‘কানাডার কোনো জাতীয় নির্বাচনে এখনও ইভিএম ব্যবহৃত হয়নি’
কানাডায় কি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহৃত হয়?- আমার একজন ফেসবুক বন্ধু প্রশ্নটি করেছেন। এর উত্তর হ্যাঁ এবং না- দুই-ই হতে পারে। ‘না’- কারণ কানাডার কোনো জাতীয় নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ইভিএম ব্যবহৃত হয়নি। ‘হ্যাঁ’- কারণ গত জুনে অনুষ্ঠিত অন্টারিও’র প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে। তা্ও পুরো প্রদেশে নয়, ৫০ শতাংশ ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে।
এবারই প্রথম ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে- এই বাক্যটিও পুরোপুরি সঠিক না। কারণ এর আগে দুটি উপনির্বাচনে এবং সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে। সেগুলো ছিলো পরীক্ষামূলক ব্যবহার। এবারই প্রথম রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হওয়া কোনো নির্বাচনের মোট ভোটার কেন্দ্রের অর্ধেক ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে।
বাংলাদেশে যে ইভিএম নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে সেটি কীভাবে কাজ করবে সে ব্যাপারে আমার পরিষ্কার ধারণা নাই। তবে অন্টারিও’র নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম এ ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।
বরাবরের কাগজের ভোটার তালিকার বদলে ইলেকট্রনিক ভোটার তালিকা করেছে ইলেকশন কমিশন। ‘ই- পোল বুক’ নামের এই ভোটের তালিকার পাশাপাশি অবশ্য কাগজের ভোটার তালিকা্ও ছিলো সেখানে। নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো ভোটার নিবন্ধন কার্ড নিয়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসেছেন। একজন কর্মকর্তা সেই কার্ডটি নিয়ে একটি মেশিনে স্ক্যান করতেই ভোটারের সমুদয় তথ্যাদি মেশিনের পর্দায় ভেসে ওঠেছে। নির্বাচনী কর্মকর্তা সেটি দেখেই নিশ্চিত হয়েছেন- তিনি সত্যিকারের ভোটার কী না। অনেকটা গ্রোসারি স্টোরে পণ্যের প্যাকেটের গায়ে মূল্য স্ক্যান করার মতো ব্যাপারটা।
নির্বাচনের কিছুদিন আগেই আমার ঠিকানা বদল হয়েছে বলে এই এলাকার ভোটার তালিকায় আমার নাম ছিলো না। সরকারি পরিচয় পত্র দেখিয়ে একটি ফরম পূরণ করে তাৎক্ষণিকভাবে আবেদন করে ভোটার হতে হয়েছে আমাকে। ফলে ‘ই- পোল বুক’ এ আমার নাম ছিলো না। যারা নির্বাচন কমিশনের পাঠানো নিবন্ধন কার্ড সঙ্গে না নিয়েই ভোট দিতে এসেছেন- তাদের কাগজের তালিকা থেকে নাম বের করে মিলিয়ে নেয়া হয়েছে।
ভোটার কিন্তু ‘সিল’ মেরেছেন কাগজের ব্যালট পেপারেই। নির্বাচনী কর্মকর্তা প্রতিটি ভোটারের হাতেই প্রার্থীদের নাম সম্বলিত ব্যালট পেপার দিয়েছেন। ভোটাররা ভোট দেয়ার নির্ধারিত বুথে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে X চিহ্ন দিয়ে ভাঁজ করে একটি খামে ভরে নির্বাচনী কর্মকর্তার হাতে দিয়েছেন। তিনি সেটি একটি মেশিনের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। মেশিনের ভেতর ব্যালট পেপারটি যাবার সময়ই এই ব্যালট পেপারটিতে কাকে ভোট দেয়া হয়েছে তা স্ক্যান হয়ে গেছে। তবে নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক সেটি দেখতে পারেননি।
তবে একদিকে ভোট শেষ হয়েছে অন্যদিকে কোন প্রার্থী কতো ভোট পেয়েছেন তা জমা হয়ে গেছে মেশিনের নির্দিষ্ট পর্দায়।
লেখক: টরন্টোর বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’- এর প্রধান সম্পাদক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
সূত্র: বিডি প্রতিদিন