ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা ফেলার বাক্স বসিয়েছে ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’নামের একটি সংগঠন। জঙ্গিবাদে জড়িত বিপথগামীরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে না। গোটা বাংলাদেশে আমাদের তরুণেরা জড়িয়ে আছেন নানামুখী শুভ উদ্যোগের সঙ্গে। তাঁদের অভিনব ও ইতিবাচক কিছু উদ্যোগ নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।
আনিকা তাহসিন পড়েন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে। গত ঈদুল ফিতরের আগে তাঁদের কলেজে দুটি ডাস্টবিন (ময়লা ফেলার বাক্স) বসানো হয়েছে। কলেজ যখন খুলল ‘ডাস্টবিন দর্শনে’ এসেছিলেন অনেকে! ডাস্টবিন দর্শন? বিষয়টা কী?
আনিকা বলেন, ‘আগে কলেজে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। এখন “আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া” আমাদের কলেজে দুটি ডাস্টবিন বসিয়েছে। সবাই ওখানেই ময়লা ফেলি এখন। তা ছাড়া বিনগুলো বেশ সুন্দর। বিন বসানোর পর প্রথম দিন সবাই দল বেঁধে দেখত এসেছিলেন! এমন কী আমাদের শিক্ষকেরাও!’
ঈদ এলে বড়রা ছোটদের ঈদি দেন। কিন্তু গত ঈদে ফেসবুকভিত্তিক নবীন সংগঠন ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ শহরের সবাইকে ঈদি দেওয়ার এক উদ্যোগ নিয়েছিল! ঈদি মানে কি কেবল টাকাপয়সা? উহুঁ, এই তরুণেরা শহরকে দিতে চাইলেন ডাস্টবিন। এত কিছু থাকতে ডাস্টবিন কেন?
সংগঠনটির সদস্য জেবিন ইসলাম বললেন, ‘আমরা সব সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য কিছু করার চিন্তা করি। ঈদ উপলক্ষেও কিছু করার কথা ভাবছিলাম। শহরের পরিচ্ছন্নতার কথা ভেবে ডাস্টবিন বসানোর কথা মাথায় এসেছিল। সেই ভাবনা থেকেই ২২টি ডাস্টবিন বসানোর উদ্যোগ নিই আমরা।’
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ডাস্টবিন বসানোর মিশনে নেমে পড়েন এই তরুণেরা। বিষয়টা মোটেও সহজ ছিল না। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়রের অনুমতি পাওয়ায় বেশ সহজ হয়ে যায় সবকিছু। এ ছাড়া ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা ও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করলে অনেকেই এগিয়ে আসেন সহযোগিতা করতে।
অবশেষে গত ১ জুলাই শুরু হয় ডাস্টবিন বসানোর কাজ। সকাল থেকেই সংগঠনটির সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল, পৌর আধুনিক সুপার মার্কেট, অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, সুপার মার্কেট, সরকারি মডেল গার্লস স্কুল, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় ডাস্টবিন বসানোর কাজে লেগে যান।
২০১৫ সালের ২৪ জুলাই ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র পথচলা শুরু। সংগঠনটির অধিকাংশ সদস্য তরুণ। কেউ পড়াশোনা করছেন, কেউ কেউ বিভিন্ন পেশাজীবী। তরুণদের এই উদ্যোগ কেমন কাজে দিল? শহর ঘুরে দেখা গেল, এলাকাবাসী ডাস্টবিনগুলোর সদ্ব্যবহার করছে।
চটপটি বিক্রেতা আবু মিয়ার ভ্রাম্যমাণ দোকানটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। ডাস্টবিন বসানোর পর মানুষ ময়লা ফেলছে সেগুলোতে?
প্রশ্ন শুনে আবু মিয়া হাসিমুখে বললেন, ‘একটা ব্যাফার বাল্লাগছে, বাই। এই বয়সের পুলাপাইন কত কিচু করে, কিন্তু ঈদের পর কতলা পুলাপাইন আইসা টেংকের পাড়ের (লোকনাথ দিঘির প্রধান ফটক) গেটে একটা ডাস্টবিন বুয়াইছে। ফতমে গতর লাগাইছি না। ওহন বাল্লাগে, যহন দেহি সব মানুষ চটপডি, জালমুরি, আচার হায়া ফ্যাকেট বাক্সডার মইদ্দে ফালায়। জাগাডা সুন্দর লাগে।’
এমনটাই তো চেয়েছিলেন ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র সদস্যরা। তাঁদেরই একজন সাকেত নবী বললেন, ‘সাবেরা সোবহান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ডাস্টবিন বসিয়েছি আমরা। বসানোর কিছুদিন পর শিক্ষার্থীরা সেটার সদ্ব্যবহার করছে দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ আরও দুটি ডাস্টবিন চাইল। শুনেই ভালো লাগল আমাদের। কিন্তু এত ডাস্টবিন তো নেই আমাদের! তাই দেওয়াও সম্ভব হলো না। তবে এটাই ছিল আমাদের চাওয়া। শহরের সবাই যদি চারপাশ পরিষ্কার করে রাখেন, তাহলে পৌরসভার কাজ সহজ হয়ে যায়। হয়তো একদিন এভাবেই বদলে যাবে আমাদের প্রিয় শহর।’