যে রানীর পাসপোর্ট লাগে না
পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ আছেন যার গাড়ি চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং চলাফেরা করতে পাসপোর্ট লাগে না। তিনি বিনা পাসপোর্টে বিশ্বের বহু দেশে ঘুরতে পারেন। আমরা তার কথা জানলেও হয়তো তার ক্ষমতা সম্পর্কে জানি না। এ মানুষটি হলেন ব্রিটেনের দ্বিতীয় রানী এলিজাবেথ। তার এমন কিছু ক্ষমতা আছে যা শুনলে চোখ কপালে উঠবে। ক্ষমতাগুলো অনেকের কাছে অদ্ভুতও মনে হতে পারে। রানীর সেই ক্ষমতাগুলো নিয়ে আজকের আয়োজন।
* টেমস নদীর মুক্ত পানিতে যেসব হাঁস ঘুরে বেড়ায় তা সব রানীর। তথ্যটি উঠে এসেছে যখন এই হাঁসগুলো মানুষ ধরতে শুরু করেছে।
* রানী গোটা জলধারা এবং জলজ প্রাণীর মালিক। রানীর অধীনে আছে তিমি, ডলফিন এবং অন্যান্য প্রাণী। এই নিয়ম ১৩২৪ সাল থেকে কার্যকর। কিং এডওয়ার্ড দ্বিতীয়ের আমল তখন। জলজ প্রাণী নিধন বন্ধে এ নিয়মের প্রয়োগ ঘটে।
* ব্রিটেনের একমাত্র রানীই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে পারেন। রেজিস্ট্রেশন নম্বরও প্রয়োজন নেই তার গাড়িতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এলিজাবেথ ড্রাইভিং শিখেছেন। লাইসেন্স না থাকলেও গাড়ি চালাতে দারুণ পারদর্শী তিনি।
* রানীর পাসপোর্টও নেই। রাজপরিবারের সদস্য হওয়াতে তার নাগরিকত্বের প্রমাণ রাখার প্রয়োজন নেই। এটি ছাড়াই তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরতে পারেন।
* রানীর ব্যক্তিগত কবি আছেন। ব্রিটিশ সোসাইটির মাধ্যমে রাজকবির নিয়োগ দেন। এই কবির কার্যক্রম জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার বাৎসরিক বেতন ২০০ পাউন্ড। সঙ্গে এক পিপে ক্যানারি ওয়াইন বোনাস।
* আইনের খসড়াকে সত্যিকার আইনে পরিণত করতে রানীর স্বাক্ষর প্রয়োজন। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে কোনো আইন পাস হওয়ার পর তা বাস্তবিক আইনে রূপ নিতে রানীর স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়।
* ব্রিটেনের উচ্চকক্ষে লর্ড নিয়োগের ক্ষমতা আছে রানীর। তবে এই ব্যক্তিকে মনোনীত করতে নির্বাচিত মন্ত্রীদের পরামর্শ নিতে হয়।
* রানীকে ট্যাক্স প্রদান করতে হয় না।
* আগে রানী বর্তমান পার্লামেন্ট বাতিল করে নতুন নির্বাচনের আদেশ দিতে পারতেন। তবে ২০১১ সাল থেকে এ কাজটি করতে হাউজ অব কমন্সের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন পড়ে।
* বীর নাইটরা আগের মতো ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে না বেড়ালেও এখনও তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। রানী যাদের লর্ডস মনোনীত করেন, তাদের নাইট বানিয়ে নেন ব্যক্তিগতভাবে।
* রাজপরিবারের কোনো তথ্য চেয়ে কেউ অনুরোধ করলে তা দেয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। এটি হয় দ্য গার্ডিয়ান এবং সরকারের মধ্যে এক আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে তথ্য দেয়া হয় গার্ডিয়ানকে। তার মানে এই নয়, এটি ভবিষ্যতে আবারও হতে পারে।
* ‘গ্রেভ কনস্টিটিউশনাল ক্রাইসিস’ পরিস্থিতিতে রানী মন্ত্রীদের পরামর্শ না শুনেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দেয়া হলেও বিষয়টির অস্তিত্ব রয়েছে।
* অস্ট্রেলিয়ার হেড অব স্টেট হওয়ার কারণে সে দেশের সরকারপ্রধানকে বরখাস্ত করতে পারেন রানী। ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়া অবস্থানরত রানীর প্রতিনিধি স্যার জন কের সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন। একই ক্ষমতাবলে রানী যেসব দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিগা, বারবুডা, বাহামাস, বারবাডোস, কানাডা, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেইন্ট লুসিয়া, সেইন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, সলোমন আইল্যান্ডস এবং টুভালু হেড অব স্টেট।
* ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান কুইন এলিজাবেথ দ্বিতীয়। তার টাইটেলটি হল ‘ডিফেন্ডার অব দ্য ফেইথ অ্যান্ড সুপ্রিম গভর্নর অব দ্য চার্চ অব ইংল্যান্ড’।
* প্রতিবছর রানী যে বয়সে পা রাখেন, সে কয়টি বিশেষ সিলভার কয়েন পেনশনভোগীদের প্রদান করেন ইস্টারে আয়োজিত বিশেষ আয়োজনে।
* এ যুগে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও রানী আইনের উর্ধে এবং তিনি আদালতে কোনো প্রমাণপত্র জমা দিতে বাধ্য নন।