বুধবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৬শে মাঘ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিন্নীর বঈশ (মহিষ)

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭

বিশেষ প্রতিনিধি : ইদন আর বাবুল পেশা তাদের দিনমুজুর। কিন্তু বছরের এই সময়টা তারা গ্রামে গ্রামে সিন্নীর বইশ নিয়ে হাঁটে । গেল সপ্তাহে আমার সাথে দেখ হল সিন্নীর বইশসহ। গ্রাম ওয়ারু,থানা নবীনগর, জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমরা নবীনগর থেকে মটর সাইকেল যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছি। বিলের মাঝখান দিয়ে তৈরি সরু রাস্তায় দেখা মিলল বাবুল আর ইদনের সাথে। ধূলায় মাখামাখি। গ্রামের পর গ্রাম সিন্নীর বইশ নিয়ে হেটে বেড়ানো ওদের পেশার অংশ।

সিন্নীর বইশ মানেটা কি? এই মহিষটি কেনা হয়েছে করিম শাহ’র মাজারে ওরস উপলক্ষ্যে। ওরসের দিন এটি জবাই করা হবে। এটি ছাড়াও আর একটি মহিষ কেনা হয়েছে। দুইটি মহিষ সাজিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের তাদের গ্রাম ভাগ করে দিয়েছেন। তারা মহিষ নিয়ে গ্রামে গ্রামে যায়। বাড়ি বাড়ি থেকে চাল, টাকা সংগ্রহ করে।
আর এর বিনিময়ে তারা দৈনিক কিছু টাকা পায়। টাকা চেয়ে বড় পরী-আউলিয়ার দোয়া । বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা এক মুঠো চাল ওরসের দিন হাজার হাজার মানুষের খাবারের জোগান হবে। কতদূর দূর থেকে মানুষ আসে এই করিম শাহ্’র মাজারে। বাবুল-ইদনের মুখে তৃপ্তির ছাপ।
আমি বললাম বাবুল ভাই আমাদের যেতে হবে। আমাদের এই শহুরে জীবনে তৃপ্তি নেই, আছে ক্লান্তি । শুধুই আছে ছুটে চলা। যন্ত্র আর আমাদের মাঝে কাগজ কলমে পাথ্যর্ক যাই থাকুক না কেন। আমি বলি পাথ্যর্ক নেই। আমরা যেখানে এখনো শুধুই নিজের কথা সেখানে বাবুল-ইদনরা মাইলের পর মাইল পাড়ি দিচ্ছে হাজার মানুষের একবেলার সংগ্রহের জন্য। আর তাই তাদের ক্লান্তি নেই, আছে শুধুই তৃপ্তি।
আপনি কি কখনো সিন্নীর বইশ দেখেছেন? শুনেছেন রাত জেগে পালা-গান?
নবীনগর, নাসিরনগর, আখাউড়া, কসবা, সরাইলসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কিছু স্থানে এই মৌসুসে দেখা পেতে পারেন শিন্নীর বইস কিংবা বাবুল-ইদনদের। হয়তবা বুঝতে পারবেন জীবনমানে শুধুই আমি আর তুমি নয়।
জীবন আমরা হতে পারে, চারপাশের মানুষগুলো নিয়ে আমরা।