আসাদবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়ার ইঙ্গিত ব্রিটেনের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন শহরে রাসায়নিক হামলার ঘটনায় দেশটিতে আসাদবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে পারে ব্রিটেন। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের এক মন্তব্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। বিবিসি রেডিও ফোর’কে তিনি বলেছেন, রাসায়নিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় আসাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানে যোগ দিতে আগ্রহী ব্রিটেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটেনের সহায়তা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা খুবই কঠিন। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত নয়। আমি প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর মতামতই তুলে ধরলাম।
সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন শহরে রাসায়নিক হামলার ঘটনায় প্রথম থেকেই বাশার আল আসাদকে দায়ী করেছে ব্রিটেন। চলতি এপ্রিলের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘সব তথ্যপ্রমাণ’ এটাই বলছে যে এ হামলার নেপথ্যে রয়েছেন বাশার আল আসাদ। তিনি বারবার নিজ দেশের জনগণের ওপর অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছেন।’
বরিস জনসন বলেন, যে ভয়ঙ্কর রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটেছে সেটা উপেক্ষা করা আমাদের জন্য অসম্ভব।
ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা সানডে টেলিগ্রাফে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বরিস জনসন বলেছেন, আসাদের মিত্র মস্কোর এখনও সময় আছে সঠিক পক্ষ অবলম্বনের। আসাদ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন; কারণ তারা (সিরীয় সরকার) শুধু যে ভয়ঙ্কর ও বাছবিচারহীন তা নয়। তারা আতঙ্কজনকও। এই ক্ষেত্রে তিনি নিজেই সন্ত্রাসীদের কারিগর। তিনি প্রতিশোধপরায়ণ। ফলে সিরিয়ার জনগণকে তার শাসন করার আশা করা উচিত নয়।
বরিস জনসন বলেন, আসাদ আক্ষরিক অর্থেই বিষাক্ত। এই বিষয়টি এখন রাশিয়ার অনুধাবন করা উচিত। সঠিক পক্ষাবলম্বনের সময় এখনও রাশিয়ার রয়েছে।
৪ এপ্রিল সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল ইদলিবে এ রাসায়নিক গ্যাস হামলা সংঘটিত হয়। ২০১৩ সালের আগস্টে সারিন গ্যাস হামলার অভিযোগ ওঠার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ রাসায়নিক হামলা। আসাদবিরোধী বিদ্রোহীরা এই হামলায় সরকারি বাহিনী ও রাশিয়াকে দায়ী করেছে। তবে নিজেদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিরিয়া ও রাশিয়া।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইদলিব। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আসাদ বাহিনী আলেপ্পো শহর ও দামেস্কের আশেপাশের এলাকা দখল করে নিলে হাজার হাজার বিদ্রোহী যোদ্ধা ইদলিবে আশ্রয় নেয়। আর সে কারণে ইদলিবের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়ে গেছে।
ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ওই হামলায় অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২০ শিশুও রয়েছে। হামলার পর ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আক্রান্তরা শ্বাস নিতে পারছেন না, মুর্ছা যাচ্ছেন এবং তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, আক্রান্তরা যখন চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, তখনও সেখানে বিমান হামলা চালানো হয়। কয়েকজন আক্রান্তকে তুরস্কে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীর ভাষায়, ‘আমরা বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছি। আমরা দাঁড়াতেও পারছি না। আমার মাথা ঘুরছে, দুর্বল লাগছে। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছি না।’
মেডিক্যাল সূত্রকে উদ্ধৃত করে সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, হামলার কারণে অনেকের শ্বাসরুদ্ধ হয়, কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, কারও কারও আবার মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে আসে। ওই মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে, এটি রাসায়নিক গ্যাস হামলা ছিল বলে আলামত মিলেছে। সূত্র: বিবিসি।