ব্যক্তি নয়, প্রযুক্তি পরীক্ষা করবে গাড়ির ফিটনেস
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অঙ্গীকারে সংযোজন হতে যাচ্ছে আরো একটি অর্জন।যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদান কার্যক্রম এসেছে ম্যানুয়েলের পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায়।এখন থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার দ্বারা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নয়, যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
এজন্য আজ রোববার সকাল ৯টায় উদ্বোধন হয়েছে ‘ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার’।মিরপুরে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্কেল কার্যালয়ে স্থাপিত ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টারটি (ভিআইসি) চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হতে যাচ্ছে।
২৭ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মিরপুর বিআরটিএ অফিস চত্বরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কিন্তু ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার বা ভিআইসি উদ্বোধন হয়েছে আজ বিআরটিএ অফিস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে। এই জন্য এরই মধ্যে সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে বিআরটিএ ওয়েব পোর্টালের। চালু করা হয়েছে আইসিটি ইউনিটও।
বর্তমানে ‘ম্যানুয়ালি’ গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করেন একজন মোটরযান পরিদর্শক। তিনি নিজে হাত-চোখ দিয়ে দেখেই গাড়ির ফিটনেস সনদ দিয়ে দেন। অভিযোগ, এ কাজে রয়েছে ঘুষ গ্রহণেরও রীতি। এতে ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি অহরহ ফিটনেস সার্টিফিকেট পেয়ে যায়। এমনকি গাড়ি না নিয়ে এসেও ঘুষের বিনিময়ে ফিটনেস সনদ পেয়ে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন সময়ে।
কিন্তু এখন থেকে ভিআইসিতে ফিটনেস টেস্টের জন্য যানবাহনগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন সেন্টারে আনতে হবে।ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার বা ভিআইসিতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে। তাতে ফাঁকির সুযোগ অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোর কোথাও চোখে দেখে গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়ার কার্যক্রম নেই। এতে যানবাহনের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সড়ক নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যায়। এক্ষেত্রে ভিআইসির মাধ্যমে নতুন এক ডিজিটাল যুগে পা রাখলো দেশের পরিবহন সেক্টর।
সড়ক পরিবহন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে দেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলা পর্যায়ে ভিআইসি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে চলতি বছরের মধ্যে আরো চারটি ভিআইসি চালুর জন্য দক্ষিণ কোরিয়া অর্থায়ন করবে বলে জানা গেছে। কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত আন সিওং-ডু এরই মধ্যে অর্থায়নের বিষয়টি সড়ক পরিবহন বিভাগকে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে ভিআইসি চালু হলে পরিবহন খাতে নৈরাজ্য এবং দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে আসবে। কারণ সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণের মধ্যে ক্রুটিপূর্ণ যানবাহন অন্যতম। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস পরীক্ষা সর্বত্র চালু হলে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিআরটিএর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ২৭ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ১৬ লাখ মোটরসাইকেল। কিন্তু এসব মোটরসাইকেলে ফিটনেস পরীক্ষা হয় না। বাকি ৯ লাখ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের মধ্যে ৪ লাখেরই ফিটনেস নেই।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রাক্তন অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক শামসুল হক বলেন, ২০০০ সালে বিআরটিএর জন্য ভিআইসি মেশিন কেনা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই মেশিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে আবারো চোখের দেখায় গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। এভাবে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বিশ্বের কোনো দেশেই চোখে দেখে ফিটনেস দেওয়ার প্রথা নেই।
পরিবহন সেক্টরের এ বিশেষজ্ঞ বলেন, পদ্ধতিগত উন্নয়ন না হলে দুর্নীতি এড়ানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া ত্রুটিমুক্ত যানবাহন নিশ্চিত হলে সড়ক নিরাপত্তাও বাড়বে। এতে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমে আসবে। এজন্য ভিআইসি চালুর কোনো বিকল্প নেই।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ভিআইসি নামের এই একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দিয়ে ফিটনেস পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছিল বিআরটিএ। এ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষার সময় ৭০ শতাংশ যান্ত্রিক যানই ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। সে সময় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় বিআরটিএ মিরপুর ও ইকুরিয়াসহ পাঁচ কার্যালয়ে ভিআইসি যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল। যন্ত্রগুলো কয়েক মাসের মধ্যে অকেজো করে ফেলা হয়।
কিন্তু বর্তমান সরকার আবার ওই যন্ত্রগুলো মেরামত করেন। যার একটি আজ চালু হলো।
ভিআইসি প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং কোরিয়ার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-কোইকা’র অনুদান ২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।