ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ায় ফেঁসে যাচ্ছেন ছয় সচিব
---
ঢাকা: অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরির বাড়তি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেন। এ প্রতিযোগিতায় সচিবসহ উচ্চপদস্থ আমলারাও অংশ নেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এতে ফেঁসে যাচ্ছেন ছয় সচিব।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা সনদ নিয়েছেন এবং দিয়েছেন তাদের সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছয় সচিবের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তারা হলেন স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা, প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব) একেএম আমির হোসেন, বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব) মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এ ছয়জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদপ্রাপ্তি সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এসব নথি যাচাই করা হচ্ছে। দুদকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। একইভাবে আরও অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিগগিরই অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে দুদক চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান জানান, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ সংগ্রহ করে রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন এবং এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর পরই মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার হিড়িক পড়ে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরির বাড়তি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেন। এ প্রতিযোগিতায় সচিবসহ উচ্চপদস্থ আমলারাও অংশ নেন। এ সনদ কাজে লাগিয়ে অনেকেই বাড়তি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের পর অবসরে গেছেন। আবার অনেকেই এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে মার্চে দুদকের উপপরিচালক জুলফিকার আলীকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তিনি ওই ছয়জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদপ্রাপ্তি সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করেন এবং ছয় সচিবসহ মোট ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অনুসন্ধান কর্মকর্তার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার পর সচিবরা তাদের বক্তব্য লিখিত আকারেও দুদকে জমা দেন। ১৬ থেকে ২৪ জুলাই ওই ছয় সচিবকে পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া বক্তব্যসংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাই শেষে চলতি মাসেই (আগস্ট) কমিশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। সবশেষ ২১ জুলাই দুই উপসচিবসহ ৩৫ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে সরকার। এর আগেও একই ধরনের অভিযোগে ১১৬ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়।
–নতুন বার্তা