বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় ভারত প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছে এবং হিন্দুদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট আছে। তবে এ হামলার ঘটনায় সরাসরি নিজেদের উদ্বিগ্ন বলে দাবি করে নি ভারত। বৃহস্পতিবার দিল্লির জওহর ভবনে হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র এসব কথা জানিয়েছেন।
মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ‘গত রবিবার ওই ঘটনার খবর শোনামাত্র ঢাকায় আমাদের হাইকমিশন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।’
বিকাশ স্বরূপ জানান, ঘটনার পর থেকে ভারতীয় দূতাবাস একটানা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে এবং ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার চেষ্টায় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজও করে যাচ্ছে’।
তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর এই সব হামলার ঘটনায় ভারত সরাসরি নিজেদের ‘উদ্বিগ্ন’ বলে বর্ণনা করেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ স্বরূপ বেশ সচেতনভাবেই ‘কনসার্নড’ বা ‘উদ্বিগ্ন’ শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছেন কারণ সেটা বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের সরকারকে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে।
তবে এই সব হামলার ঘটনাকে ভারত আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও এড়িয়ে যায়নি যেটা বিভিন্ন দেশের বহু ঘটনার ক্ষেত্রেই অনেক সময় বলা হয়ে থাকে।
বস্তুত বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে ভারতে চলে এলে তাদের আশ্রয় দেওয়া বা এমন কী নাগরিকত্ব দেওয়া ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকারের ঘোষিত নীতি ফলে এই ধরনের ঘটনায় ভারতের পক্ষে একেবারে নীরব থাকাটাও সম্ভব নয়।
গত বছর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী যখন দিল্লিতে ‘রাইসিনা ডায়ালগে’ যোগ দিতে এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সে দেশে হিন্দুদের ওপর বেশ কয়েকটি নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিলেন।
এবারের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাতেও ভারত বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে হিন্দুদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পেয়েছে বলে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার আমাদের বলেছেন তারা সংখ্যালঘুসহ সে দেশের সব নাগরিকের স্বার্থরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবেন।’
দিল্লিতে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় যেভাবে শত শত লোক নিরপরাধ হিন্দুদের ওপর চড়াও হয় এবং তাদের মন্দির-ম-পে ভাঙচুর চালায় তাতে ভারত সরকার অত্যন্ত বিচলিত বোধ করেছে কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্কের স্বার্থে এর চেয়ে কঠোর কোনও ভাষা ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
সাউথ ব্লকের ওই সূত্রটির মতে, ‘তার একমাত্র কারণ হল হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে আমাদের শেখ হাসিনা সরকারের ওপরই ভরসা রাখতে হবে কাজেই তাকে বিব্রত করে এমন কোনও মন্তব্য আমরা করতে পারি না।’