নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার থেকে মুক্ত হওয়ার পর অসুস্থ স্ত্রীর পাশে থাকতে ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে লন্ডনে গেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ইতিমধ্যে ছুটি শেষ হয়েছে। তবে তিনি এখনো দেশে ফেরেননি। সৈয়দ আশরাফ কবে দেশে ফিরছেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে কৌতুহল ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
সৈয়দ আশরাফ কবে দেশে ফিরবেন, এ বিষয়ে জানতে তার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাজ্জাদ আলম শাহীনের মুঠোফোনে কল করলে তা ডাইভার্ট হয়ে যায়। এর আগে সাজ্জাদ আলম জানিয়েছিলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী অসুস্থ। স্ত্রীকে দেখতেই লন্ডনে গেছেন তিনি।
এ বিষয়ে আর বিস্তারিত বলতে চাননি সাজ্জাদ আলম শাহীন।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ আশরাফ লন্ডনে যাওয়ার আগে এক মাসের আগাম ছুটি নিয়েছেন।
লন্ডনে থাকায় আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির প্রথম সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আশরাফ।
গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফের স্থলাভিষিক্ত হন আগের কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গত ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, লন্ডনে স্ত্রী শীলার সেবা-শুশ্রুষায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সৈয়দ আশরাফ। সেদিন তিনি সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফ ও তার স্ত্রী শীলার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা শেষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে মাহবুবুল হক শাকিল লেখেন, ‘এইমাত্র লন্ডনে ফোনে কথা হলো সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আর শীলা ভাবীর সাথে। একটি বড় সার্জারির ধকল শেষে ভাবী ভালো আছেন, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। আশরাফ ভাই ব্যস্ত উনার সার্বক্ষণিক পরিচর্যায়।’
৪ নভেম্বর অপর এক স্ট্যাটাসে মাহবুবুল হক শাকিল বলেন, ‘প্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদেরের প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল। আমার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে উনি বারবার চেষ্টা করেছেন আশরাফ ভাইয়ের সাথে কথা বলতে। শীলা ভাবীর চিকিৎসার সর্বশেষ খবর নিতে। দিনশেষে এটাই আওয়ামী লীগ, একটি পরিবার। আমি গর্বিত, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান।’
গত বছর মন্ত্রণালয় বদল হওয়ার পর আলোচনায় এসেছিলেন সৈয়দ আশরাফ। তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে আলোচনা-সমালোচনা ও গুঞ্জনকে পাত্তা না দিয়ে সৈয়দ আশরাফ দল ও সরকারে তৎপর হয়ে ওঠেন।
তার আগে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে ঈদ করতে যুক্তরাজ্য যান সৈয়দ আশরাফ। সেখানে দীর্ঘ সময় ছুটি কাটান তিনি। তখনও তার দেশে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন ও কানাঘুষা হয়। ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন তিনি। ৪ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে দেশে না ফেরায় ঘনিষ্ঠদের মধ্যে ফের আলোচনা শুরু হয়। ৪১ দিন পর ৩১ অক্টোবর দেশে ফেরেন সৈয়দ আশরাফ।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুই কেন্দ্রীয় নেতার কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে অসম্মতি জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন। পরে কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। টানা দুই মেয়াদে সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর এবার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন সৈয়দ আশরাফ।