চারিদিকে অরাজকতা, বেকায়দায় ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার পর তো বটেই, এমনকী হিসেবে শপথ নেবার পরও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন, কখনো প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জেরবার হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ”ভালোই” বেকায়দায় আছেন ট্রাম্প। সেই বেকায়দাপুরাণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছে জার্মান বেতার ডয়চে ভেলে :
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প টিমের সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতসহ একাধিক মহলের যোগসূত্র নিয়ে পানি ঘোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ট্রাম্পের জাতীয় উপদেষ্টা পদ থেকে মাইকেল ফ্লিনকে বিদায় নিতে হয়েছে, একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা। বেকায়দা আর কাকে বলে!
ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা
কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণের ওপর তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প। আদালতের হস্তক্ষেপে প্রথম নির্বাহী আদেশটি বাতিল হয়। এরপর আরো একটি আদেশ দেন ট্রাম্প। সেটিও থামিয়ে দিয়েছে আদালত।
স্বাস্থ্য বীমা বিপর্যয়
পূর্বসূরী বারাক ওবামার আমলে স্বাস্থ্য বীমা খাতে যে সংস্কার (ওবামাকেয়ার) চালানো হয়েছিল, তা বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নিজ দল রিপাবলিকান দলেরই একটা অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিকল্প আইনের বিরোধিতা করায় এ যাত্রায় ব্যর্থ হন ট্রাম্প। তবে বেকায়দায় পড়েও হাল ছাড়তে রাজি নন ট্রাম্প।
স্বজনপোষণ
প্রচলিত বিধিনিয়ম উপেক্ষা করে জামাতা ও মেয়েকে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার পদ দিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমালোচকদের মতে, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাত এক্ষেত্রে অনিবার্য। অবৈতনিক ফেডারেল কর্মী হিসেবে তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যেরও নাগাল পেতে পারেন।
পরিবেশের ক্ষতি
বহু বছর দরকষাকষির পর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেই ঐকমত্যের পেছনে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প পরিবেশের ক্ষতি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ক্ষমতার অহমিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বার বার ‘একলা চলো’ নিয়মে চলার চেষ্টা করছেন। চটজলদি সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি। নিজের মন্ত্রিসভা তো নয়ই, এমনকি রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেও আলোচনা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন তিনি। এই অবস্থায় প্রশাসনের ভেতর থেকেই অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনে অরাজকতা
একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে প্রশাসনের কাঠামোর মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতি বা বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতার অভাব বার বার প্রকট হয়ে উঠছে। এমনকি খোদ ট্রাম্প অনেক বিষয় পুরোপুরি না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এমন অরাজক পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছে ট্রাম্প প্রশাসন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় অরাজকতা আরো ব্যাপক হচ্ছে।
জনপ্রিয়তার অভাব
সাম্প্রতিককালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যকালের প্রথম পর্যায়ে জনমত সমীক্ষায় এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হননইয়। এমনকি রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করছে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে।