আন্তর্জাতিক ডেস্ক :দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাইকে রাজনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে পারেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকা অবস্থায় কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন।
পার্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চোই সুন-সিল নামের এক বন্ধুকে দিয়ে অবৈধ কাজ করিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তিনি সুন-সিলকে বিভিন্ন সরকারি দফতরে অবৈধ ক্ষমতাচর্চার অনুমতি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দেশটির আইনে তা দণ্ডনীয় অপরাধ।
প্রসিকিউটরা ইতিমধ্যে পার্কের ঘনিষ্ট হুন্দাই মটরস এবং কোরিয়ান এয়ার লাইন্সের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়া খ্যাতনামা স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের নামও এসেছে এই রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিতে। এ জন্য চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রকিসিকিউটররা এ প্রতিষ্ঠানটি ঘেরাও করেছিলেন।
এদিকে, অভিযুক্ত প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে ধারাবাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে দ. কোরিয়ার মানুষ। পদত্যাগের দাবিতে ধারাবাহিক বিক্ষোভের অংশ হিসেবে শনিবার সিউলের রাস্তায় নেমেছেন লাখ লাখ মানুষ। পার্কের পদত্যাগই আন্দোলনকারীদের একমাত্র দাবি।
বিক্ষোভের আয়োজকরা জানান, ১০ লাখ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তবে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়।
এর আগে ২৫ অক্টোবর পার্ক গিউন হাই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, বন্ধু চোই সুন-সিল কোনও সরকারি পদে না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রীয় বিষয়ে তার পরামর্শ চান।
প্রসঙ্গত, চোই সুন-সিল হলেন প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাইয়ের গুরু কন্যা। এই গুরুর প্রতি অত্যন্ত ভক্তি শ্রদ্ধা প্রেসিডেন্ট পার্কের। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন গুরুর মেয়ে চোই সুন-সিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কয়েক মাসে নিজের রাজনৈতিক বক্তৃতা বন্ধু চাই সুন-সিলকে দিয়ে লেখাতেন পার্ক। যদিও চাওই সরকারি কোনো পদে দায়িত্বরত নন। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এ কথা স্বীকার করে নেওয়ার পর তিনি নিজের জ্যেষ্ঠ ১০ উপদেষ্টাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
পার্কের গুরুকন্যা চোই সুন-সিল এখন দক্ষিণ কোরিয়া পুলিশের হাতে বন্দি। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আছে সুন-সিলের বিরুদ্ধে। আর প্রেসিডেন্টের সহায়তা নিয়েই তিনি তা করেছেন বলে অভিযোগ পার্কের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালে নির্বাচিত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন পার্ক। আগামী বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার পর থেকে নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট, আর এজন্য তাদের কাছে তার পদত্যাগ ছাড়া অন্য কোনো দাবি নেই।