বুধবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০১৭ ইং ১৩ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

চার দিন আমার হানিমুন হয় স্বামীর বসের সঙ্গে!

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ৩, ২০১৭

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ জানিয়েছেন নিজের জীবনের অত্যন্ত করুন এক কাহিনী। তাঁর বিশাল চিঠি সংক্ষেপে তুলে দিলাম আমরা।

“আমি জানিনা কোথা থেকে শুরু করবো বা কীভাবে বলবো। আমার কথা আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা তাও জানিনা। কিন্তু হাতজোড় করছি, প্লিজ আমার চিঠিটা পড়বেন। পড়ে একটা সমাধান দিবেন। আমি খুব সমস্যায় আছি বোন। দুনিয়ায় এমন কেউ নাই যে আমাকে বাঁচাবে। আপনি প্লিজ আমাকে একটা রাস্তা দেখান। আমি বাঁচতে চাই। আমার নামটা আমি উল্লেখ করতে চাই না।

আমার বিয়ে হয় ২ বছর আগে। প্রেমের বিয়ে। ফ্যামিলি প্রথমে মানতে না চাইলেও পরে মেনে নেয়। খুব ধুমধাম করেই আমাদের বিয়ে হয়। এখানে একটা কথা বলে রাখি যে বিয়ের আগে আমাদের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। বিয়ের সময় আমার বয়স ২৩, স্বামীর ২৯। ও অনেক ভালো একটা চাকরি করতো (এখনো করে)।

বিয়ের পরদিন আমরা হানিমুন করতে কক্সবাজার যাই। সেখান থেকেই শুরু হয় কাহিনী। আমরা বিকালে কক্সবাজার গিয়ে পৌছাই, রাতেই আমাদের হোটেলের সুইটে একজন আসে। লোকটাকে আমার স্বামী সোজা আমাদের রুমে নিয়ে আসে, বলে যে ওর বস। ওরা দুইজনে মিলে মদও খায়। আমি জানতাম না যে ও মদ খায়, আমি খুব ঘাবড়ায় যাই।
যাই হোক, একটা সময় স্বামী আমাকে বলে ওই লোকটার সাথে বেডরুমে যেতে, লোকটা যা বলে করতে!! আমি ভয়ে কাঁদতে শুরু করি, বলি যে আমি এখনোই বাসায় ফোন করে বলে দিব। তখন স্বামী আমাকে মারধোর করে। আর বলে যে বিয়ের আগে আমাদের যতবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, সব ভিডিও ওর কাছে আছে। আমি যদি কথার অবাধ্য হই, ও সবগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে।

সে আমাকে মোবাইলে কিছু ছবিও দেখায়। আমি জানিনা এগুলো সে কখন আর কীভাবে তুলেছে। আমি যখন কিছুতেই রাজি হই না, তখন স্বামী আমাকে আরও মারে। বাধ্য হয়ে আমাকে রাজি হতে হয়। ৪ দিন আমরা কক্সবাজার ছিলাম। ৪ দিনই ওই লোকটার সাথে আমাকে থাকতে হয়। আমার হানিমুন হয় ওই লোকের সাথে!

এরপর আমরা ঢাকায় ফিরে আসি। স্বামী আমাকে হুমকি দিয়ে রাখে যে কাউকে কিছু বললেই আমার সর্বনাশ করে দিবে। সব ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে, সমাজের সামনে আমাকে বেশ্যা বানায় ছাড়বে। আমার মা বাবাকে এমন সব কথা বলবে যে তাঁরা সহ্য করতে না পেরে মরে যাবে।

সমাজের সামনে আমার পরিবারকে বেইজ্জত করে দিবে। বিশ্বাস করবেন না আপু, শুধু এই ভয়ে আমি এতদিন চুপ ছিলাম। শুধু মা বাবার ভয়ে। সমাজের ভয়ে। কক্সবাজারের ঘটনার পর থেকে এখনো একই রকম ঘটে যাচ্ছে আমার জীবনে। কখনো তাঁর কোন বস আসে, কখনো তাঁর কোন ক্লায়েন্ট, কখনো তাঁর কোন ফ্রেন্ড। স্বামী কখনো আমাকে স্পর্শ করে না, শুনেছি তাঁর আরেকটি মেয়ের সাথে প্রেম আছে। স্বামী আমাকে আক্ষরিক অর্থেই বিক্রি করে দিয়েছে আপু!
সে আমাকে বিক্রি করে তাঁর কাজ হাসিল করে, নতুন ক্লায়েন্ট পায়। একবার সে আমাকে এমন এক জঘন্য কাজ করতে বাধ্য করেছে যে আমি ভাষায় প্রকাশও করতেও পারছি না। আমি কিছু বলতে গেলেই সে আমাকে মারে। প্রচণ্ড মারে।
আমি লেখাপড়া শেষ করতে পারি নি। প্রেমে অন্ধ হয়ে বিয়ে করেছিলাম। আমার শ্বশুর শাশুড়ি কেউ বেঁচে নেই। একজন ভাসুর ও ননাস আছেন, তাঁরা কুমিল্লা থাকেন। যাই হোক, কিছুদিন আগে ভাগ্য আমার একটু সহায় হয়। ও যখন আমাকে মারধোর করছিল, এমন সময়ে আমার ভাই বাসায় চলে আসে। ভাইয়া প্রচণ্ড রেগে আমাকে ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তখন আমার স্বামীর সাথে ভাইয়ার একটু হাতাহাতিও হয়। এইটা ১ মাস আগের ঘটনা। ভাইয়া আমাকে আর ওই বাসায় ফিরতে দেয় না। আমি জানাই যে স্বামী আমাকে নিয়মিত মারধোর করে (পতিতা বৃত্তি করায়, সেইটা গোপন রাখি)। ফ্যামিলির সবাই আমাকে জোর করে তালাক দেয়ার জন্য। আমিও রাজি হই। তালাকের সাথে ওর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলাও করা হয়।
এখন ও আমাকে হুমকি দিচ্ছে, ও ভিডিও গুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে। আমার পরিবারের মান সম্মান শেষ করে দিবে। আমি যদি কেস সরিয়ে না নিই সে সবার সামনে প্রমাণ করে দিবে আমি পতিতা। ওর কাছে নাকি সব প্রমাণ আছে। আমি এখন কী করবো? প্রতিদিন মনে হয় আত্মহত্যা করি। কী পাপ করেছিলাম আমি?”
পরামর্শ:
আমি বুঝতে পারছি না কী বলব আপু, আমি রীতিমত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি। এটা কেমন সমাজে বাস করছি আমরা? কোন সমাজে বাস করছি? চারদিকে কেবল জানোয়ারের মত মানুষ! আবেগের বশে বিয়ে আর বিয়ে আগেই সারিরিক সম্পর্কে জড়ানোর পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে, আপনি যেন সেটারই উদাহরন।
যাই হোক আপু, যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। ভাগ্যক্রমে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেয়ে গেছেন আপনি। এবং আপনার পরিবার আপনাকে পুরো সাপোর্ট করছে, এটাই সবচাইতে বড় আশার কথা। প্রথম কথা হচ্ছে, মামলা মোটেও তুলে নেবেন না। এমন নরপশুদের সাজা হওয়া খুবই জরুরী। দ্বিতীয়ত, মা বাবাকে বলতে না পারেন, কিন্ত বড় ভাইকে সব কিছু খুলে বলুন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁর সম্পূর্ণ ব্যাপারটা জেনে রাখা জরুরী। কেন আপনি এমন করতে বাধ্য হয়েছেন, সবই বুঝিয়ে বলুন তাঁকে। আপনারা একজন ভালো আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। এমন পরিস্থিতিতে কী করা যেতে পারে সেটা আইনজীবী ভালো বলতে পারেন।
একইসাথে নির্যাতিত নারীদের সাহায্য করার বেশ কিছু সংস্থা আছে, যারা আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে, সেসব স্থানেও যোগাযোগ করতে পারেন। দুষ্টু প্রকৃতির লোকেরা কাপুরুষ ধরণের হয়। তাঁর হুমকিতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাবেন না।
আমি আপনার স্থানে হলে হয়তো সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর বিদেশে পারি জমাবার কথা ভাবতাম। নতুন স্থানে নতুন করে জীবন শুরু করতাম। অতীত ভুলে গিয়ে আবার শুরু করতে নতুন স্থানের বিকল্প নেই।
একটাই অনুরোধ আপু, হার মানবেন না। সৃষ্টিকর্তা আপনার সহায় হোন।