিযান শুরু হয়। গত মার্চ মাসে নব্য জেএমবির অন্তত ১৮ জন প্রশিক্ষিত জঙ্গি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান এবং আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয়। মজুদ করা গোলাবারুদের একটি বড় অংশ ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া নব্য জেএমবি ৬টি গুরুত্বপূর্ণ আস্তানাও হারায়। দৈনিক অামাদের সময়

এ জাতীয় আরও খবর