g আখাউড়ায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বুধবার, ১৯শে জুলাই, ২০১৭ ইং ৪ঠা শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আখাউড়ায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭

---

নিজস্ব প্রতিনিধি : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি, ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কম বেশি সকলের মনেই এই গানটির বিষাদময় সুর বেজে উঠে। অপেক্ষায় থাকে ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখটির জন্য। একুশে ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পন করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায় জাতি।

৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বীর শহীদদের আত্মহুতির ইতিহাস দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ পৌঁছেছে বিশ্ব দরবারে। বিশ্বের বহু দেশ ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আর্ন্তজাতিক মার্তৃভাষা’ দিবস হিসাবে পালন করছে। কিন্তু  আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা দিবসটি  সম্পর্কে জানে খুবই কম। আর এ কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা, শহীদ দিবসে দায়সারা গোছের অনুষ্ঠান আয়োজনকেই বলছে শিক্ষার্থীরা।  হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া উপজেলার বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ দিনটিকে পালন করছে বন্ধের দিন হিসাবে।  আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রয়েছে আরো অন্ধকারে।  তারা জানতে পারছে না শহীদ দিবস সম্পর্কে। সরকারি ছুটির দিনটি তারা অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতো খেলাধুলা করে  কাটিয়ে দেয়।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ১টি কলেজ ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬টি মাদ্রাসা ও ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে অর্ধশতাধিক কিন্ডার গার্ডেন স্কুল। এরমধ্যে ৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হলো  বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, শাহপীর কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়, মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, তোলাই শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়। বাকী ৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।  ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন শহীদ মিনারের সাথে পরিচিত হতে পারছে না তেমনি শহীদ মিনার না থাকায় মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে না।

তবে শিক্ষকরা জানায় সরকারি ভাবে উদ্যোগ না নেওয়ায় শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি। তবে দিবসটি উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ছয়ঘড়িয়া শাত আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের স্কুলে একটি শহীদ মিনার ছিল। নতুন বিল্ডিং করার সময় সেটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর আর শহীদ মিনার তৈরি করা হয়নি।

হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম শহীদ মিনার না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, অচিরেই বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবন নির্মাণ শেষ হলে সুবিধাজনক স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

পৌরশহরের শাহপীর কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি চারকোণা শহীদ মিনার রয়েছে। সেটিও অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে।

আমোদাবাদ শাহ আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার না থাকার কারণে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি না।

কল্লা শহীদ দাখিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে শহীদ দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে দিবসটি সম্পর্কে তারা কিছু বলতে পারেনি।

মনিয়ন্দ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো অর্থ না থাকায় তারা শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেননি। ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রতি বছর স্কুল প্রাঙ্গণে বেঞ্চ, কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা।

আখাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা  মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকার বাধ্যবাদকতা রয়েছে। তবে সেটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব  অর্থেই করতে হবে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে শহীদ মিনার তৈরির জন্য তাগিদ দেওয়া হবে।

এ জাতীয় আরও খবর