সরাইলে বাড়ছে ছিনতাই, ডাকাতি
---
মাহবুব খান বাবুল : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বেড়েই চলেছে ছিনতাই ও ডাকাতি। সড়ক মহাসড়কের পাশাপাশি বসত বাড়িতে ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে ফের ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। নির্বাহী কর্মকর্তা ও লাশবাহী গাড়ির পর এখন ডাকাতের কবলে পড়ছেন সাংবাদিক। গত রোববার ১৯ অক্টোবর রাতে উপজেলা সদরের ওই সড়কের জিল্লুকদার পাড়া নামক স্থানে যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী লোকজন ও চালকরা জানায়, গত কিছুদিন ধরে সিএনজি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। গত রোববার ১৯ অক্টোবর রাতে সরাইল সদরের নিজসরাইল গ্রামের বাসিন্ধা আহাদ মিয়া ও ফায়েজ মিয়া তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে সরাইলের বিশ্বরোড মোড় থেকে সিএনজিতে করে সরাইল সদরের উদ্যেশ্যে রওয়ানা দেন। রাত সাড়ে এগারটার দিকে সড়কের জিল্লুকদার পাড়া এলাকায় আসা মাত্র দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত একদল মুখোশধারী ডাকাত তাদের বহনকারী সিএনজিটিকে আটক করে। এ সময় মহিলা ও শিশুরা ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। পরে ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মুঠোফোন সেট ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত ১৮ অক্টোবর শনিবার রাতে একই সড়কের বড্ডাপাড়া এলাকায় ১০/১২টি যাত্রীবাহী সিএনজিতে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদের মারধোরে ওই রাতে এক সাংবাদিক ও দুই পথচারী সহ নয়জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সরাইল-অরুয়াইল সড়কের পাশে বন্দেরহাটির ৭/৮টি পরিবারে দূর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাত সর্দার মানিকের বাড়ির উত্তর পাশের ওই বাড়িতে ১৫/২০ জনের সংঘবদ্ধ একদল ডাকাত ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথমে ডাকাতরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে সকলকে জিম্মি করে ফেলে। পরে মহিলা পুরুষদের মারধোর করে নগদ টাকা, মুঠোফোন ও স্বর্ণালঙ্কার সহ চার লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নিয়ে যায়। ডাকাতের পিটুনিতে আহত হয়- নূরজাহান বেগম (৪৩), লতিফ মিয়া (৩২), আছমা বেগম (২২), আশাদ (২০), হাবিব (১৮) ও হাদিছা বেগম (২২)। গত ১৫ অক্টোবর বুধবার সরাইল সদর ইউনিয়নের উচালিয়া পাড়া এলাকায় সন্ধ্যা রাতেই দূর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছে অটোরিক্সা চালক মো: জাকির মিয়া (২৬) ও যাত্রী মোবারক মিয়া (৩৫)। স্থানীয় লোকজন জানায়, তেরকান্দা গ্রামের হাজী বাড়ির মিয়া হোসেনের পুত্র ইট মিলের সর্দার জাকির (৪০) দুই লাখ টাকা নিয়ে উচালিয়াপাড়া-তেরকান্দা সড়ক দিয়ে বাড়ি ফেরার কথা। ওই জাকিরকে ধরার জন্য ১০/১২ জনের একদল ডাকাত সন্ধ্যার ঠিক পর থেকেই ওতপেতে বসেছিল ওই সড়কে। কিন্তু মিল সর্দার জাকির সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে চলে যায়। সন্ধ্যার পর উচালিয়াপাড়া গ্রামের শুক্কুর আলীর পুত্র হালে তেরকান্দা চান্দের হাটির বাসিন্ধা টং দোকানদার ও অটোরিক্সা চালক জাকির মিয়া তার মামাত ভাই একই গ্রামের বাসিন্ধা মোবারক মিয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। উচালিয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠ পার হওয়ার পর মিল সর্দার জাকির মনে করে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্রের মুখে তাদের গতিরোধ করে। পরে ওই দুইজনের কাছ থেকে নগদ ১২ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জাকির ডাকাত দলের ৩/৪ জনকে চিনে ফেলেছে ভেবে তারা জাকিরকে হত্যার উদ্যেশ্যে পেছনের দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি দেখে তাদেরকে দ্রুত ঢাকা রেফার করা হয়। বর্তমানে জাকির ঢাকার আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের আইসিও তে মৃত্যুর সংঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। গত ১১ অক্টোবর শনিবার রাত দশটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড মোড় থেকে যাত্রী বেশে চার ছিনতাইকারী উঠে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় (নং- হবিগঞ্জ-থ-১১-৪৪৪৯)। চান্দুরার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সিএনজিটি ইসলামাবাদ নামক স্থানটি পার হওয়ার পরই এক ছিনতাইকারী চালককে ধাক্কা মেরে চলন্ত গাড়ি থেকে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়। এক ছিনতাকারী সিএনজিটি নিয়ে চম্পট দেয়। অপর তিন জন চালককে কূপিয়ে গুরুতর আহত করে। চালক বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার উত্তরায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সিএনজিটি উদ্ধার হয়নি আদৌ। অটোরিক্সা চালক ও মালিক সেলিমের (২৫) বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। অতি সম্প্রতি সদর ইউনিয়নের বড্ডা গ্রামে সৌদী প্রবাসী মহিনুরের পাকা ভবনের গ্রীল ও দরজা ভেঙ্গে ১২/১৪ জনের একদল ডাকাত ভেতরে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে গৃহকর্তার শিশু কন্যাকে জিম্মি করে ফেলে। পরে স্বর্ণালঙ্কার সহ ঘরের যাবতীয় মালামাল পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে চম্পট দেয় ডাকাত দল। এ বিষয়ে সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোঃ শাহ আলম বকাউল বলেন, আমরা তো বসে নেই। কাজ করছি। ঘটনা ঘটছে গ্রেপ্তার পক্রিয়াও অব্যাহত আছে। আপনারা থানায় অভিযোগ দেন। অবশ্যই ব্যবস্থা নিব। নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, কর্মসংস্থানের অভাবে স্থানীয় কিছু যুবক বিপদগামী হয়ে এ ঘটনা গুলো ঘটাচ্ছে।