বুধবার, ১১ই জুলাই, ২০১৮ ইং ২৭শে আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

২৫ হাজার কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টা সরকারি কাজে যুক্ত হচ্ছেন!

1421083893ডেস্ক রির্পোট:চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘড়ি ধরা ৯টা-৫টা অফিস করার দিন শেষ হচ্ছে! সরকারের প্রায় ২৫ হাজার কর্মকর্তা সার্বক্ষণিকভাবে (২৪ ঘণ্টা) সরকারি কাজে যুক্ত থাকবেন। সরকার প্রযুক্তিনির্ভর (ডিজিটাল) প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলায় প্রশাসনের ‘ডিজিটাল যুগ’ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনে কাজে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও সম্পদের অপচয় কমাতে প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ই-গভর্মেন্ট অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় ৪৮৭টি উপজেলা, ৬৪টি জেলা ও ৭টি বিভাগকে একটি সংযোগে আনা হচ্ছে। এর সঙ্গে সংযোগ থাকবে সারাদেশের সরকারি অফিস। এ লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক কাজে ২৪ ঘণ্টা সম্পৃক্ত রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে।
২০১৫ সালের জুনের মধ্যে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৮৭টি উপজেলায় ফাইভার সংযোগের কাজ শেষ হচ্ছে। এর ফলে ১৮ হাজার বিভিন্ন সরকারি অফিস ডিজিটাল কনেকটিভিটির আওতায় আসছে। এসব অফিসের প্রায় ২৫ হাজার কর্মকর্তা ট্যাবলেট পিসির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক কাজে যুক্ত থাকবেন। কর্মকর্তাদের ৯টা থেকে ৫টা অফিস করার নিয়মের চিরায়ত গণ্ডি থেকে বের করে আনা হচ্ছে। সরকারের রূপকল্প: ২০২১ এর আওতায় প্রশাসনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এ পরিবর্তন আসছে।
এ প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশের গোটা প্রশাসনকে প্রযুক্তিনির্ভর একটি কানেকটিভিটির আওতায় খুব শিগগিরই আনা হচ্ছে। প্রায় ২৫ হাজার কর্মকর্তা এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবেন। অফিস সময়ের বাইরে ২৪ ঘণ্টাই সরকারি কাজের সঙ্গে থাকবেন।
তাছাড়া কোনো কর্মকর্তা ছুটিতে কিংবা বিদেশে গেলেও নেওয়ার্কের সঙ্গে থাকবেন। যে কোনো স্থান থেকে সরকারি কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত দেয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, জমিজমাসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা পেতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনগণকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জনগণের নির্বিঘœ সেবা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি সেবা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যাতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে সেবা প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎ দিন দিন কমে আর দেখা দেখি কমলে দুর্নীতি ও ভোগান্তি দুটোই কমবে বলে সরকার ভাবছে।
সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনিক কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজার কর্মকর্তার ডিজিটাল স্বাক্ষর সংরক্ষণ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা অফিস সময়ের বাইরে, ছুটিতে, বিদেশ ট্যুরে বা প্রশিক্ষণে থেকেও দফতরের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। কোনো কর্মকর্তাও অনুপস্থিতির অভাবে সিদ্ধান্ত দেয়া বা কোনো কাজ আর পড়ে থাকবে না। সরকারি কাজে বিলম্বে নানান অজুহাতের হাতটি ছোট হয়ে আসছে।
প্রশাসন বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন গড়ার বিষয়টি সরকারের একটি চমৎকার উদ্যোগ। কর্মকর্তারা এর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে না নিলে তেমন সফলতা আসবে না। সরকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কঠোর পদক্ষেপও থাকতে হবে। যাতে জনগণের কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ন্যাশনাল আইসিটি ইনফো নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেস-২ (ইনফো-সরকার) প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ১৮ হাজার সরকারি অফিসকে একটি কানেকটিভিটির আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও বিসিসি ডেটা সেন্টারের ধারণক্ষমতা ৫৪ টেরাবাইট থেকে বৃদ্ধি করে ২৫৪ টেরাবাইট করা হয়েছে।
প্রশাসন পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ের জন্য একটি ডেটা সেন্টার বিসিসিতে স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বিসিসিতেও ওয়াইফাই জোন স্থাপন করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে ইনফো সরকার প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গোটা প্রশাসনকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা ছাড়াও প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, ডিজাস্টার রিকোভারি সেন্টার স্থাপন, বিভিন্ন সরকারি অফিসে ৮শ’ ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপনসহ প্রায় ২৫ হাজার সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে ট্যাবলেট পিসি বিতরণ করা হবে। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। শুরু হবে ২৫ হাজার কর্মকর্তার এক নেটওয়ার্কে চলা। চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।