১৭ই নভেম্বর, ২০১৬ ইং, বৃহস্পতিবার ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


প্রস্তুতি ছাড়াই একের পর এক নতুন বিভা


Amaderbrahmanbaria.com : - ১৪.১১.২০১৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৭ বছরে ১৫টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট চালু হয়েছে, খোলার অপেক্ষায় আছে আরও ২টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া ৩টি ভাষাশিক্ষা কোর্সসহ ৪টি বিভাগে চালু হয়েছে স্নাতক সম্মান শ্রেণি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও একের পর এক এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, নতুন বিভাগ বা কোর্স খোলার ব্যাপারে বিভাগগুলোর ওপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চাপ রয়েছে। এমনকি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনের বিষয়টিও।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যোগ্য শিক্ষকের সংকট ও অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দ নিয়ে বিভাগগুলোর কাজ চলছে ধীরগতিতে। তা ছাড়া পাঠদানের শ্রেণিকক্ষ এবং লেখাপড়ার পরিবেশও পর্যাপ্ত নয়। নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট খোলার সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা ও দল ভারী করার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদা ও আধুনিকতার সঙ্গে মিল রেখে বিভাগগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে গত ৭ বছরে ৮২ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া অন্য বিভাগ থেকে অন্তত ১ জন করে শিক্ষক নতুন বিভাগগুলোতে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেওয়ায় আরও অন্তত ১৭টি পদ শূন্য হয়েছে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের এসব শূন্য পদের বিপরীতে অন্তত ২ জন করে (বেশিও আছেন) নতুন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন-পুরোনো বিভাগে মোট ৩৯৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নতুন বিভাগ, কোর্স ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ২২

২০০৯ সাল থেকে চালু হওয়া নতুন বিভাগগুলো হচ্ছে নৃত্যকলা, ফলিত গণিত, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগ, অপরাধবিজ্ঞান, যোগাযোগ বৈকল্য, মুদ্রণ ও প্রকাশনাবিদ্যা, এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি, নিউক্লিয়ার প্রকৌশল, সমুদ্রবিজ্ঞান, দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, ফার্মেসি, রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগ এবং আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগ। এ ছাড়া খোলার অপেক্ষায় রয়েছে ভূমিবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

একই সময়ের মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধীন ইংরেজি, জাপানি ও চীনা ভাষা শিক্ষার কোর্সে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণি খোলা হয়েছে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগেও স্নাতক শ্রেণি খোলা হয়েছে। চালু হয়েছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি ইনস্টিটিউট এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট।

প্রশাসনিক ভবন সূত্র জানায়, ১৯২১ সালে ৩টি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ২টি নতুন অনুষদ ও ৫টি বিভাগ খোলা হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে নতুন বিভাগ হয় ২৫টি। ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৮টি বিভাগ হয়। ১৯৯০ সালের পর থেকে বিভাগ খোলার সংখ্যা তুলনামূলক বাড়তে থাকে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদে ৮৩টি বিভাগ ও ১১টি স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট রয়েছে।

গত ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার নির্দেশিকায় তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ২৫টি আসনের কথা লেখা ছিল। কিন্তু ভর্তি-ইচ্ছুকদের আবেদনের শেষ সময় পর্যন্ত (৭ সেপ্টেম্বর) ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশিকায় বিভাগটির উল্লেখ ছিল না। ২ অক্টোবর নতুন করে দেওয়া নির্দেশিকায় বিভাগটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বরাবর লেখা এক পত্রে বিভাগের চেয়ারম্যান লিখেছেন, নির্দেশিকায় ভর্তির আসনসংখ্যা ও যোগ্যতার তথ্যগুলো বিভাগ থেকে পাঠানো হয়নি। এটি একাডেমিক কমিটির এখতিয়ারভুক্ত। কী প্রক্রিয়ায় এসব তথ্য সংযোজন করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন চেয়ারম্যান। বিভাগের একাডেমিক কমিটি ও সিঅ্যান্ডডি (উন্নয়ন ও সমন্বয়) কমিটিও এ বছর সম্মান শ্রেণি খোলার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।

এ ব্যাপারে বিভাগের চেয়ারম্যান আরশাদ মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে সম্মান শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের নেই। শিক্ষকের সংখ্যা, জনবল ও শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে।’

ক ইউনিটের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে বিভাগের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এখানে কেন এমন মতভেদ হচ্ছে, সেটি জানার চেষ্টা করা হবে।

গত ২২ আগস্ট অনলাইনে ভর্তির আবেদন কার্যক্রম শুরুর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বছর ১৪৫টি আসন বাড়ানোর কথা বলা হয়। খ ইউনিটের আসনসংখ্যা নির্ধারিত হয় ২ হাজার ২৪১টি। ২৬ সেপ্টেম্বর ফলাফল প্রকাশের দিন জানানো হয়, আসনসংখ্যা ২ হাজার ৩৩৩। কোন কোন বিভাগে এই ৯২টি আসন বাড়ানো হয়েছে জানতে চাইলে খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বলেন, নতুন কয়েকটি বিভাগে কিছু আসন বাড়ানো হয়েছে।

এরই মধ্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর ইউজিসি একটি পরিপত্র জারি করে। এতে লেখা ছিল, ইউজিসির পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার বা কোর্স খোলা ও জনবল নিয়োগ এবং শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এসবের দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে। ইউজিসির একটি সূত্র জানায়, এই পরিপত্র জারি করার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভূমিকা ছিল।

বিভাগ খুলেই দলীয় মতাদর্শের শিক্ষক নিয়োগ

২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের সময় ১৫টি বিভাগ খোলা হয়। এ কে আজাদ চৌধুরী (’৯৬-২০০১) ও এস এম এ ফায়েজ (২০০২-০৯) সাতটি করে বিভাগের অনুমোদন দিয়েছেন। মনিরুজ্জামান মিঞা (’৯০-৯২) দুটি এবং এমাজউদ্দীন আহমদের সময়ে (’৯২-৯৬) তিনটি নতুন বিভাগ খোলা হয়।

এ প্রসঙ্গে একাধিক প্রবীণ শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, যখন থেকে দলীয় মতাদর্শের শিক্ষক নিয়োগ শুরু হলো, তখন থেকেই নতুন বিভাগ খোলার প্রবণতা বাড়ছে। নতুন বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রকারান্তরে সরকারদলীয় ভোটার বাড়ানো হয়। উপাচার্য প্যানেলসহ অন্যান্য নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়ে।

নতুন বিভাগ খোলার জন্য লিখিত কোনো নীতিমালা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ও ইউজিসির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো একটি বিভাগের একাডেমিক কমিটি নতুন কোনো বিভাগের জন্য প্রস্তাব করতে পারে। প্রস্তাবটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে সবার মতামত সাপেক্ষে চূড়ান্ত হলে সেটি ইউজিসিতে পাঠানো হয়। ইউজিসি যদি মনে করে বিভাগটি অনুমোদন পাওয়ার যোগ্য, তবে তা অনুমোদন দেয়। তবে নতুন বিভাগ খোলার ‘যোগ্যতা’ নিরূপণ করার কোনো মাপকাঠি ইউজিসির নেই।

অভিযোগ আছে, কয়েকটি নতুন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা ঠিকভাবে মানা হয়নি। শিক্ষক নিয়োগে আবেদনকারীর যোগ্যতা হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫-এর মধ্যে ন্যূনতম ৪.২৫ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫০ বা প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে বলে উল্লেখ থাকে। কিন্তু একাধিক বিভাগে সেটি মানা হয়নি।

মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগে চারজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কেউই বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত যোগ্যতার শর্ত পূরণ করেননি। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকদের মধ্যে দুজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৭০ পেয়েছেন। অপর দুজন স্নাতক সম্মানে সিজিপিএ-৩.৪৫ ও ৩.৪৭ পেয়েছেন। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত একজন প্রার্থীর স্নাতকোত্তরে ছিল ৩ দশমিক ৩৩। তিনিসহ আরও একজনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ছিল না।

যোগাযোগ করা হলে ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। একাডেমিক কাউন্সিলে প্রায় সব জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের উপস্থিতিতে বিষয়টি অনুমোদন পায়। এরপর সিন্ডিকেট কিংবা ইউজিসির কিছু বলার থাকে না। ইউজিসির ছোট একটি কমিটি প্রস্তাব এলে নতুন বিভাগের জন্য অর্থ, জনবল নিয়োগ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়। তিনি জানান, নতুন জনবলের জন্য পদ সৃষ্টি করে দেওয়া ইউজিসির কাজ। কিন্তু সেখানে কাকে নিয়োগ করা হবে, তা দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যাতে পিছিয়ে পড়তে না হয়, সে জন্যই বিভাগগুলো খোলা হয়েছে। এর সঙ্গে আর কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

অবকাঠামোর অভাব

নতুন বিভাগগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার পর কোনো বিভাগের অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া তথা শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের বসার জায়গা, বিভাগের কার্যালয়, পাঠাগার, গবেষণাগার স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে শুরুতেই আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হয় বিভাগগুলোকে। একাধিক নতুন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, অনেক সময় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখান থেকে নিজস্ব অর্থায়নে বিভাগের অন্য কাজগুলো করার চেষ্টা করা হয়।

টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগ চালুর পর বছরে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়, খুব সম্প্রতি খোলা বিভাগগুলোতে কেবল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরে যন্ত্রপাতি কেনা কিংবা পাঠাগারের জন্য বরাদ্দ নেই। এই খাতে দু-এক বছরের পুরোনো বিভাগের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৪-৫ লাখ টাকা।

নতুন বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় নতুন বিভাগগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্য বিভাগের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে হচ্ছে। শিক্ষকদের বসার জায়গারও সংকট রয়েছে। অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুই দফা এ নিয়ে আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন।

উপাচার্য এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন একাডেমিক ভবন করারও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত জমি না থাকায় পুরোনো কোনো ভবন ভেঙে উঁচু ভবন করার চেষ্টা হচ্ছে। কলা ভবনেরও সংস্কার করা হচ্ছে।

নতুন বিভাগ খোলার যৌক্তিকতা

১৯৬৪ সালে হওয়া ফার্মেসি বিভাগকে ২০০৩ সালে অবলুপ্ত করে তিনটি আলাদা বিভাগ করা হয়। ওই সময় ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষকদের তিনটি বিভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন করে ২০১৩ সালে ফার্মেসি বিভাগ খোলার পর সেখানে তাঁদের ফেরত আনা যাচ্ছে না। তবে তাঁদের অনেকে খণ্ডকালীন হিসেবে এই বিভাগে ক্লাস নেন।

ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান সীতেশ চন্দ্র বাছাড় প্রথম আলোকে বলেন, অবলুপ্ত করার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবার বিভাগটি চালু করা হয়েছে। এখানে নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। প্রায় সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থীর জন্য একজন মাত্র শিক্ষক। ফার্মেসি অনুষদের অন্য তিনটি বিভাগের শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস করাতে হয়।

যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারম্যান হাকিম আরিফ বলেন, এটি একটি প্রফেশনাল কোর্স। সমাজে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানুষের ভাষাগত ও যোগাযোগবিষয়ক নানা সমস্যা রয়েছে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। কাজেই এসব সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে।

২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর কোর্স হিসেবে চালু হয় অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ। পরের বছর স্নাতক কোর্স চালু হয়। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি বা অন্য কেউ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের প্রয়োজনে এখানে পড়াশোনা করতে পারেন। বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান বলেন, দেশের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থায় অদক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁরা অপরাধের বিভিন্ন বিষয়ে সহজে দক্ষ হয়ে উঠবেন। বিভাগটির প্রায়োগিক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তবে উপাচার্যের বিভাগ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট নতুন তিনটি বিভাগ খোলায় অন্য বিভাগের একাধিক শিক্ষক মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, সাংবাদিকতার জগৎ থেকে মুদ্রিত সংস্করণ উঠে যাবে, এমন কথা বলে আসছেন যোগাযোগবিদ ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা। তাই মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগ খোলার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন না।

ভূগোল ও পরিবেশ এবং ভূতত্ত্ব নামে দুটি বিভাগ থাকলেও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের অধীনে অনুষদের অধীনে ভূমিবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা নামে একটি বিভাগ খোলার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া স্থান সংকুলান না করেই একই অনুষদের অধীনে খোলা হয়েছে সমুদ্রবিজ্ঞান ও আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ। অনুষদের ডিন এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিজ্ঞান ক্যাফেটেরিয়া ভেঙে বহুতল ভবন করা হবে। পুরো অনুষদটি ওই ভবনে স্থানান্তর করা হবে।

২০০৯ সালে একই সঙ্গে চালু করা হয় দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি ইনস্টিটিউট। প্রায় একই নামে একটি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউট খোলা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, দুর্যোগবিজ্ঞান বিভাগে টেকনিক্যাল বা বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হয়। আর ইনস্টিটিউটে পড়ানো হয় দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়টি। এখানে সামাজিক বিজ্ঞানবিষয়ক জ্ঞানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, নতুন কোনো বিভাগ খুললে সেখানে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পায়। এমনও দেখা যায়, একজন সাধারণ শিক্ষকের প্রস্তাবিত বিভাগটি যৌক্তিক হলেও প্রভাবশালী শিক্ষকদের অযৌক্তিক প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। তাই নতুন বিভাগ খোলার বিষয়টি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর মান যাচাইয়ে ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ গঠনের সিদ্ধান্তটি বেশ ভালো।

সরেজমিন বিভাগ পরিস্থিতি

নতুনভাবে চালু হওয়া ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫০। পাঁচটি ব্যাচের জন্য চারটি শ্রেণিকক্ষ। একই অনুষদের আরও তিনটি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরাও এসব কক্ষে ক্লাস করেন। দুপুরের পর অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাস নিতে চান না। ফলে সকালের দিকে শ্রেণিকক্ষগুলোতে প্রচণ্ড চাপ থাকে।

২০১২ সালে চালু হয় দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ। দাপ্তরিক ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজস্ব ঠিকানা না থাকায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বেকায়দায় আছে বিভাগটি। শিক্ষার্থীরা ডিনের কার্যালয়টি ব্যবহার করেন। বিভাগের চেয়ারম্যান ও অনুষদের ডিন একই ব্যক্তি। সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অবস্থাও এমনই। শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেন মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবনে। একই অনুষদের অধীন নতুন করে আবহাওয়া বিভাগ খোলা হয়েছে। আরেকটি নতুন বিভাগ খোলার প্রক্রিয়া চলছে। ভূতত্ত্ব বিভাগের পাশে সিঁড়ির নিচে একটি ছোট গবেষণাগার করা হয়েছে।

২০১১ সালে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগটি যাত্রা শুরু করে। পরে বিভাগটিকে নির্মাণাধীন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গাড়ি রাখার স্থানে (পার্কিং) জায়গা দেওয়া হয়। সেখানেই একটু জায়গায় বিভাগের ‘ল্যাব ক্লাস’ করানো হয়। বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভাগের অফিস সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে, কিন্তু অনেক সময় কলাভবনে ক্লাস করতে হয়। ক্লাস করার জায়গা খুঁজতেই অনেকটা সময় চলে যায়।’

অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ চালু হওয়ার পর একাধিকবার কক্ষ পরিবর্তন করতে হয়েছে। বিভাগের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কক্ষটিকে কার্যালয় হিসেবে অনেক দিন ব্যবহার করা হয়েছে। এখন স্থান হয়েছে প্রক্টরের কার্যালয়ের পাশে। বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান বলেন, ‘আমাদের একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। তাই বিভিন্ন ধরনের সংকট আছে, সমাধানের চেষ্টাও চলছে।’

করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন দেশে একই বিভাগের অধীন একাধিক প্রোগ্রাম খোলা হয়। সে ক্ষেত্রে নতুন চেয়ারম্যান কিংবা জনবল নিতে হয় না। ওই বিভাগের শিক্ষকদের কাউকে প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী করা হয়। শিক্ষার্থীর সনদে একই বিভাগ উল্লেখ থাকে। পাশাপাশি প্রোগ্রামের নাম উল্লেখ করা হয়। তাই বিভাগ ভাগের সময় বিভাজনটা যৌক্তিক হবে কি না, যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাবে কি না, শ্রেণিকক্ষ পাওয়া যাবে কি না, খরচের বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা হবে—এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদক : বিশ্বজিত পাল বাবু
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close