সোমবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৪শে মাঘ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

যোগ‌্যদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে চান প্রধানমন্ত্রী

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষকতা পেশার জন্য একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি করণীয় নির্ধারণে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষা বিষয়ক ‘এসডিজি-৪’ লক্ষ্য অর্জনের কার্যকর কৌশল নির্ধারণে ই-নাইন মন্ত্রী পর্যায়ের একাদশ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

যোগ‌্য ব্যক্তিদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে নীতিগত উপায় উদ্ভাবন এবং বিশেষ প্রণোদনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন সরকারপ্রধান। তিনি এই পেশার জন্য একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং সশস্ত্র সংঘাত বিশ্বে মানবাধিকার, শান্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হিসাবে দেখা দিয়েছে। উদ্ভাবন, সমঝোতা ও দূরদর্শী নীতির মাধ‌্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা উপকরণের সংস্কার করছে।

রোববার সকালে ঢাকার হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে তিন দিনব্যাপী ই-নাইন মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এবারই প্রথম এ সম্মেলন হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাতে দুই বছরের জন্য এই ফোরমের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাকিস্তানের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ বালিঘ-উর-রহমান গত দুই বছর ই-নাইনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

পারস্পরিক যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে ইউনেস্কোর সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া এবং দ্রুততার সঙ্গে সামষ্টিক সাফল্য অর্জনের লক্ষ্য দিয়ে ১৯৯৩ সালে ভারতের নয়া দিল্লিতে ই-নাইন গঠিত হয়। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা অধ্যুষিত নয়টি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্যগুলোকে নিয়ে এই সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও ব্রাজিল, চীন, মিশর, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়া এ ফোরামের সদস্য। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো এক বা একাধিকবার এই ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ ফোরামের সভাপতি হওয়ায় বক্তব্যের শুরুতেই তাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার বিভিন্নতা থাকলেও পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহিষ্ণুতা এবং বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিতে শিক্ষা সেতুবন্ধ হিসাবে কাজ করতে পারে।

ই-নাইনের এই বৈঠক ‘মাইলফলক হিসাবে’ চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আরও বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিশ্বের জন্য একটি টেকসই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ভবিষ্যত নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই বৈঠক প্রয়োজনীয় সুযোগ চিহ্নিত এবং কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।

২০১০ সালে বাংলাদেশে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেশকিছু কৌশলগত নীতি এবং উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি কর্মসূচি ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন গোষ্ঠী ও অন্যান্য পশ্চাদপদ শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ বরাদ্দ, সামাজিকভাবে অনগ্রসরদের অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যক্তিখাত ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করতে বৃত্তি কর্মসূচির সম্প্রসারণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সর্বজনীনতা নিশ্চিত করার উদ‌্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।

শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে এবং ভর্তির হার বৃদ্ধি করতে ইতোমধ্যে এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “শিশুদের শৈশবে মাতৃভাষায় শেখার অধিকারের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক বই প্রকাশ করছি।

তিনি জানান, এর ফলে ২০১৬ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০১১ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৭ শতাংশ। বছরের প্রথমদিন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণও এই সাফল্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে আমরা ২ দশমিক দুই পাঁচ বিলিয়ন পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এটা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বই বিতরণ কার্যক্রম।”

শিক্ষা সামাজিক অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা কমায় এবং তাদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করে মন্তব‌্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন মেয়েরাই বেশী স্কুলে যাচ্ছে।”

স্যানিটেশন, সুপেয় পানি, পরিচ্ছন্নতা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্য ও শিখন ফলাফলের ওপর এর একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

পাশাপাশি বিদ্যালয়ে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে পাঠদান শিক্ষাকে সহজ করবে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাবে এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের খাপ খাওয়াতে সাহায্য করবে বলে তিনি মন্তব‌্য করেন।

এসডিজি বাস্তবায়নে ই-নাইন বৈঠক থেকে সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী সুপারিশমালা আসবে- এমন আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার প্রত্যাশা, আমাদের সর্বোত্তম কর্মোদ্যোগগুলোর বিনিময়, কর্মপরিকল্পনা এবং কর্মসূচি প্রণয়ন, অংশীদারিত্বের নতুন উপায় উদ্ভাবন এবং শিক্ষার উপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংলাপ আহ্বান এই বৈঠক থেকেই শুরু হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, ইইনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা। তার আগে ই-নাইনের নতুন সভাপতি নরুল ইসলাম নাহিদ বক্তব্য দেন।

এছাড়া পাকিস্তানের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ বালিঘ-উর-রহমান ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত দশম বৈঠকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।