হতাশ হাথুরুসিংহে
স্পোর্টস ডেস্ক : প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।ফলাফলের দিক থেকে নিষ্ফলা নিউজিল্যান্ড সফর। মাসব্যাপী সফরে কোনও জয় না পাওয়ায় খুবই হতাশ বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরু সিংহে। যদিও বিরূপ পরিবেশে খেলেও বাংলাদেশ দল এখানকার ভেন্যুতে ভেন্যুতে তার লড়াই করার সামর্থ্য দেখিয়েছে। যেখানে ইতিবাচক দিকগুলোও খুঁজে নিচ্ছেন প্রধান কোচ।
কোচ মনে করেন দলের তরুণ বোলাররা নিউজিল্যান্ড সফর থেকে যে অভিজ্ঞতা নিয়ে যাচ্ছে তা আগামীতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বোলিং আক্রমণ উন্নয়নে বেশ কাজে দেবে।
মঙ্গলবার দুপুরে ক্রাইস্টচার্চের টিম হোটেলের বাইরে বাংলাদেশি মিডিয়ার কাছে বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফরের ভালোমন্দের সালতামামি বলছিলেন হাথুরুসিংহে। এখানে বাংলাদেশ দল কোনও ম্যাচ জিততে পারেনি। যেটি কোচ হিসাবে তারজন্যে খুবই হতাশার। কিন্তু ইতিবাচক হলো ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশ জয়ের সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছিল প্রতিটি ম্যাচে।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল সব দায় স্বীকার করে বলেছেন দলের পরাজয়ের দায়-দায়িত্ব তার। এরজন্যে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। এর প্রেক্ষিতেই হাথুরু প্রথমে মনে করেছিলেন তামিম তার ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু তামিম দলের পরাজয়ের দায়দায়িত্ব নিয়েছেন শুনলে কোচ বলেন, ‘প্রথম কথা হলো একজন ক্যাপ্টেন দায়দায়িত্ব স্বীকার করছেন এটি আরেকটি ভালো সূচনা। এখান থেকে আমরা আরেকটি নতুন যাত্রা শুরু করতে পারি। দ্বিতীয়ত হলো শুধু দায়দায়িত্ব স্বীকার করলেই চলবে না। সংশোধনের কাজও তাদেরকে করতে হবে।’
পুরো নিউজিল্যান্ড সফরকে কি শুধু সুযোগ সৃষ্টি আর সুযোগ হারানোর সফর বলা চলে? এতসব চমৎকার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারাটা কতটা বেদনার? এটি কতটা হতাশার? এমন প্রশ্নে হাথুরুর জবাব, ‘সৎভাবে বলতে গেলে এটি খুবই হতাশার। কারণ দল যদি খারাপ খেলতো তাহলে এক কথা ছিল।’ তাহলে এর কারণ কি খেলোয়াড়দের মানসিক বাধা? হাথুরু বলেন, ‘মানসিক সমস্যা একটি সমস্যা। এটি আমরা চিহ্নিত করেছি। আরও কিছু সমস্যা আছে।’
তাহলে ক্রাইস্টচার্চের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যা করেছে এর ব্যাখ্যা কী? বাংলাদেশের কোচ বলেন, ‘ব্যাটসম্যানদের প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুরো সফরজুড়ে বড় একটি সমস্যা ছিল। দলের খেলোয়াড় সবাই হয়তো এখন মানসিক-শারীরিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী না। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের বোলাররা খুবই ভালো বল করেছেন। কিন্তু এটি কোনও অজুহাত নয়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘বাংলাদেশের এ দলটিই দেশে খুব ভালো একটি দল। এরা দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলছে। কাজেই খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা মানসিক-শারীরিক বা অন্য কোনও কারণে হতে পারে। কিন্তু আমি খুশী এ কারণে যে পুরো সিরিজে আমরা আমাদের শক্তিমত্তা দেখাতে পেরেছি। এরজন্যেই এ দলটির ওপর মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। খেলোয়াড়দেরও তাদের প্রতি প্রত্যাশার ফল দেখানো উচিত।’
সামনে বাংলাদেশ দলের আরও অনেক খেলা। এ অবস্থায় খেলোয়াড়দের প্রতি আপনার উপদেশ কী? হাথুরুর জবাব, ‘খেলোয়াড়রা তাদের ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এটি একটি ভালো সূচনা। দীর্ঘদিন পর আমরা বিদেশে খেলতে এসেছি। এই পরিবেশে এসে খেলোয়াড়রা অনেক কিছু শিখেছে। শুধুমাত্র বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে দল হেরেছে এই অভিযোগ আমি করবো না। এসব খেলারই অংশ। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে দলের তরুণ বোলিং আক্রমণশক্তি প্রতিপক্ষের সমকক্ষ ছিল না।’
বোলারদের নিয়ে কোচ আরও বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে এসে তরুণ বোলারদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আগামীতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী করার কাজে লাগবে। কারণ তারা এখানে দ্রুত শেখার পাশাপাশি নিজেদের ভুলগুলো সংশোধনও করেছে। এই অভিজ্ঞতা বোলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।’
বিশেষ করে এক্ষেত্রে কামরুল ইসলাম রাব্বী ও মেহেদী হাসান মিরাজের কথা কোচ বিশেষ করে উল্লেখ করেন। কোচ বলেন, ‘এই দু’জন এর আগে প্রথম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঢাকা টেস্টে খেলেছে। এখানে এসে তারা খেলেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে। এখান থেকে তারা নানাকিছু খুব তাড়াতাড়ি শিখেছে। এটা তাদের শারীরিকভাবেও চ্যালেঞ্জিং ছিল। বাংলাদেশের এই খেলোয়াড়রা হয়তো এভাবে বিদেশে খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু ঘরোয়া লিগে তারা বিরতিহীন খেলেছে। খেলোয়াড়দের অনেকের হয়তো এখন শারীরিক-মানসিক বিশ্রাম দরকার।’
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে কামরুল ইসলাম রাব্বীর ব্যাটিং’য়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন হাথুরু সিংহে। স্বীকৃত এই পেসার সম্পর্কে কোচ বলেন, ‘৬৩ বল খেলে টিকে থেকে অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যানকে সমর্থন দেওয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫ ঝড়ো রান করে অপরাজিত থাকার মাধ্যমে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাব্বী।’
সামনে ভারতের সঙ্গে খেলা আছে। এরপর শ্রীলঙ্কা সফরসহ আরও অনেক খেলা। খেলোয়াড়দের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ কোথায়? এ কথা জিজ্ঞেস করলে কোচ বলেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে খেলোয়াড় যারা বিশ্রাম চায় তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হবে। শারীরিক সামর্থ্য বাড়াতে যারা আরও অনুশীলন চায় সে ব্যবস্থাও করা হবে।’
তামিম-সাকিব দেশের বাইরের লিগেও খেলেন। এক্ষেত্রে তাদের ব্যাপারে করণীয় জানতে চাইলে কোচ বলেন, ‘তারা পেশাদার খেলোয়াড়। তাদের বিষয়গুলো দেখার যোগ্যতা-সামর্থ্য তারা নিজেরাই রাখেন।’
মুস্তাফিজ প্রসঙ্গে কোচ বলেন, ‘সে মেডিক্যালি ক্লিয়ার। কিন্তু সে নিজের ফিটনেস নিয়ে যে অনাস্থায় ভুগছে তা থেকে উত্তরণের কাজ তারা করে যাচ্ছেন।’