সদরঘাটে ইচ্ছামতো টোল আর কুলি ভাড়া আদায়
---
সদরঘাটে নৌযান ঘাটশ্রমিকদের (কুলি ও ইজারাদার) দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সাধারণ যাত্রীরা। মালামাল বা পণ্য পরিবহনে ইচ্ছামতো টোল আদায় করতে গিয়ে নিয়মিতই হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে নৌবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সদরঘাটের প্রবেশপথে ইজারাদারের লোকেরা টোল আদায় করেন। এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না। ইচ্ছামতো টোল আদায় করেন তাঁরা। অন্যদিকে মালামাল পৌঁছে দেওয়ার পর অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন কুলিরা। তাঁদের দাবি না মানলে দুর্ব্যবহার করতেও দ্বিধা করেন না। যাত্রীরাও ঝামেলা এড়াতে নিরুপায় হয়ে ঘাটশ্রমিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পণ্য পরিবহনে ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও মানছে না কেউই।
|সম্প্রতি (গত শুক্র ও বুধবার) সরজমিনে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথে যোগাযোগের একমাত্র পথ সদরঘাটে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়। যদিও কুলিরা বলছেন, যে যা দেয় তা-ই নেন তাঁরা। আর ইজারাদারের লোকেদের দাবি, সরকার-নির্ধারিত টোল আদায় করছেন তাঁরা। তবে বাস্তবের সঙ্গে এর মিল নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
গত শুক্রবার বিকেলে সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী মালামাল নিয়ে ঘাটে আসার সঙ্গে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন কুলিরা। এরপর দরদাম। একটু সামনে এগোলেই ইজারাদারের লোকেরা আটকে দিচ্ছেন তাঁদের। যাত্রীর কাছে ইচ্ছামতো টাকা চাইছেন তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রে হালকা মালামাল হলেও যাত্রীরা কুলিদের দিয়ে বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে বরগুনাগামী মুন্না নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁর কাছে ছিল তিনটি প্লাস্টিকের চেয়ার। ঘাটের প্রবেশ মুখে আসতেই ইজারাদারের লোকেরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তিনটি চেয়ারের জন্য ১০০ টাকা দাবি করেন তাঁরা। টাকা দিতে না চাইলে ইজারাদারের লোকেরা বাধা দেন, বেশ কিছুক্ষণ আটকেও রাখেন। পরে ৫০ টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। মুন্না বলেন, ‘ভাই, প্লাস্টিকের হালকা চেয়ার। তার পরও ৫০ টাকা টোল দিতে হলো। কী করব। কিছুই করার নেই।’
এর কিছুক্ষণ পর ১৪ ইঞ্চি টেলিভিশন নিয়ে ঢুকলেন মো. জুয়েল। ইজারাদারের লোকেরা তাঁর কাছে টোল দাবি করেন ৩০০ টাকা। তিনি অস্বীকৃতি জানালে বাগবিতণ্ডা হয়। শেষ পর্যন্ত টোল বাবদ ১০০ ও কুলির ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি।
কিছুক্ষণ পর প্লাস্টিকের খালি ড্রামের জন্য সৈয়দ মো. সেলিমের কাছ থেকে ৫০ টাকা টোল নেন ইজারাদারের লোকেরা।
বিকেল পাঁচটার দিকে পটুয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে সদরঘাটে আসেন মো. আবদুর রব। তাঁর সঙ্গে ছিল একটি স্টিলের খাটের দুটি অংশ। ঢোকার সময়ই তাঁর কাছে ৬০০ টাকা দাবি করেন ইজারাদারের লোকেরা। বেশ কিছুক্ষণ কথাকাটাকাটির পর অন্য একজনের সহায়তায় মালামাল আনা-নেওয়ার নির্ধারিত প্রবেশপথ (৫ নম্বর) দিয়ে ঘাটে ঢোকেন তিনি। সেখানে ১৫০ টাকা টোল ও ৫০ টাকা কুলির ভাড়া বাবদ দেন। আবদুর রব অভিযোগ করেন, ‘ঘাটের লোক ও কুলিরা ইচ্ছামতো টাকা চায়। চাহিদামতো টাকা না দিলে আটকে রাখে। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিই।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘাটে পুলিশ থাকলেও তাঁরা না দেখার ভান করেন। অনেক সময় জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এতে সাধারণ মানুষেরই দুর্ভোগ পোহাতে হয় বেশি।
এ বিষয়ে ২ নম্বর ফটকে টোল আদায়ে দায়িত্বরত এক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হয় না। যে যা দেয় তা নিচ্ছি।’ ওপরের ঘটনাগুলোর সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি একই উত্তর দেন।’ মালামাল পরিবহনে কোনো টোল নির্ধারিত আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর কোনো তালিকা নেই।’
অন্যদিকে ৫ নম্বর ঘাটে (পণ্য পরিবহন ঘাট) দায়িত্বরত মাহবুবুল আলম জানান, এই ঘাট দিয়ে সাধারণত পণ্য নেওয়া হয়। যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে টোল নির্ধারণ করা হয়। তবে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া বা নেওয়া হয় না বলে দাবি তাঁর। পণ্য পরিবহনে টোলের কোনো তালিকা তাঁর কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে সদরঘাটের পরিবেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। পরিবেশ আগের চেয়ে অন্তত ৯০ শতাংশ ভালো হয়েছে।
ঘাটের সমস্যার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কুলিদের দৌরাত্ম্য একেবারেই কমে গেছে এমনটি নয়। কিছু সমস্যা তো থাকতেই পারে। তবে আমরা সব সময়ই যাত্রী হয়রানির ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি। কেউ অভিযোগ করলে তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ঢাকা নদীবন্দরের (সদরঘাট) যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধে সংস্কারকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার ঘাট ইজারাদার ও কুলির সরদারদের নিয়ে সভা করেছেন। সভায় সম্মিলিতভাবে যাত্রী হয়রানি বন্ধে সবাই একমত হয়েছেন।
সাইফুল ইসলাম আরও জানান, যাত্রী হয়রানি বন্ধে প্রতিদিন পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে যাত্রী হয়রানি অনেকটা কমে এসেছে। শিগগিরই আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ জাতীয় আরও খবর
- দুনিয়া বলছে দেশে মানবাধিকার নেই: খালেদা জিয়া
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া খালেদা জিয়া সরকার বিরোধী আন্দোলনের আহ্বান
- পুরো দেশ গ্রামীণফোনের থ্রিজির আওতায় এল
- উইন্ডিজকে ১১৫ রানে আটকে ফেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা
- শিগগিরই আসছে মাইক্রোসফটের স্মার্টওয়াচ
- কলেজের ফটক বন্ধ করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ
- মালয়েশীয় বিমান অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনী
- ‘মোদি চা’ বনাম ‘রাহুল দুধ’
- তোফায়েলের উদ্দেশে খোকা খালেদা জিয়াকে পা ছুঁয়ে সালাম করে যান
- নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা নিয়ে ত্রিমুখি লড়াই!
- শেষটা দেখে ফেললেন যুবরাজ?
- নিখোঁজ বিমান নিয়ে আশার আলো