হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সিতে প্রতিদিন সেবা পাবেন আট হাজার যাত্রী
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : হাতিরঝিলে চালু হয়েছে ওয়াটার ট্যাক্সিহাতিরঝিলে সদ্য চালু হওয়া ওয়াটার ট্যাক্সিতে প্রতিদিন সেবা নিতে পারবেন গড়ে আট হাজার যাত্রী। এতে সড়কপথে যাত্রীদের চাপ কমবে। পাশাপাশি রাজধানীর ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তৈরি হবে ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ। এছাড়া ওয়াটার ট্যাক্সির অত্যাধুনিক ডিজাইন ও কখনও ডুবে না যাওয়ার নিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিবে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের নির্ভরতা। হাতিরঝিল লেক ঘিরে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি এই ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস সবার কাছে বিনোদন যাত্রার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে হাতিরঝিলে চালু হয়েছে নতুন এই ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস। চারটি ট্যাক্সি নিয়ে শুরু হওয়া সেবার উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এই বহরে আগামী জানুয়ারিতেই যুক্ত হবে আরও দু’টি ওয়াটার ট্যাক্সি। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পরে ওয়াটার ট্যাক্সির সংখ্যা ২০ থেকে ২৫টিতে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছে এর পরিচালনা কোম্পানি করিম গ্রুপ। হাতিরঝিল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাজউকের তত্ত্বাবধানে আগামী ২০ বছর এই সেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই করিম গ্রুপকে। তারাই টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে যাত্রী পরিবহনের সব সেবা দেবে সাধারণ যাত্রীদের।
করিম গ্রুপের পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম শাহ আলম বলেন, ‘প্রতিটি ট্যাক্সির ধারণক্ষমতা ধরা হয়েছে ৩০ জন। সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে সেবা চালু থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত। দিনে ১৬ ঘণ্টা সেবা প্রদান করা হবে। একটি ট্যাক্সি ঘণ্টায় ১২০ জন যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে। ১৬ ঘণ্টা করে ৪টি ট্যাক্সি একদিনে প্রায় আট হাজার যাত্রী সেবা দিতে সক্ষম হবে।’
প্রতিটি ওয়াটার ট্যাক্সির ধারণক্ষমতা ৩০ জনওয়াটার ট্যাক্সি কোন কোন স্টপেজে থামবে ও যাত্রী ভাড়া কত হবে জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘পরিকল্পা অনুযায়ী ছয়টি স্থানকে যাত্রী ওঠানামার স্টপেজ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে এখন চারটি স্টপেজ সেবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এগুলো হলো- এফডিসি মোড়, মেরুল বাড্ডা, গুলশান-১ ও রামপুরা। পরবর্তী সময়ে পুলিশ প্লাজা ও মগবাজারে আরও দু’টি স্টপেজ চালু করা হবে।’ শাহ আলম জানান, এফডিসি থেকে রামপুরা, মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত ২৫ টাকা ও এফডিসি থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত ৩০টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে এই ভাড়ার হার নতুন করে নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি রাজধানীতে ভ্রমণ পিপাসুদের নৌকা ভ্রমণের স্বাদ এই ট্যাক্সি সার্ভিস কিছুটা হলেও মেটাতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘অত্যাধুনিক ডিজাইনে তৈরি এই ট্যাক্সিগুলো খোলামেলা। ভিতরে বসেই চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে অনায়াসে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুই পাড়ের ভাঙনরোধে সেগুলো সক্ষমতার থেকে বেশ কম গতিতে চলবে। ফলে যাত্রীরা হাতিরঝিলের দু’পাশের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার অনুভব করতে পারবেন তারা।’
তবে লেকের পানির দুর্গন্ধ এই নান্দনিক সেবায় কিছুটা হলেও ছন্দপতন ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন হাতিরঝিল হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা সাধারণ যাত্রীরা। এফডিসি মোড় হয়ে হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে গুলশান-১ অফিস করেন বেসরকারি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পচা পানির গন্ধ নাকে লাগে। এখন শীতকাল বলে রোদের তেজ নেই। কিন্তু তীব্র রোদে পানি থেকে গন্ধ ছড়ালে ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাতায়াত করা মুশকিল হবে।’
নতুন প্রতিটি ট্যাক্সি নির্মাণে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক মেজর কাজী শাকিল। তিনি বলেন, ‘যাত্রীসেবার পাশাপাশি আগতদের কিছুটা বিনোদিত করতে এই সেবা চালু করা হয়েছে। আশা করি সবাই এতে উপকৃত হবেন।’
সদ্য চালু হওয়া ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো দুর্ঘটনার শিকার হলেও সেগুলো কখনই পানিতে তলিয়ে যাবে না বলে জানিয়েছেন এসব ট্যাক্সির নির্মাতা কোম্পানি ‘তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডে’র জেনারেল ম্যানেজার লে. কমান্ডার তাজুল ইসলাম মজুমদার (অব.)। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ওয়াটার ট্যাক্সিগুলোর বডি অন্য যেকোনও বোটের তুলনায় দশগুণ দীর্ঘস্থায়ী। অত্যাধুনিক ডিজাইনে ফাইবার দিয়ে তৈরি ট্যাক্সিগুলো কখনই পানিতে তলিয়ে যাবে না। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এই বোটগুলোতে।’
লেকে চলার সময় যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে করিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে এই সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। একটি ট্যাক্সির সঙ্গে অপর ট্যাক্সি ও কাউন্টারে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্তরা ওয়াকিটকির মাধ্যমে যোগাযোগ করবে। কোনও জরুরি প্রয়োজনে আমাদের রেসকিউ টিম থাকবে, তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে। এছাড়া হাতিরঝিল এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রেড ফোর্সের সদস্যরা তো থাকছেনই। তারাও আমাদের সহযোগিতা করবেন।’
হাতিরঝিল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে আরও একটি নতুন থানা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস উদ্বোধনের সময় তিনি বলেন, ‘এই এলাকার নিরপত্তা বাড়াতে এরই মধ্যে একটি নতুন থানা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। থানার চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই এলাকার নিরাপত্তা যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’