নতুন সমৃদ্ধির বাংলাদেশ দেখছে বিশ্ব
অর্ধশত বছর আগে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’আখ্যা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এক অভিশপ্ত তকমা দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। ভিক্ষা আর ভিখারির পরিচয় দিয়েই বিশ্ব মোড়লরা বাংলাদেশের রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাকগলিয়ে আসছিল স্বাধীনতার পর থেকে। সেই ভিখারির অভিশাপ থেকে মুক্ত বাংলাদেশ। উন্নয়নের মর্যাদায় নতুন এক বাংলাদেশের পরিচয় মিলছে। অনুন্নয়নের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের আর মূল্যায়ন হবে না। এগিয়ে যাওয়ার হাজারো গল্প শুনিয়ে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের আসনে আসীনে প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে বাংলাদেশের সৃষ্টি, তারই কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সে বাংলাদেশের নতুন পরিচয়। উন্নয়ন প্রশ্নে বাংলাদেশ এখন নিজস্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে। পদ্মাসেতু প্রশ্নে বিশ্ব ব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অন্তত সেটাই প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। রোজ এখানে কেতন ওড়ে নতুনের স্বপ্ন নিয়ে। নতুন এক বাংলাদেশের বিজয়গাথা নিয়ে মাতোয়ারা বাঙালি। বাংলার আকাশে আজ আনন্দের ফানুস। রঙ্গিন সাজে সেজেছে বাংলাদেশ।
অভাব, দৈন্যতা আর অশিক্ষা দিয়ে যে বাংলাদেশের যাত্রা, আজ সে বাংলাদেশের গ্রামের মেয়েরাও সাইকেলে চেপে স্কুলে যায়। অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত মেয়েরা অজপাড়া থেকে গার্মেন্টে এসে কাপড় বুনিয়ে বিশ্বকে সভ্য করে। বাংলাদেশের নারীরা এখন বৈমানিক। এ দেশের মানুষের ঘাম ঝরানো অর্থে পদ্মাসেতু হচ্ছে। হাজারো স্বপ্ন বাস্তবায়নের নাম এখন বাংলাদেশ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে অভিশপ্ত তকমা দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে, তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয় আর, বাংলাদেশের তলা এখন বেশ শক্ত। যেখানে দাঁড়িয়ে বিশ্বকেও চ্যালেঞ্জ করতে দ্বিধা করে না এখানকার মানুষ।
হাজারো প্রতিবন্ধকতা পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে গড় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি বাড়েনি। পরের ১০ বছর জিডিপি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ হারে। আর গত ১২ বছর ধরে দেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এখন তা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। আশা আর সম্ভাবনা জাগানিয়া নতুন পরিচয় মেলে ধরছে বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, ১৪ দলীয় জোট সরকারের প্রথম আমলে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বলেন, আজকের বাংলাদেশের যে পরিচয় তা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। নানা অসঙ্গতি থাকলেও সাধারণ মানুষ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখছেন। সরকার যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছে, তাতে আমরা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব বলে আশাবাদী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা বিশিষ্ট্ অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করেছি। এটি অবশ্যই আনন্দের কথা। কিন্ত চ্যালেঞ্জগুলো সামলে আনলে অতি উল্লাস প্রকাশ করার কিছু নেই বলে মনে করি। বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, রফতানি না বাড়া, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া, মানবসম্পদ না বাড়া, শিক্ষার মান উন্নয়ন না হওয়া, শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধি পাওয়া, দারিদ্র, আয় বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো আমাদের নিয়মিত চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে শুল্কমুক্ত সুবিধা না পাওয়া এবং ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলো নতুন করে যোগ হবে।
তিনি বলেন, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই একটি দেশের মাপকাঠি নির্ধারণ করা সম্ভব না। রাজনীতি, গণতন্ত্র, সুশাসনকেও আমলে নিতে হবে। তবে স্বল্পোন্নত দেশের মযার্দা পাওয়া বড় অর্জন বলেও মনে করি। এতে দেশের মর্যাদা বাড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এটাকে খুব ভালো খবর বলে বিবেচনা করছি। একটি পার্টিকুলার কোনো সরকারের আমলে এটা সম্ভব হয়নি। কারণ ১৯৯০ সাল থেকে এটার একটা ফ্লো তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সরকারের সময়ে একটু একটু করে এগিয়ে এটাকে গতিশীল করেছে। কিন্তু এই উন্নয়নশীল দেশের সারিতে যাত্রার ফলে যেটা হবে- আমাদের যে ইমেজ, ব্র্যান্ডিং যেটাকে বলি, এই স্বীকৃতি অনেকটা ব্র্যান্ডিংয়ের মতো কাজ করবে। আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক কিছু হয়ে গেছে, আমাদের জন্য আর কিছু করার দরকার নেই এ রকম ভাবলে ক্ষতি হবে এবং এটাকে আমি সমর্থন করি না। অনুন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এসেছি, এখন আমাদের কোনো কাজ আর করতে হবে না, উদ্যোমেরও কোনো প্রয়োজন নেই- এমনটা ভাবা কোনোভাবেই সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা ও সংকল্প, সেটা থেকে সরে আসা যাবে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, আজকের যে বাংলাদেশের রূপ, তার কাঠামো তৈরি করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করা হলে হয়ত স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীলের মর্যাদা পেত। আজকের উন্নয়নে সাধারণের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা নেতৃত্বের মডেল তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সাধারণের আস্থা বাড়ছে বলেই আজকের বাংলাদেশে। চ্যালেঞ্জ আসবেই। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব চ্যালেঞ্জ মোকবিলা করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস করি। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় আমরা কিছু সুবিধা হারাব হয়ত, কিন্তু বাংলাদেশের মযার্দা বেড়েছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই।