সোমবার, ১লা মে, ২০১৭ ইং ১৮ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সাজেকে চালের কেজি ১৩০ টাকা!

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ২৭, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন সাজেকের বিভিন্ন গ্রামে এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়।

অবিশ্বাস্য এই খবরটি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সাজেক ঘুরে এসে পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক লিখেছেন, ”প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমের আগ থেকেই এসব এলাকায় স্থানীয় খাদ্যের সংকট বাড়তে থাকে। আর যদি জুমের ফলন প্রত্যাশিত না হয় তাহলে তো দুঃখের কোন সীমা থাকে না।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ”বেটলিং, লংকর, নিউ লংকর, থলছড়া, জপ্প্যিতাং, উদোলছড়ি, সাজেক ছড়া…এগুলো সাজেকের সীমান্তবর্তী দুর্গম গ্রাম। যেখানে পৌঁছতে রুইলুই পর্যটন স্পট থেকে পায়ে হাঁটা পথে দেড় থেকে দুই দিন লেগে যায়। এমন অভাবের দিনে মাচলং বাজার থেকে ৪৫ টাকায় কেনা এক কেজি চাল বেটলিং পৌঁছাতে খরচ পড়ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সেই চাল দরিদ্র মানুষের ঘরে পৌঁছাচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। এই অবিশ্বাস্য ঘটনা গত কয়েক মাস ধরেই বিদ্যমান আছে সাজেক ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামে। … স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ও কার্বারীদের মতে, সাজেক ইউনিয়নের ৪০ থেকে ৪৫টি গ্রামে এই অবস্থা বিরাজ করছে।”

কজতলী পাড়ার কার্বারী কালাচাঁন ত্রিপুরার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ”সাজেক ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষই বনজ সম্পদ আহরণ ও জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। অনেক আগেই বনজ সম্পদ শেষ হয়ে গেছে। পানির উৎসও কমে যাচ্ছে ক্রমশ। জুমে ফলনও হয় না আগের মতো। ফলে জীবন নির্বাহের কঠিন এক সংগ্রামের দ্বারপ্রান্তে দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা।”

এতে আরো বলা হয়, ”ইউপি সদস্য দেবজ্যোতি চাকমা বলেন, দেশ স্বাধীনের সাড়ে পাঁচ দশক পরও সাজেকে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ এবং স্যানিটেশনের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়াদি এখনো স্বপ্নের মতো।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ”বাঘাইহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সংবাদকর্মী মো. জুয়েল জানান, সাজেকে তিনটি বাজারেই এখন ক্রেতাশূন্য। কারণ দুর্গম এলাকার মানুষরা বেশ কয়েক বছর ধরেই জুমে ভালো ফলন পাচ্ছেন না। অপরদিকে যোগাযোগ দুর্গমতার কারণে উৎপাদিত যৎসামান্য পণ্যও হাটে-বাজারে আনতে পারছেন না। ফলে পণ্য বিণিময়ের যে প্রথা ছিল সেটিও অচল হয়ে পড়ায় সীমাহীন সংকটে পড়েছেন দুর্গম এলাকার প্রান্তিক মানুষ।”

এতে বলা হয়, ”বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আলো’র নির্বাহী পরিচালক এবং সাজেকের রুইলুইয়ে বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম রিসোর্ট নির্মাতা অরুণ কান্তি চাকমা দাবি করেন, সাময়িক রেশনিং দিয়ে এই সমস্যার সমাধান মিলবে না। বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাসরত প্রান্তিক মানুষদের জীবন-সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন কৌশল ছাড়া রাতারাতি কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

এতে বলা হয়, ”তিনি এই সমস্যার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এলাকার মানুষদের স্থায়িত্বশীল ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এসব এলাকায় কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা গেলে ভালো। তাছাড়া বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ অবকাঠামোও জরুরি।”

পত্রিকাটি জানায়, ”সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন বলেন, গত দুয়েক মাস হতে সাজেকের প্রায় ৫০টি গ্রামের দুই হাজারের অধিক পরিবারে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বারবার বিষয়টি তুলেছি এবং দুই মাস আগে ৬শ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোন সাড়া মিলেনি।”

প্রতিবেদক লিখেছেন, ”পরিস্থিতি সামাল দিতে এরিমধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজস্ব অর্থায়নে গত শনিবার (২২ এপ্রিল) ১৬ গ্রামের ৪১০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও অবস্থার খুব পরিবর্তন ঘটেনি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ”বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এবিষয়ে আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছি।”

এ জাতীয় আরও খবর