বুধবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৯ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

পদ্মার ভাঙন: হাজারো পরিবারে শুধুই কান্না

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: বর্ষায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা ফিরে পেয়েছে তার প্রমত্ত রূপ। খননের অভাবে বছরের পর বছর পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর গতিপথ পাল্টে ভাঙ‌তে শুরু ক‌রে‌ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে, ভাঙনের কবলে পড়ছে শরীয়তপু‌রের ন‌ড়িয়া ও জা‌জিরা উপজেলা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অসহায়, দরিদ্র-গরিব মানুষের কান্নার আওয়াজও।

স্মরণকালের ভয়াবহ পদ্মার ভাঙ্গনের মু‌খে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা শহর বিলীন হ‌তে যা‌চ্ছে। গত ৭ ‌দি‌নের অব্যাহত ভাঙ্গনে অর্ধশত পাকা স্থাপনাসহ ক‌য়েক হাজার বসতবা‌ড়ি, ব্যবসা প্র‌তিষ্ঠান নদী গর্ভে চ‌লে গে‌ছে। আর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অশাহায় হয়ে পড়েছে এ অঞ্চ‌লের হাজার হাজার মানুষ। একদিন আগেও যারা সম্পদশালী ছিল তারাও রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তাই শেষ সম্বলটুকু অন্যত্র স‌ড়িয়ে নি‌তে ব্যস্ত ভাঙন কব‌লিতরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে শরীয়তপু‌রের নড়িয়া পৌরসভা, মোক্তারেরচর ইউনিয়ন ও কেদারপুর ইউনিয়নের তিন হাজারের বেশি মানুষের বসত বাড়ি, ম‌সজিদ, ম‌ন্দিরসহ কেউ হারিয়েছেন শেষ সম্বলটুকু। ওয়াপদা, বাঁশতলা, সাধুর বাজার এবং শত বছ‌রের পু‌রো‌নো মুলফৎগঞ্জ বাজারের ৫ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগু‌লো বিলীন হয়ে গেছে পদ্মায়। অনেকেই আবার জমি-জিরাত হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। এসব অসহায় মানুষের সঙ্গী এখন শুধুই কান্না!

এছাড়া ভাঙনের হুম‌কি‌তে রয়েছে, বহুতল ভবনসহ উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও। বন্ধ ক‌রে রাখা হ‌য়ে‌ছে চি‌কিৎসা সেবা, যোগা‌যোগ ব্যবস্থা ভে‌ঙে পড়ায় বিদ্যুৎ বি‌ছিন্ন র‌য়ে‌ছে নদী তীরবর্তী গ্রামগু‌লো‌তে। এমন পরিস্থিতিতে সরকা‌রের পক্ষ থে‌কে জরুরি ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ ক‌রে‌ছে স্থানীয়রা। কেদারপুর ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম খলিফা, আলম হো‌সেন, দী‌নেশ দাসসহ আরো অনেকেই জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতায় আজ তা‌দের এমন অবস্থা। এতো কিছুর পরও সরকার কিংবা পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড কোন কার্যকা‌রি পদ‌ক্ষেপ নেয়‌নি।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে পদ্মার ডান পাড়ে শুরু হওয়া এই ভাঙনে এক সময় পৌরসভা এলাকা বিলীন হয়ে যেতে পারে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ন‌ড়িয়া উপজেলা। এই উপ‌জেলা‌ রক্ষায় একনেকে অর্থ বরাদ্দ ও ছাড় সবই হয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য এতো আয়োজন কেবল তাদের ভাগ্যই বদলায়নি। গত জানুয়ারিতে নদী তীর রক্ষা বাঁধে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও বাস্তবায়নের কোন বালাই নেই। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে‌ছে উপজেলা প্রশাসন।

এ‌ বিষ‌য়ে উপ‌জেলা নির্ব‌াহী কর্মকর্তা সান‌জিদা ইয়াস‌মিন পূর্বপ‌শ্চিম‌কে ব‌লেন, সরকা‌রের উপর মহ‌লে ভাঙ‌নের বিষ‌য়ে আলোচনা চল‌ছে। দ্রুত সম‌য়ের ম‌ধ্যে পদ‌ক্ষেপ নেয়া হ‌বে। আমরা ভাঙন কব‌লিত মানুষ‌দের সাহায্য সহ‌যো‌গিতা ক‌রেই যা‌চ্ছি।

দে‌শের রে‌মি‌‌টেন্স আহরণকা‌রী অঞ্চল হি‌সে‌বে চতুর্থ অবস্থা‌ন ন‌ড়িয়া উপ‌জেলার। এখা‌নেই গত বছরের ভাঙ‌নে নোঙর করা অবস্থায় ডু‌বে যায় তিনটি লঞ্চ। এ ঘটনায় ৩জ‌নের মর‌দেহ উদ্ধার হ‌লেও নি‌খোঁজ থে‌কে যায় অন্তত ১৬জন। এছাড়া, চ‌লিত বছ‌রের আগষ্ট মা‌সেও লঞ্চ ঘাট বি‌লিন হ‌য়ে নি‌খোঁজ হয় ১২জন। এর ম‌ধ্যে উদ্ধার হ‌য়ে‌ছে ২জ‌নের মর‌দেহ নিখোঁজ র‌য়ে‌ছে অন্তত ১০জন।