ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে সেই নীতিতেই থাকবে বিএনপি। দিল্লিকে বিএনপি আশ্বস্ত করেছে, ভারতবিরোধী কোন নীতি গ্রহণ করবে না তারা। পাশাপাশি দিল্লির কাছে বিএনপির দাবি, তারা যেন একতরফাভাবে আওয়ামি লিগকে গুরুত্ব না দেয়।
বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে খালেদা জিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লি সফর করেছেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মওদুদ আহমদ। তিনি সে সময় মোদি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যাক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকগুলোতে দিল্লিকে খালেদার প্রতিনিধি আশ্বস্ত করেছেন, বিএনপি ভারতবিরোধী কোন নীতি গ্রহণ করবে না। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে বর্তমান হাসিনা সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে তারাও সেই নীতিতে থাকবে। খালেদার প্রতিনিধি মওদুদ দিল্লিকে বলেছে, তারা যেন একতরফাভাবে আওয়ামি লিগকে গুরুত্ব না দেয়।
যুগশঙ্খের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতবিরোধী’ হিসেবে পরিচিতি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সুপ্রিমো খালেদা জিয়ার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কটা অনেকটা শীতল হয়ে পড়েছিল। ২০১৩ সালে ঢাকা সফরের সময় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে খালেদার সাক্ষাত বাতিলে ঘটনায় সম্পর্কে শীতলতা আরো বাড়ে।
২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় ফেরার পেছনে দিল্লিকে দোষারোপ করে আসছে বিরোধী বিএনপি। তাদের বক্তব্য, এক তরফা নির্বাচনে জিতে একমাত্র ভারতের সমর্থণের কারণে টিকে আছে হাসিনা সরকার। এরপর খালেদার দল বিএনপি’র নেতাদের ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের কর্তারা অনেকটা এড়িয়েই চলছিলেন বিএনপিকে।
কিন্তু হঠাৎ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। কূটনৈতিক মহলের ধারণা, এ বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে নয়া দিল্লির শীতল সম্পর্কে উষ্ণতা নিয়ে আসতে পারে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিএনপি প্রধানের সঙ্গে ঢাকায় সোনারগাঁ হোটেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক হয়। ভারত সরকারের উঁচুস্তরের এ বৈঠকের পরও ঢাকার হাইকমিশনের আধিকারিকরা এড়িয়ে চলেছেন বিএনপিকে। গত প্রায় দেড় বছরে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির একাধিক মতবিনিময় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিদেশি বিভিন্ন কূটনীতিকরা বিএনপির আমন্ত্রণে বৈঠকে যোগদান করেছে। ব্যতিক্রম ছিল ভারত। প্রায় সব বৈঠকেই অনুপস্থিত ভারত। এমনকি বিএনপির ইফতারের নিমন্ত্রণেও ভারতের হাইকমিশন অংশগ্রহণ করেননি। সর্বশেষ গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার পঙ্কজশরণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু নতুন হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এসেও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি। এবার দীর্ঘ বিরতির পর শ্রিংলা বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আবার এমন একটি সময়ে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন যখন বিএনপি নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে যুগশঙ্খ জানায়, ভারতের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে খালেদার দল বিএনপি। অতীতের সব ভুল-ভ্রান্তি দূর করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে চায় বিএনপি। ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে পুরো বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। ভারতের নীতিনির্ধারকদের সাথেও নানা ইস্যুতে গত কয়েক মাসে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক হয়েছে। মঙ্গলবারের খালেদা-শ্রিংলা বৈঠকেও বিএনপির উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিষয়টি যেমন উঠে এসেছে, তেমনি প্রতিবেশীর সাথে অংশীদারিত্বমূলক সুসম্পর্কের দিকগুলোও গুরুত্ব পেয়েছে।
আমাদের সময়.কম