আবারও ইতিহাস গড়তে চান তিন বাংলাদেশি
নিউজ ডেস্ক : ২০১৮ সালের ৭ জুন। সেদিন কানাডায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশিরা। অন্টারিও প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচনে এনডিপি প্রার্থী বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক ডলি বেগমকে এমপিপি নির্বাচিত করেছিলেন। ওই সময় টরন্টোর স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট’র অধিবাসী ছাড়াও পুরো টরন্টো সিটির সকল বাংলাদেশিরা এক সুতোয় গাঁথা হয়ে ডলি বেগমকে এমপিপি নির্বাচিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।
আগামী ২২ অক্টোবর টরন্টো সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। টরন্টো সিটি নির্বাচনে তিন পদে প্রার্থী হয়েছেন তিন বাংলাদেশিরা। তারা হলেন, মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার তোফাজ্জল হক, স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট (ওয়ার্ড-২০) কাউন্সিলর প্রার্থী মহসিন ভুঁইয়া, টরন্টো স্কুল বোর্ড ১৮ নং ওয়ার্ড এর স্কুল ট্রাস্টি পদপ্রার্থী ফেরদৌস বারী। তাদের লক্ষ্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে নির্বাচনী যুদ্ধে জয়ী হয়ে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরেকটি ইতিহাস উপহার দেয়া। এলক্ষ্যে রাতদিন নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, ১০ অক্টোবর থেকে অগ্রীম ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আাগমী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রত্যেক ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট দুইটি জায়গায় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ ভোট গ্রহণ চলবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশি প্রার্থীরা অগ্রীম ভোট দিতে শুরু করেছে।
বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থী মহসিন ভুঁইয়া ও স্কুল ট্রাস্টি পদপ্রার্থী ফেরদৌস বারীকে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে মেয়র পদেও সকল বাংলাদেশি ভোটারদের ভোট আদায়ে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার তোফাজ্জল হক।
মেয়র পদে জয়ী হওয়া দুরূহ হলেও বাঙালি কমিউনিটির শক্তিমত্তা মূলধারার রাজনীতিবিদের কাছে জানান দিতে ব্যারিস্টার তোফাজ্জলকে ভোট দেয়া আহ্বান জানান বাংলাদেশি এমপি ডলি বেগমসহ কমিউনিটির নেতারা।
আরও জানা যায়, টরন্টো সিটি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র জন টোরিসহ ১২ জন প্রার্থী রয়েছেন। টরন্টো সিটিতে প্রায় ১২ লাখ ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশি ভোটার রয়েছেন ৪৫ হাজার। এ ৪৫ হাজার ভোটের আশায় আছেন মেয়র প্রার্থী তোফাজ্জল হক। বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ করে ডলি বেগমের উত্তরসূরী হতে চান তিনি।
বাঙালি বা বাংলাদেশিরা বীরের জাতি। তারা যেখানে থাকুক না কেন কীভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয় তা জানে। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ডলি বেগম এমপিপি। গত জুনের গড়া সেই ইতিহাস আমরা ভুলে যাইনি।
আগামী ২২ অক্টোবর কানাডায় বাংলাদেশিরা আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে অনেকেরই আশা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির অসংখ্য ভোটারসহ অন্যান্য দেশের শুভাকাঙ্ক্ষী ভোটাররা আমাদের প্রতিনিয়তই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। অগ্রিম ভোটেও আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা বাংলাদেশি কমিউনিটির সকল ভোটাররা যার যার অবস্থান থেকে কাজ করলে বিজয় আমাদের হবেই।
অন্যদিকে মহসিন ভুঁইয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ওয়ার্ডে ১ লাখ বিশ হাজার ভোটের মধ্যে ১২ হাজার বাংলাদেশি ভোটার রয়েছেন। আরও ৪/৫ জন সক্রিয় কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তবে অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে মহসিন ভুঁইয়ার অবস্থান ভালো।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর প্রার্থী মহসিন ভুঁইয়া জানান, এডভান্স ভোটে স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট (ওয়ার্ড-২০) এ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বাংলাদেশি ভোটাররা। এতেই বুঝা যাচ্ছে ২২ অক্টোবর আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তিনি আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত Birchmount Community Centre (93 Birchmount Road), -এর জিমনেশিয়ামে ও Warden Hilltop Community Centre (25 Mendelssohn Street)-এর মাল্টিপারপাস রুমে গিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির সকল ভোটারদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ পরিবারসহ আমি এ এলাকায় বসবাস করি। আমি ভালো করেই জানি স্কারবোরো সাউথওয়েস্টের একজন হিসেবে আমরা কতটা উপেক্ষিত? কখনও কখনও মনে হয় আমরা যেনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসী। টরন্টো সিটির প্রতিটি এরিয়ায় সমানভাবে উন্নয়ন হওয়া প্রয়োজন ছিল।
দুঃখজনক হলেও সত্যি সেটা হয়নি। আমরা ক্রমাগত অবহেলিত হয়েছি। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য টরন্টো সিটিকে আরও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন নাগরিকবান্ধব এবং জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধিত্ব। আমার প্রতিশ্রুতির মধ্যে বাস সার্ভিস বৃদ্ধি, রাস্তা, পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার সংস্কার, নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় সকল উন্নয়নে আমার অগ্রাধিকার থাকবে। স্কারবোরো সাউথওয়েস্টকে নিরাপদ এবং সেরা ওয়ার্ডে পরিণত করার লক্ষ্যে আমাকে ভোট দিয়ে আপনার প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার সুযোগ দিন।
এদিকে, ফেরদৌস বারীরও ব্যাপক জনসমর্থন সৃষ্টি হয়েছে। টরন্টো স্কুল বোর্ড এবং শিক্ষা ব্যবস্থা তার সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনায় মুগ্ধ হয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ স্থানীয় কানডিয়ানরা। তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাঙালি বা বাংলাদেশি ছাড়াও কানাডিয়ান অন্যান্য দেশের বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিকরা ব্যাপক উৎসাহ দেখাচ্ছে। ফলে ফেরদৌস বারীও তার নির্বাচনে জয়ী হতে বেশ আশাবাদী।
এ বিষয়ে তিনি জানান, আমি টরন্টোর সিটির শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু পরিকল্পনা করেছি। যা আমি ভোটারদের কাছে প্রচার করছি। এতে তারা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। তাই আমি খুব আশাবদী আমার জয়ের ব্যাপারে।
টরন্টো সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজন নেতা জানান, টরন্টো সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আমাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে হবে তা ঠিক। তবে কাউন্সিলর পদে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। আগামী ২২ অক্টোবর টরন্টো সিটির নির্বাচনে স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট বা ২০নম্বর ওয়ার্ড একমাত্র বাংলাদেশি কাউন্সিলর প্রার্থী মহসিন ভুঁইয়াকে জয়ী করতে হবে।
তারা জানান, ইতিমধ্যে ১৩টি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ তার ক্যাস্পেইন অফিসে এসে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও সালমা জাহিদ এমপি, সাবেক এমপি ম্যাথিউ ক্যালওয়ে, স্কারবোরো সাউথওয়েস্টের এমপিপি ডলি বেগমসহ অনেকেই ক্যাম্পেইন অফিসে এসে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে এ ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থীর নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশি পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, মূলত লড়াইটা হবে মিশেল হল্যান্ডো এবং মহসিন ভুইঁয়ার মধ্যে। কেবলমাত্র বাংলাদেশি ভোটারের সংখ্যা এখানে প্রায় ১০ হাজার। আর এশিয়ান ভোটার ৩৪ হাজার।
মহসিন ভুইঁয়ার জন্য বড় আশীর্বাদ এই ভোট ব্যাংক। তার লন সাইন আর প্রচারণা চোখে পড়ার মতো। ৩৬টি টিম প্রতিদিন ডোর নক আর ক্যানভাসে ব্যস্ত। অনেকেরই ধারণা, স্কারবোরো সাউথওয়েস্টে আরেকটি ইতিহাস হতে যাচ্ছে। প্রতিটি বাঙালির একেকটি একটি ভোট কেবলমাত্র আরেকটি ইতিহাস রচনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা পেতে পারি প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সিলর।
তারা আরও বলেন, এর আগে টরন্টো সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে মহসিন ভূঁইয়ার স্বপক্ষে অন্য ৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ত্যাগের যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা জয়ে পরিণত করতে হবে।
মহসিন ভুঁইয়ার জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য আরেকবার ইতিহাস তৈরি হোক এটাই প্রত্যাশা। এছাড়াও তারা মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার তোফাজ্জল হক ও স্কুল ট্রাস্টি পদপ্রার্থী ফেরদৌস বারীর পক্ষে সকল বাঙালি ও বাংলাদেশিদের ভোট নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।বিডি প্রতিদিন