ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একমাত্র ফারুকী পার্কটি অবেহলিত! নেই কোন রক্ষণা-বেক্ষণ
---
তৌহিদুর রহামন নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে কোমলমতি শিশুদের বিনোদনের জন্য নেই তেমন কোন ব্যবস্থা। আর প্রাপ্ত বয়স্কদের হাটাচলা ও বিনোদনের জন্য নূন্যতম কোন ব্যাস্থাও নেই এই শহরে। ১৯৬৫-৬৬ সালে (সম্ভবত) তৎকালীণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহুকুমার প্রশাসক আর,আর ফারুকী সরকারী খাস ভূমির উপর পার্কটি নির্মাণ করেন। তারপর ১৯৮৪-৮৫ সালে ব্রিগেডিয়ার আ,ম.সা আমিন পার্কটির ভিতর একটি স্মৃতিসৌধ নির্মানের উদ্যোগ নেন। স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। কালের বিবর্তনে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জেলার শহরবাসীর জন্য নির্মিত এই পার্কটি রক্ষণা-বেক্ষনের অভাবে তেমন কোন কাজে লাগেনি। পার্কটির মধ্যে শিশুদের খেলার জন্য সামান্য কিছু খেলা-ধূলার সরাঞ্জাম থাকলেও সেগুলোও এখন অনেকটাই ভঙ্গুর অবস্থায় পরে আছে।
পার্কটির পার্শ্ববর্তী রয়েছে পার্ক জামে মসজিদ, জেলা গ্রন্থাগার, তারই গা ঘেঁষে রয়েছে বড় একটি দীঘিও। ঠিক অপরপাশে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অফিসার্স ক্লাব, প্রথত শ্রেনীর কর্মকর্তাদের স্টাফ কোয়ার্টার। পার্কের সড়কের অপর পাশে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপারের বাসভবন এবং খ্রীষ্টিয়ান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পুরো জেলার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও মাঝে মাঝে ছোটখাট সংস্কার কাজ ছাড়া পার্কটি উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পার্কটির ভিতরে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে টেনিস কোর্ট। তার কাটা দ্বারা পুরো টেনিস কোর্টটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। আর সেটি পার্কের মূল অংশের অনেকটাই জায়গা দখল করে আছে।
সরজমিনে দেখা যায়, সারাদিন আশপাশের মহল্লার উঠতি বয়সী বখাটেদের বিভিন্ন অপকর্মের নিরাপদ স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছে স্থানটিকে। স্কুল কলেজের পোশাক পিরিহিত ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পড়াশোনর ফাঁকি দিয়ে অনেকটা বেহায়াপনা বেশে সারাক্ষণ আড্ডা দিচ্ছে। আর এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর মাদকব্যবসায়ী নারী ও পুরুষেরা তাদের লেবাশ পরিবর্তন করে মাদক বিক্রীর কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
সকাল থেকেই শহর ও শহরের আশপাশ থেকে অনেক মেয়েরা (যারা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত) তারা তাদের পেশাগত খদ্দেরকে ধরার জন্য নিরাপদ স্থান হিসাবে শিশু-কিশোরদের বিনোদনের এই পার্কটিকে অনেকটাই দখল করে আছে। সে সাথে রয়েছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম। তারা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত নারীদের পুজি করে অনেকটা সুকৌশলে পার্কে ঘুরতে আসা বিনোদনমূখর মানুষদের বিপাকে ফেলছে। সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা পয়সাসহ অনেক কিছু। রাতে অন্ধকারে নয় বরং দিনের আলোতেই চলছে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। কথা হয় খ্রীষ্টিয়ান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীর বাবা জাহাঙ্গীর মিয়ার সাথে তিনি বলেন আমরা সন্তানদের বিদ্যারয়ে পড়াশোনা করাই সে সুশিক্ষায় মানুষ হওয়ার জন্য। কিন্তু সকাল বেলা স্কুল ব্যাগ হাতে পার্কের ভিতর দিয়ে হেটে যেতে গিয়ে সে তার চোখের সামনে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়দের কথাবর্তা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও বেহায়াপনা দেখছে তখন মাঝে মাঝে আমাকে প্রশ্ন করে বাবা এরা এইরকম করে কেন তখন আমরাও লজ্জায় পরে যাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইনুর রহমান জানান, যদি কোন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে পার্কের ভিতর আড্ডা দেয় তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরো বলেন বিগত দিনেও অভিযান চালিয়ে আমার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িযার ফরুকী পার্কটি অবশ্যই রক্ষণা-বেক্ষণ করা হবে। তার ভিতরে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। স্মৃতিসৌধটি সৌন্দর্য আরো বাড়ানোর জন্য আমারা খুব শীঘ্রই আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। সে সাথে তিনি বলেন, পার্কটির রক্ষণা-বেক্ষণসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।